প্রকাশ: শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪৭ এএম আপডেট: ১৯.১২.২০২০ ১:২০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে করোনার ১৮৭তম দিন আজ শনিবার। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এই মহামারি রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই রোগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৩১৮ জন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ১ হাজার ৩১৮ জনকে নিয়ে দেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ২৯৩ রোগী। এদিকে, গত একদিনে মারা যাওয়া ২৫ জনসহ দেশে করোনায় সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২১৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও ২ হাজার ২৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৪ জন হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম করে যায়। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর এই মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান। এদিকে, বিশ^ করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৬তম স্থান এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া গোটাবিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এরমধ্যে ৭ কোটি ৫২ লাখ পেরিয়েছে। সেই সাথে মৃতের সংখ্যা ১৬ লাখ ৬৩ হাজার পেরিয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে বিভিন্ন ১১২টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ১৮টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ১০টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে সর্বমোট ১৪০টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৩৩৬টি নমুনার এসব পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ওই পরীক্ষাগারে ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৬৪টি নমুনা পলীক্ষা করা হয়। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সেই হিসেবে শনাক্ত রেটে সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ০২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুস্থতার হার ভালো দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৩টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭০৫টি। গত একদিনে যারা মারা গেছেন, পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম হয়েছে। যেখানে ২৭ জন পুরুষ আর নারী ১০ জন। এদের সবাই হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এছাড়া বিশ্বে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ কোটি ৫২ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত মানুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি। ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য মতে, গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা নাগাদ বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭ কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৮। একই সময় নাগাদ বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৬ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের জানায়, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার ৬০২। বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৭০। আর এই দেশে মারা গেছেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯২৮ জন।
আর দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। দেশটির করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৯ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪৭। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৯ জন। ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। ব্রাজিলে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭১ লাখ ১১ হাজার ৫২৭। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৬ জন। তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। ফ্রান্স পঞ্চম। তুরস্ক ষষ্ঠ। যুক্তরাজ্য সপ্তম। ইতালি অষ্টম। স্পেন নবম। আর্জেন্টিনা দশম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করে কোভিড-১৯। গত ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।