বর্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজ, জনগণ গভীর এক প্রশ্ন তথা সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা কি,সাম্প্রদায়িকতা বলতে আমরা কি বুঝি? এই দুই প্রশ্নের এর দোলাচলে হয়ত আপাতদৃষ্টিতে নিত্যকার যাপিত জীবনধারণে কোন অসুবিধা না হলেও জাতির মগজে মননে ও জীবনে সুকৌশলে উগ্রবাদী ,প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার উন্মেষ ঘটছে। এই “সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটিকে কেন্দ্র করে ধর্মজীবীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে নানান অপব্যাখ্যা দিয়ে জাতীয় জীবনে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঘটানোর পায়তারা বিশেষ। সম্প্রতিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা এক অশনি সঙ্কেতের প্রকাশ সেইসাথে প্রত্যক্ষ করা যায় এটি শুধু কোন ধর্মীয় বিতর্ক এবং রীতিনীতিকেই উস্কে দেওয়া নয় বরং এখানে এক নিগুঢ় ষড়যন্ত্র সুস্পষ্ট। এই আঘাত,এই ধৃষ্টতা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার উপর সরাসরি আক্রমণ। সুতরাং এর গভীরে যেতে হলে উপরিউক্ত প্রশ্ন দুটি নিয়ে শুরু করা যাক। সাম্প্রদায়িকতা বলতে কি বুঝায়? এবং সাম্প্রদায়িকতা বলতে আমরা কি বুঝি?
সাম্প্রদায়িকতা একটি মনোবৃত্তি। যে মনোবৃত্তি থেকে সৃষ্টি হয় এবং অবশ্যই বিকাশ ঘটে মানুষের ব্যক্তি ও সামাজিক পরিসরের একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতি। কালের বিবর্তনে যে সংস্কৃতিই হয়ে ওঠে গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য। যাকে আমরা বলে থাকি ধর্ম। গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, আচার বিচার, সংস্কার ও বিশ্বাস। যার আজন্ম লালিত মূল্যবোধে মানুষের চিন্তা শক্তি ও মননশীলতা ও আবেগ তাড়িত হয়। একটু বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে বিষয়টি আদৌ একমুখী নয়। বিষয়টি মানুষের মজ্জাগত মানসিকতার। বংশগত ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার-জাত পারিবারিক ঘেরাটোপ থেকে গোষ্ঠীবদ্ধ সামাজিক পরিসরে আমাদের মানসিকতা অবিরাম পুষ্ট হতে থাকে। এই যে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা যাকে আমরা আমাদের ধর্মীয় আচার বিচার হিসাবে জেনে থাকি সেটির দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে খেয়াল করলে দেখা যায় এই ধর্মীয় আচার বিচার বিশ্বাস ও ভক্তির পারিবারিক ও গোষ্ঠীগত সংস্কৃতিই আমাদের সাম্প্রদায়িকতা। যা থাকে আমাদের সচেতন চিন্তা ও জ্ঞানের আড়ালে। সাম্প্রদায়িক মানসিকতা মাত্রই দাঙ্গা হাঙ্গামা বা বিবাদের সাথে যুক্ত তা একেবারেই সঠিক নয়। মানুষ হানাহানিতে বিশ্বাসী না হয়েও নিজ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের কাছে, নিজের নিজের বিশ্বাসে অটল থাকতে পারে। কারণ প্রত্যেকের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ প্রত্যেকের নিজ নিজ আশ্রয়। তাই সাম্প্রদায়িকতার অর্থ মোটা দাগে চিহ্নিত করা আরেক মানসিক দৈন্যতা ও অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। তাই সাম্প্রদায়িকতা মানেই সাম্প্রদায়িক হানাহানি নয়। কিন্তু যখন রাজনৈতিক অপশক্তিগুলো সাম্প্রদায়িক শব্দের ভিন্ন অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে নিজ স্বার্থ উদ্ধারে হানাহানির সৃষ্টি করে তখনই মূলত সাম্প্রদায়িকতা একটি নেতিবাচক বিষয়ে পর্যবসিত হয়। সৃষ্টি হয় অন্ধকার জগতের দুর্বৃত্তায়ন এবং উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা। ধর্মের মোড়কে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করে মুখরোচক লেবেঞ্চুসে আর সাধারণ মানুষ সঠিক না বুঝে তার সাম্প্রদায়িক মানসিকতায় কোন না কোন একটি পক্ষ নিয়ে ফেলে। আর রাজনৈতিক শক্তিগুলি সেই পক্ষ নেওয়া জনসমর্থনকেই কাজে লাগায় তাদের দুরভিসন্ধিমূলক স্বার্থ উদ্ধারে। সেটাই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মূলস্তভ। সেইসাথে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা রাজনৈতিক অপশক্তির মূল হাতিয়ার হয়ে উঠে।
