প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:১২ এএম আপডেট: ১৮.১২.২০২০ ৫:১৬ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ বিষয় নিয়ে আবারও বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে ভারত সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ আশ্বাস দেন। শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায় এ বিষয়ে বলা হয়, ২০১১ সালে দু’পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে তিস্তার পানি বণ্টনে দ্রুত সময়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্ষেত্রে ভারত সরকারের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি এবং অব্যাহত প্রচেষ্টার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তিস্তা চুক্তি না হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার বিষয় উঠে মমতা বড় কারণ। তিস্তা সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এটা নিয়ে ভারত সরকার আগেই রাজি হয়ে গিয়েছে। সব কিছুই প্রস্তুত, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এটা আমরা আবার তুলেছি। বলেছি, আমরা এটা তুলে আপনাদের লজ্জিত করতে চাই না, তবে এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একই সাথে আমরা বাকি আরও ছয়টা নদীর কথা জিজ্ঞেস করেছি। তিস্তা নিয়ে বলেছেন যে, তারা প্রত্যেক পক্ষকে সম্পৃক্ত করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রী তিস্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দিক থেকে এ ইস্যু সমাধানের উপর গুরুত্ব দেন। এবং আমাদের দিক থেকে প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই চুক্তির বিষয়ে আমরাও সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি। দুই প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাদের বোঝাপড়া তুলে ধরেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধান অনুসারে সব পক্ষকে একসঙ্গে নিতে হয় আমাদের।’ তিস্তার বাইরে আরও ছয় নদীর পানি বণ্টন নিয়েও দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার টেবিলে।
এ সম্পর্কে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ‘অভিন্ন ছয় নদীর অর্থাৎ মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতি, ধরলা এবং দুধকুমার নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির বিষয়ে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি চূড়ান্ত করার বিষয় তুলে ধরেছেন দুই নেতা।’ মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১১ মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪২ বাংলাদেশির। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমলেও সেটি তিন গুণ বাড়ে ২০১৯ সালে। সংস্থাটির আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মোমেন বলেন, ‘এগুলো কি আপনাকে হতাশ করে? আমরা বাংলাদেশি লোক আমাদেরও হতাশ করে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এগুলো আলোচনার মাধ্যমে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি, গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী আবার অঙ্গীকার করেছেন, প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ওখানে ব্যবহার হবে। সীমান্ত হত্যার আলোচনা সম্পর্কে হাইকমিশনার দোরাইস্বামী বলেন, ‘সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে ভারত ও বাংলাদেশের উভয়েরই একটি অভিন্ন দায়িত্ব বলে জোর দিয়ে উভয় নেতা আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের জন্য সমন্বিত ও যৌথ টহলের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ভারত আশ্বাস দিয়েছে যে, বিএসএফ সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করবে এবং সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অস্ত্রকে আত্মরক্ষার্থে শেষ সম্বল হিসেবে ব্যবহার করার মাধ্যমে কঠোর প্রটোকল অনুসরণ করবে।’