ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪৭ এএম আপডেট: ১৯.১২.২০২০ ১:২১ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
শীতের প্রকোপ বাড়ছে। সারা দেশের তুলনায় উত্তরবঙ্গে শীত জেঁকে বসেছে। উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে বেশ কষ্টে আছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এসময় উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা নামতে পারে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এতে চরম বিপাকে আছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। শীত আসলেই সাধারণ অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। শীতবস্ত্রের অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে তীব্র শীত মোকাবিলা করতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। রাজধানীতে যারা বসবাস করেন তাদের অনেকেই হয়তো অনুমান করতে পারেন না, ঢাকার বাইরে গ্রামে শীত কতটা তীব্র। বিশেষ করে বরাবরই উত্তরবঙ্গে শীতের তীব্রতা দেশে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশিই থাকে। শীতের প্রকোপে উত্তরবঙ্গের মানুষ মরার ঘটনাও রয়েছে। এবার এখনো এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে আসেনি। তবে সরকারসহ সবাই উচিত উত্তরবঙ্গের গরিব দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো। শীতবস্ত্র দিয়ে তাদের সাহায্য করা। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অবশ্য শীতবস্ত্র দিয়ে দেশের ভারি শীত প্রকোপ এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। এতে দরিদ্র মানুষের কিছুটা হলেও উপকার হয়। কারণ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যে শীতবস্ত্র বিতরণ করে তাতে সব দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ সম্ভব হয় না।
এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের শীতবস্ত্র নিয়ে জোরালভাবে এগিয়ে আসা উচিত। শীতার্ত মানুষ বেসরকারিভাবে যে শীতবস্ত্র পান তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। গতকাল গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কমছে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য। ফলে আগের তুলনায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। তবে এখনও ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি কোনও এলাকার তাপমাত্রা। গত বৃহস্পতিবার বা গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে জেঁকে বসছে শীত। বইতে পারে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে ১০ এর নিচে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানা গেছে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেছেন, দেশের একটি বড় অংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে তীব্র কিছু হবে না। শৈত্যপ্রবাহ মূলত হবে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনায়। এর বাইরের অঞ্চলগুলোতেও তাপমাত্রা কিছুটা কমবে।’ এদিকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে শীত জেঁকে বসেছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমশ কমছে। সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে পথঘাট। দুপুরে ক্ষণিকের জন্য দেখা মেলে সূর্যের। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় তাপমাত্রা কমে আসে। গত বৃহস্পতিবারও সারা দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষ ও রিকশা-ভ্যান ও অটোচালক, পাথর শ্রমিক ও চা শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ। পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত ও ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল পঞ্চগড়ের পথ-ঘাট। কুয়াশার পাশাপাশি হিম বাতাসে সবকিছু ছিল জরোজোরো অবস্থায়। রাস্তায় বের হলেই কুয়াশায় গা ভিজিয়ে দেয়। আর সন্ধ্যা থেকে কুয়াশার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় দরিদ্র-অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অনেকে শহরের মোড়ে মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে চেষ্টা করছে উষ্ণ হওয়ার।’ শীতে ছিন্নমূল মানুষের কষ্টের শেষ নেই। ছিন্নমূল মানুষের নেই ভালো শীতবস্ত্র।
অনেকের থাকার ভালো সুব্যবস্থা নেই। তারা শীতবস্ত্র জোগাড়ও করতে পারেন না। কোনোভাবে পুরানো-ছালা-কম্বল জড়িয়ে রাত কাটাতে হয়। এতে শীত ঠেকিয়ে রাখাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ জন্য সমাজের বিত্তশালীদেরকে শীতার্ত মানুষের পাশে বেশি বেশি শীতবস্ত্র নিয়ে দাঁড়ানো দরকার। সরকার শীতার্ত মানুষের পাশে বিশেষ করে দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগের কথা এখনো জানা যায়নি। সরকার হয়তো সাহায্যে হাত নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে। আমরা চাইবো, এ ব্যাপারে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। দেশে এখন বিত্তশালী এবং ধনী মানুষের অভাব নেই, স্থানীযভাবে ধনাঢ্য ব্যক্তি অনেক। মোট কথা যার যেমন সাধ্য সে অনুযায়ী যদি শীতার্ত ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, তাহলে এই মানুষগুলো শীতের কষ্ট থেকে বেঁচে যাবে।