বর্তমানে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি মানুষের আজন্ম লালিত বিশ্বাস, সংস্কার ও ধর্মীয় চেতনাকে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দ্বারা প্রভাবিত করে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জঘন্য পায়তারার নাম সাম্প্রদায়িকতা তথা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। স্বাতন্ত্র্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্নতার নাম সাম্প্রদায়িকতা। ধর্ম ও শিল্পের পার্থক্য না বুঝবার অজ্ঞতার নাম সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতা শব্দটি একটি নেতিবাচক অভিধার জন্ম দেয় যেখানে নিজের সম্প্রদায়কে শ্রেষ্ঠ ভাবার একটি বিষয় রয়েছে। যার প্রথমে রয়েছে, আমি যে সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত তার সবকিছু শ্রেষ্ঠ বাকি অন্যদের চিন্তা ভাবনা সব ছোট বা মূল্যায়ন-যোগ্য নয়। এবার দ্বিতীয় অংশটি হল এই চিন্তার উপর নির্ভর করে সমস্ত কার্যকলাপ পরিচালিত করা এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া। এই অহমধর্মী চিন্তা মানুষের স্বতন্ত্রতা তথা স্বাধীনতাকে স্বীকার করেনা বরং মানুষের সাথে মানুষের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে যার সুযোগে সাম্প্রদায়িক হানাহানির এক বিশাল প্রেক্ষাপট রচিত হয় বা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সাম্প্রদায়িকতার এহেন এই বিকৃত রূপের সাথে খুব সূক্ষ্মভাবে জড়ানো হয়েছে ধর্মকে। ফলস্বরূপ উত্থান ঘটেছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির। এই উপমহাদেশে ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতির জন্ম ব্রিটিশদের ডিভাইন এন্ড রুল নীতির হাত ধরে। কৃষক ও জমিদার, জোতদারদের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য, জাতিগত বিদ্বেষ, মধ্যবিত্তের উত্থান,বুর্জোয়াদের আর্বিভাব,হিন্দু -মুসলমান সম্প্রদায়ের পারস্পারিক বিচ্ছিন্নতা,ধর্মীয় জাত্যাভিমান,তীব্র জাতীয়তাবাদের উত্থান,ভিন্ন রাজনৈতিক মেরুকরণ এই উপমহাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির জন্ম দেয়। যার ফলস্বরূপ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যার একটি হল পাকিস্তান। শুরু থেকেই যা মেরুদণ্ডহীন। ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে তোলা রাষ্ট্র পাকিস্তানকে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিল এদেশের মানুষ। পাকিস্তান জন্মের বছর না পূরণ হতে পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে মিথ্যা স্বাধীনতার নামে ধর্মের জিকির তুলে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ শোষণ-শাসন আর নিপীড়ন। একে একে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং তাদের অধিকার। বাঙালির বুঝতে আর বাকি থাকেনা শাসনের নামে শোষকদের ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা বাঙালির আত্মপরিচয় নির্মাণের ধারাবাহিক সেই সংগ্রামের মূল উপজীব্য তার হাজার বছরের লালিত মানবমনস্ক সমাজ চেতনা ও মূল্যবোধ। আর তারচেয়েও বড় কথা বাঙালির মনে যিনি এই বোধের জন্ম দিতে পেরেছিলেন যাঁর নেতৃত্বে বাঙালি পেয়েছে এক স্বাধীন ভূখণ্ড বাংলার সেই সফল নায়ক, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করার শাসন শোষণের নীতির ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে, অন্যায়,অধীনতা ও জুলুমের নাগপাশ থেকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু এনে দিলেন মুক্তিকামী বাঙালির লাল-সবুজের সোনার বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু বললেন:
“বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে। খ্রিস্টান তার ধর্ম পালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আলবদর পয়দা করা বাংলার বুকে আর চলবে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।”
[১৯৭২ সালের ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণ]
অত্যন্ত সুস্পষ্ট চিন্তা এবং সুস্পষ্ট দিগদর্শন।
আবার ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বললেন:
“সকলে জেনে রাখুন, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি কোনও বিশেষ ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।”
[১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর রেসকোর্সে দেওয়া ভাষণ]
সেইসাথে বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস ছিল আবহমান বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের নানান ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-সংস্কৃতি-ভিত্তিক জীবনাচরণ ও তাদের নিজস্ব বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি। তাই গভীর বিশ্বাস-বোধ থেকে তিনি নিজেই বলেছিলেন:
“রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। যদি কেউ ব্যবহার করে তাহলে বাংলার মানুষ তাকে প্রত্যাঘাত করবে। এ বিশ্বাস আমি করি।”
[১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদে দেওয়া ভাষণ]
কিন্তু হায়,
পঁচাত্তরের কালরাত্রি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অন্ধকার নিয়ে আসে। মুহূর্তেই ‘বাঙালি’ হয়ে যায় ‘বাংলাদেশি’। বাঙালির সমাধানকৃত আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে সাধারণ মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করা হল। পেরেক ঠুকে দেওয়া হল বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার মুক্তচিন্তার রাষ্ট্রদর্শনে। বাংলাদেশ ক্রমশ পিছতে থাকে। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারে রুদ্ধ হয় প্রগতিশীল চিন্তার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার ।এক ভয়াবহ দুরভিসন্ধি নিয়ে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের শুরু হয় হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি মুসলমানকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ করার জঘন্য প্রয়াস।
দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ভট এক উটের পিঠে সওয়ার হয়ে, অন্ধ ও অজ্ঞতার ঘেরাটোপে বাংলাদেশ শাসিত হওয়ার পর বর্তমানে সুবাতাসের ছোঁয়া। যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার ও জাতির পিতা হত্যাকারীদের বিচার বাংলার কিছুটা কলঙ্ক মোচন ও জাতিগত ভাবে লজ্জা থেকে দায়মুক্তি ঘটায়। তবে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট সেই ধর্মান্ধ, প্রগতি-বিরুদ্ধবাদীদের দৌরাত্ম্য এখনো থামেনি। তারা নানান ভাবে নানান বেশে বাংলাদেশকে আবারও পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার সাংঘাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময়ের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দুষ্টচক্রে বাঙালির স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ স্পষ্টতই এখন দুইটি ভাগে বিভক্ত। এক, আবহমান বাংলার নানান ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির পারস্পারিক সহাবস্থানে পরমতসহিষ্ণুতায়, সম্মান ও বিশ্বাস-বোধে ঋদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত মানুষ।
আরেকটি হচ্ছে,
ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের ফায়দা লোটায় পরিপক্ব প্রগতিবিরুদ্ধ ছদ্মবেশী রাজনৈতিক গোষ্ঠী। যাদের উন্মত্ত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তথা ষড়যন্ত্রের বারংবার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ।যাদের প্রতিক্রিয়াশীল উগ্র উন্মাদনা আজও ধৃষ্টতা দেখায় জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার মতো এক অমার্জনীয় অপরাধের। এ শুধু অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতাই নয়, নয় শুধু অপরাধ নয় শুধু মোটাদাগে রাজনৈতিক এজেন্ডা, জাতীয় জীবনে এ এক অশনি সংকেতও বটে। এই অপশক্তিকে রুখতে এখনই সময় গর্জে উঠবার।
প্রগতিবিরুদ্ধ, প্রতিহিংসাপরায়ণ, প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মজীবীদের স্থান বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নয়। বার বার ফিরে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুর কাছে তিনিই বলেছিলেন বাংলার মানুষ ধর্ম ব্যবসায়ীদের গ্রহণ করবে না। গত নির্বাচন গুলোর বিশ্লেষণ থেকে একটি হিসাব খুব স্পষ্ট যে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জন সমর্থনের পরিমাণ অত্যন্ত কম; নির্বাচনী হিসাবে সব ধর্মভিত্তিক দল মিলে গড়ে ৮ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ এখনো তাদের ‘রাজনৈতিক আদর্শ’ হিসেবে ধর্মকে বিবেচনা করে না। সাধারণ মানুষের কাছে সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাজনীতিতে তারা ধর্মের ব্যবহার দেখতে চায় না। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব জাতীয় জীবনে স্বীকার করে না।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে– এ বিষয়ে বাঙালির দিশারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। তাই সময় এখন প্রগতিমনস্ক মানুষদের কণ্ঠ তুলবার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খুব বেশি করে মনে পড়ে যায় মিখাইল বুলগাভের উপন্যাস "মাস্টার এন্ড মার্গারিটার" বিখ্যাত উক্তি ”পাণ্ডুলিপি কখনো পোড়েনা "
মুক্তচিন্তকদের কোনদিন ক্ষয় নেই। বঙ্গবন্ধুর মতো মুক্তচিন্তকের লয় নেই, তিনি অনিঃশেষ, তিনি অনিবার্য। তার দেওয়া স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংবিধান এবং সোনার বাংলাদেশ অক্ষুণ্ণ থাকবে চিরকাল।
লেখক: শিক্ষক, ইউনির্ভারসিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যাণ্ড সায়েন্স।