বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রের অন্যান্য পক্ষ।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক।
দেশ থেকে অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দফতরের ড্রাইভার কিংবা পিয়নের মতো কর্মচারীরাও। বাদ যাননি রাজনৈতিক নেতা, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা অন্যান্য কর্তা ব্যক্তিরা।
আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থপাচারের অপরাধের ৪৭টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুদক। এছাড়াও ৮৮টি মামলা তদন্ত করছে বলেও দুদক জানিয়েছে।
৮৮ মামলার মধ্যে ৪১ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কর্ণধার খাজা সোলায়মান ও তার স্ত্রী জনতা ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম ও অন্যরা সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ জনতা ব্যাংক থেকে ৯৯৫ কোটি টাকা, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, ঢাকা ট্রেডিংয়ের কর্ণধার টিপু সুলতান বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ৩৫০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বহিষ্কৃত কর্মচারী আবজাল ৩০০ কোটি টাকা, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ১০ হাজার ২শ কোটি টাকা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান ও তার ছেলে ৩২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, এনটেক্সে কর্ণধার ইউনস বাদল সাড়ে ৫ হাজার কোটি, এমএম ভেজিটেবলের চেয়ারম্যান জহির উদ্দীন ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক সাবেক ১৬১ কোটি টাকা, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাবুল চিশতি কয়েকশ কোটি, ভোলার এমপি হাফিজ ইব্রাহিম সিঙ্গাপুরে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুল ও সেলিনা ১৪৮ কোটি টাকা, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা, সেলিম প্রধান থাইল্যান্ডের সাত কোম্পানিতে বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে চার ব্যাংকে ২০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন ও পাচার করার অর্থ ৬১ কোটি টাকা, যুবলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ৫০ কোটি টাকা, ঠিকাদার জিকে শামিম ১৮০ ব্যাংকে ৩৩৭ কোটি টাকা, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া মালয়েশিয়ায় মাই ব্যাংক ও আরএইচবি ব্যাংকে ২২ লাখ ৭৫ হাজার রিঙ্গিত দুটি এফডিআর এ ৩ লাখ রিঙ্গিত।
সিঙ্গাপুরে তার রয়েছে ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিপণ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে ৫ লাখ ৫ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। এছাড়া শাহরিস কম্পোজিট টেক্সটাইলের এমডি খাজা সোলেমান আনোয়ার, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আলম, এনসিসি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, তার স্ত্রী শিল্পী আক্তার, পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ কবীর, আমানত স্টিলের এমডি হারুনুর রশীদ, ডিএমপির হুমায়ুন কবীর বাতেন, সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম, সাবেক সহকারী সচিব শাহরিয়ার মতিন, ইলিয়াস ব্রাদার্সের এমডি শামসুল আলম, ইটিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সাবেক এমডি আশরাফুল আলম, সাবেক কর্মকর্তা ফজলুর রহমান সিকদার, টেলিটকের সাবেক ম্যানেজার শাহ মোহাম্মদ যোবায়ের, প্যারাডক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের সাবেক এমডি রকিবুল হাসান রাজন, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, লর্ড ভিশনের চেয়ারম্যান হোসাইন মাহমুদ রাসেল, এএমসি টেক্সটাইলের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁদ মিয়া, তার স্ত্রী রাশেদা খাতুন, আইন কমিশনের ড্রাইভার শামসুল আলম এবং এমদাদ হোসেন।