প্রকাশ: শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪৭ এএম আপডেট: ১৯.১২.২০২০ ১:২২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বিচারপ্রার্থীদের আদালতের বারান্দায় যেন ঘুরতে না হয় সেদিকে নজর দিতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভিডিও বার্তায় বিচারপতিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। নিজের আইন পেশার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি নিজে একজন আইনজীবী হিসেবে জানি বিচার কাজ কত কঠিন ও জটিল। বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় একজন বিচারককে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু তারপরও আমি বলব, মামলার পরিমাণ দিন দিন যে হারে বাড়ছে, সেটাকে আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে বিচারকদের আরো বেশি কাজ করতে হবে।সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং বিচারকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে, মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করতে না হয়।’ ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। সেদিন সরকারি ছুটি ছিল বলে আদালতের প্রথম কার্যক্রম বসে ১৮ ডিসেম্বর। ২০১৭ সালে প্রতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে গতকাল শুক্রবার সেই অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের সকল কার্যক্রম ডিজিটালি সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আদালত প্রাঙ্গণে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য আমি এ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে অনলাইন কজলিস্ট চালু হয়েছে এবং অনলাইন বেল কনফার্মেশন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চলছে। আমি একইভাবে আদালতের সব কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু ‘কোর্ট অব রেকর্ড’ সেহেতু এর সকল নথি এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সব কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।’
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। তাই মনে রাখতে হবে, একজন বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার পাওয়া তার অধিকার। আর নাগরিকের সে অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে দয়া বা অনুকূল্যের কোনো বিষয় নেই। দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সকলে তাদের মেধা ও মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন, সুপ্রিম কোর্ট দিবসে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।’
আবদুল হামিদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম হল শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ তৈরি করা। উন্নয়নের সাথে ন্যায়বিচার এবং আইন-আদালতের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বিরোধের মীমাংসা যথাযথভাবে না হলে আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। আর এই প্রক্রিয়া বারবার চলতে থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।’ বিচার ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করে জনগণের ক্ষোভ প্রশমন করে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘এতে সমাজে বৈষম্য দূরীভূত হয় এবং রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। আর এভাবেই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিচাপরপতি এম ইনায়েতুর রহিম। প্রধান বিচারপিত সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এ অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে’ স্মারক গ্রন্থের ডিজিটাল সংস্করণ উন্মোচন করা হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।