ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:১২ এএম আপডেট: ১৮.১২.২০২০ ৫:১৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ উচ্চতায়। দিন যত যাচ্ছে এ সম্পর্ক আরো উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি অনেক মজবুত। একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের মধ্যে দিয়ে এই সম্পর্ক মজবুত হতে শুরু করে; আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। যখন আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন ভারত সরকার তাদের সেনা শক্তি দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছিল। যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক হয়ে জল্লাদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর আলশামসকে পুরোপুরি পর্যদস্তু করে তোলে। ফলে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রগাঢ় সম্পকের্র ভিত্তি রচিত হয়। জাতির পিতার হত্যাকা-ের পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা জেঁকে বসে। তারা ক্ষমতায় বসে জাতির পিতার নাম-নিশানা মুছে ফেলার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর সব আয়োজন করতে থাকে। অবশেষে স্বাধীন বাঙালি জাতির মুক্তি ঘটে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর। তখন আবার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন গতি পেয়ে তুঙ্গে ওঠে। যা এখনও অব্যাহত।
ভারতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ককে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত ঘাতকরা কখনো ভালো চোখে দেখেনি; বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর এই অপশক্তির সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে বিএনপি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, ভারতের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে যা মদদ দিয়েছে। আর সে সময়টাতে একাত্তরের ঘাতক জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ভাগাভাগি করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়েছিল। ঘাতক জামায়াত কট্টর পাকিস্তানপন্থি। পাকিস্তানের কতটা কাছের দোসর তা কারোর অজানা নয়। এই ঘাতকের দল এখনো যে বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর বাসনা ত্যাগ করেছে, এমন নয় বরং এই বাসনাকে আরো আকড়ে ধরে আছে। যদিও তা কখনোই বাস্তবায়িত হবে না। বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা এবং ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করার এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির ব্যাপারে সদ্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ভারত একটি উদার গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ভারতের নিকট থেকে আমাদের বহু কিছু অর্জন ও শেখার রয়েছে। বর্তমানে ভারত বিশ্ব অর্থনীতি ও সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। দেশটি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার শ্রেষ্ঠ সহযোগী বন্ধু রাষ্ট্র। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীনতা অর্জনে ভারত সর্বোশক্তি দিয়ে সমর্থন এবং সহযোগিতা করেছে। আবার দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে দেশের পুনর্গঠনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে বলিষ্ঠভাবে রয়েছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের মোক্ষম স্থানে পৌঁছানোর ব্যাপারে বাংলাদেশকে যাবতীয় সহযোগিতা করে যাচ্ছে দেশটি। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করার যে প্রত্যয় ও আকাক্সক্ষা রয়েছে, তা ক্রমশ:সাফল্যের দিকে অগ্রসরমান।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে যা দৃঢ়ভাবেই বলা যায়। উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেই দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। যে বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তা হলো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সিইও ফোরাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হাইড্রোকার্বন বিষয়ে সহযোগিতা, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হাতি সংরক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘর ও ভারতের জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও বরিশালের স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি। সমাঝোতা চুক্তি নিয়ে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন, তা, যেন জ্বলজ্যান্ত সত্যকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরও দৃঢ় হবে। দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক।’ পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ভারতের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিশেষে বলা প্রয়োজন, বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানেই বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আদৃত, অনুকরণীয়। এমনকি পরাজিত শত্রু বর্বর পাকিস্তানও বাংলাদেশের সুশাসন ও দৃঢ় গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেখে বিস্মিত, হতবাক। এখন তারা নিজেদের উন্নতির লক্ষ্যে বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে ভারত পাশে রয়েছে। আমাদের অগ্রযাত্রাকে আরো গতিশীল করে তুলতে অবিরাম সহযোগিতা করে যাবে, এটা আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি।