প্রকাশ: শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:০০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আজ ১৯শে ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের ১৬ই ডিসেম্বর সারাদেশের বিজয় ঘোষিত হলেও বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ পাক-হানাদার মুক্ত হয়েছে আজ থেকে ৪৯ বছর আগে এই দিনটিতে।
বাংলাদেশের সর্বশেষ স্বাধীন হওয়া থানা গুলোর মধ্যে অন্যতম মেহেন্দিগঞ্জ। এই এলাকার বীর যোদ্ধাদের স্বাধীনতার সাদ গ্রহণে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরো তিন দিন। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সমগ্র মেহেন্দিগঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাক-বাহিনী, তাদের দোষর, দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল-শামস ও স্বাধীনতা বিরোধীদের চারদিক থেকে ঘিরে থানায় তিনদিন যাবৎ আটকে রাখা হয়। তৎকালীন থানার ২য় অফিসার পাক-বাহিনীর দোষর এই শক্তঅবস্থান ধরে রাখেন। ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে অত্র এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীর ক্যাম্প মুসলিম হাইস্কুল, থানা জামে মসজিদ ও থানা ক্যাম্পসহ ঘাটি গুলো ঘেরাও করে এলোপাথাড়ি বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে পাক-বাহিনীর দোষর থানার সেকেন্ড অফিসার একদিনের শিশু সন্তান সহ তার স্ত্রীকে পাঠান আত্মসমার্পনের অনুরোধ নিয়ে। তখন তার স্ত্রীকে বন্দুক তাক করে ফেরত যেতে বাধ্য করেন। এক পর্যায়ে অকুতোভয় মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা থানা ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে।
অবশেষে থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মেহেন্দিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, থানার মূল ভবনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে খাল, পূর্ব উত্তরে মসজিদ ও স্কুল থাকায় এই প্রতিষ্ঠান গুলো রক্ষার জন্য এই বিলম্ব হয়। ১৯ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জে প্রায় ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা, ৮৬ জন রাজাকার ও ২০ জন পুলিশ সদস্যদের সাথে দীর্ঘক্ষন যুদ্ধ করে এই বিজয় অর্জন করেণ। একদিকে বিজয়ের আনন্দ অপরদিকে প্রতিশোধের নেশায় থানায় আটককৃতদের মধ্যে থেকে ২৪জন রাজাকারকে উত্তেজিত জনতা ঘটনাস্থলেই পিটিয়ে হত্যা করে।
এর মধ্যে পাক বাহিনীর দোষর থানার সেকেন্ড অফিসারও ছিলেন। এই গুরুত্বপূর্ন অভিযানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদিক্কুর রহমান খোকন, বাতেন, আঃ মকিম তালুকদার, সরদার আনিছুর রহামান, আঃ হামিদ, মজিবুর রহমান সানু, আঃ খালেক জমাদ্দার, আঃ রব,হিজলা উপজেলার গুয়াবড়ি ইউনিয়নের অদুত মিয়া, সহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা। যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ বিজয় অর্জিত হয়েছে সেই সব শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর গুলো পরে আছে অযতœ আর অবহেলায়। সরকারী এবং দলীয় ভাবে নানা কর্মসূচী পালিত হলেও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে কেউ আসেনি একটু ফাতেহা পাঠের জন্য, এ অভিযোগ শহীদ পরিবার গুলোর।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর গুলো সরকারের পক্ষথেকে সংরক্ষন করা এবং সমগ্র মেহেন্দিগঞ্জে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের নাম সম্বলিত স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তুলতে মেহেন্দিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানান, এলাকার সুধী সমাজ।