মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও জাতীয় সংগীতের সমালোচনা করে একি বললেন জৈনপুরী পীর আব্বাসী!
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে নারায়ণগঞ্জের এক মাহফিলে জৈনপুরী দরবারের পীর ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেছেন, কোন দেশ বা দলের সাহায্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হিন্দুদের কোন ভূমিকা নেই। মহাত্মা গান্ধীর কোন ভূমিকা নেই। আলেমরাই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছেন।
বামপন্থী দলগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্রু উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, বাংলাদেশে জাসদ, বাসদ বলে বামপন্থী দল রয়েছে। এদের একটাই কাজ দাড়ি টুপিকে কটাক্ষ করা। আলেমদের বিরোধিতাকে এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে করে। মসজিদ-মাদ্রাসার আলেমদের বিরোধিতাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে করা। আমি বলবো এই বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্রু। এরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি নয়। আলেমরাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি।
হাজার হাজার আলেমের রক্তের বিনিময়ে ব্রিটিশ বেনিয়া উপমহাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই দেশে যত বেশি মাদ্রাসা, মসজিদ, মাহফিল হবে ততো বেশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সমন্বিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘কোন গোষ্ঠী, দল বা দেশের সাহায্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। তা হয়েছে একান্তই আল্লাহর দয়ায়। ৮৮ হাজার শস্ত্র প্রশিক্ষিত পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেকটাই নিরস্ত্র, কম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি অরাষ্ট্রীয় অরাজনৈতিক দলের কাছে পরাজিত হয়েছে।
বাংলাদেশে বিজয় দিবস পালনের অনুষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেন জৈনপুরী দরবারের এই পীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিজয় দিবসে খেলাধুলা হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, কনসার্ট হয়, এর কোনো একটাও আল্লাহ প্রদত্ত স্বীকৃত পদ্ধতি নয়, বরং তা ইসলামের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। এগুলো শরীয়ত বিরোধী পদ্ধতি।
বুদ্ধিজীবীদের চেহারা নিয়ে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক বুদ্ধিজীবী আছে। তাদের দেখতে সুরত ভালো নয়। মাথায় টাক। সাইডে একটু চুল আছে। জঙ্গলের লতাপাতার মতো ও পাটের মতো সাদা। বার্ধক্যের কারণে কথাও বলতে পারে না। তারা প্রায়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে চিৎকার করে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাখ্যায় দিতে গিয়ে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি? এক কথায় বলবো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা ইসলাম ও মুসলমান। ১৯৪৭ সালে যদি ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান না হতো, তাহলে ৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ অস্তিত্ব লাভ করতে পারতো না। ৪৭ সালে কিভাবে ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান বাংলাদেশ ভারত মুক্ত হলো, সে ইতিহাস বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হতে পারে না। স্বাধীন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছে ১৭৫৭ সালে সিরাজউদ্দৌলা থেকে ব্রিটিশ বেনিয়ারা স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে নিয়েছিলো। তারপরে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন করে উপমহাদেশকে ব্রিটিশ মুক্ত করে স্বাধীন রাষ্ট্র বানাবার জন্যে প্রথম রক্ত দিয়েছে কারা? শুধু মুসলমান নয় আলেম সমাজ।
হাজার হাজার আলেমের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭৪ সালে ব্রিটিশ বেনিয়া উপমহাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হিন্দুরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি বলে জানান এই জৈনপুরী দরবারের এই পীর। তার মতে, হিন্দুরা আন্দোলন করে নাই। বরং আলেমদের থেকে শাসন ইংরেজদের হাতে চলে যাওয়াতে হিন্দুরা এটাকে আশীর্বাদ মনে করেছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা তাদের কবিতায় ইংরেজদেরকে দেবতা বলেছে। ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ বলেছে। সেই ইংরেজদের দালালির ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও পিছিয়ে ছিলো না। একমাত্র স্বাধীনতার পক্ষে বিদ্রোহ করেছিলেন নজরুল ইসলাম।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সমালোচনা করেন তিনি। এই জাতীয় সংগীত থাকুক তিনি তা চান না। বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করলে জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ নয় নজরুলেরটাই হওয়া উচিৎ। রবীন্দ্রনাথ তার কবিতায় আলেমসমাজকে কটাক্ষ করেছে, অস্পৃশ্য বলেছে। সে চরম মৌলবাদী হিন্দু কবির কবিতা জাতীয় সংগীত হয়েছে এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী হয়েছে।