#বিজয়ের মাসেই ষড়যন্ত্রকারীদের মূল উৎপাটন করতে হবে: সাবিনা আক্তার তুহিন।
#এই বিজয় আসলে শেখ হাসিনার উন্নয়নের বহিঃপ্রকাশ: অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া।
#১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে এসে আমরা বিজয়ী হয়: উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার।
#বাংলাদেশের জিডিপি ইউরোপের দেশ গুলো থেকেও ভালো অবস্থানে আছে: নজরুল ইসলাম খালেদ।
আমরা আজ ৪৯ বছর পেরিয়ে ৫০ বছরে পা দিয়েছি। গত ৪৯টি বছর কখনও আমরা পিছিয়েছি একটুখানি, কখনও বা এগিয়েছি তার চেয়ে দ্রুতগতিতে। চূড়ান্ত সময়ে আজ আমরা দেখছি দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। বিশেষত গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের মহাকাব্যের অপর নাম শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যেসব উন্নয়ন হয়েছে এবং অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান আছে তাতে বিশ্ব আজ অবাক বিস্ময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসায় মুখরিত আছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৯১তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (নীলদল) এর সভাপতি, লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, জার্মানি আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জার্মানি এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, জার্মানি আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম খালেদ। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেদিন থেকেই মূলত আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই আমরা এই লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি। সেই বঙ্গবন্ধুকে এই কুচক্রীর দলরা সেসময়ও মেনে নিতে পারেনি আজও মেনে নিতে পারছেনা। বিজয়ের মাস আসলে একটি উগ্রবাদীর দল একটি কুচক্রীর দল হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তাদের মূল উদ্দেশ্য আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করা আমাদের স্বাধীনতাকে আবারও পরাধীনতার শিকলে বন্ধী করা। তারা আমাদের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, তারা পরাজিত শক্তির দোসর, তারা পরাজিত শক্তির বন্ধু হয়ে এখনো এই বাঙলার মাটিতে বিচরণ করছে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সব সময় করে আসছে। আপনারা দেখেন, যুগ যুগ ধরে এই দেশে ভাস্কর্য আছে, এখানে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য। তারা কিন্তু সেখানে কিছু করছে না। আসলে এখানে ধর্মের নামে রাজনীতি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বর্তমানে জামায়াতে ইসলাম নামে যে রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে, ’৭২-এর সংবিধানে আইন করে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এসে বিভিন্ন দলকে রাজনীতি করার নামে আসলে জামায়াতকেই ফের প্রতিষ্ঠিত করে। জামায়াতের আমির নাগরিকত্বহীন গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এমন একটি অবস্থা নিশ্চিত করা হয়, যা কোনোভাবেই আমাদের স্বাধীনতার মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যারা ইসলামকে বিশ্বাস করে, প্রকৃত মুসলিম তারা কোন দিনই ধর্মের নামে এই ভাঙচুর, অসহনীয়ও আন্দোলন, হুমকির রাজনীতি, ধ্বংসের রাজনীতি করে না। এতো কিছুর পরও কিন্তু বাংলাদেশ থেমে নেই কারণ একটাই। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি লিডারশীপের কারণে। আজকে বিশ্বের অনেক জায়গায় তাকে নিয়ে গবেষণা করা হয়, কারণ এতো অল্প সময়ে, এতো দ্রুত উন্নয়ন বিশ্বের অন্য কোন নেতা দেখাতে পারেনি আগে। একটি দেশকে কিভাবে উন্নয়নের লক্ষে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তার জন্য দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের নেত্রী। আজকে দেখেন আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বিশ্ব ব্যাংক যে গ্রোথ আশা করে তার থেকে কিন্তু আমরা প্রতিবারই এগিয়ে থাকি। তাই বিজয়ের এই মাসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক যেখানে আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের দেখবো সাথে সাথে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে এদের মূল উৎপাটন করতে হবে।
অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, আজকেই সংলাপের শিরোনাম 'গৌরবের বিজয়: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উদ্ভাসিত বাঙালি'- এটা খুব যথার্থ হয়েছে। গৌরবের বিজয় এই জন্যই বলবো কারণ এর পিছনে অনেক কারণ আছে, এই বিজয় আসলে উন্নয়নের বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই স্বাধীনতা কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সহ আরও যাবতীয় মুক্তি পেতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। এবং আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু সেই মুক্তির সোপান দিয়ে গেছেন। তারই তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই সোপান ধরে দেশে উন্নয়নের মহাকাব্য রচনা করে গেছেন এবং যাচ্ছেন। এখানে উন্নয়ন বলতে আমি শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাচ্ছি না, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশের জাতিকে একটি জাতি সত্তা দিয়ে সারা বিশ্বের মাঝে পরিচয় দিয়ে গেছেন ঠিক তেমনি শেখ হাসিনা এই জাতিকে সারা বিশ্বের মাঝে একটি রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে সমগ্র জনগোষ্ঠী আজ ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয়েছে উন্নয়নের এক মহাকাব্যে, যা আমাদের বিশ্ববাসীকে দেখাচ্ছে, কিভাবে লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় অঙ্গীকার, জাতীয় নেতৃত্বে বলিষ্ঠতা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে উজ্জীবিত করে তিনি একাই এই জাতিকে এখন পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বলেন, সবাইকে আজকের ভোরের পাতার সংলাপের আয়োজক সহ সকল অতিথিদেরকে। আজকে ১৭ ডিসেম্বর, বিজয়ের দিনের পরের দিন আজ। এই বিজয়ের মাসটি আমাদের জন্য অনেক গৌরবের মাস। বিজয় শব্দটি সব সময়ের জন্যই আনন্দদায়ক। বিজয় শব্দটি শুনলেই খুশি খুশি লাগে। তবে সেটা যদি হয় বাংলাদেশের বিজয় দিবস তাহলে তো বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের অনুভূতির আলোড়ন শুরু হয় হৃদয়ে। তবে বিজয় শব্দটি যতটা আনন্দের এই শব্দের পিছে লুকিয়ে আছে তার থেকে বেশি দুঃখ-দুর্দশা। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই বিজয়ী দেশটাকে শহীদদের স্বপ্নে লালন করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে শুরু হয় বিভিন্ন দল-সংগঠনের স্বাধীনতা বিরোধী নানা কর্মকাণ্ড। যা আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনে লালিত স্বপ্নের বিপরীত। এমন বৈষম্য আচার-আচরণ তাদের আত্নাকে কষ্ট দেয়। আমরা এক সময় পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত ছিলাম। তাদের নিপীড়ন, অসামঞ্জস্য আচরণ এবং তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে শুধু যে ধর্ম বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র থাকবে, এই কথাটির উপর মানুষের বিশ্বাস একসময় উঠে যায়। মানুষের মধ্যে চাওয়া পাওয়া জেগে উঠে, মানুষের মধ্যে তাদের সত্তা একটি জাতীয়তাবাদ জেগে উঠে। এবং একটি সময় এসে ধর্মভিত্তিক দেশ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণীত হয়। ৫২ থেকে শুরু হয় এই প্রত্যাশা এবং এর চূড়ান্ত ফলাফল আমরা পাই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। অনেকেই বলে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করি। কিন্তু এই মতের সাথে আমি একমত নয়। ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, এই দীর্ঘ সময় আমাদেরকে নানাভাবে যুদ্ধ করে এই অন্তিম স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়।
নজরুল ইসলাম খালেদ বলেন, আমি প্রথমেই স্মরণ করতে চাই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, এবং এই বিজয় দিবস পাওয়ার জন্য যেসব বীর বাঙালি জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি ও দুই লক্ষ মা-বোনদের প্রতি যাদের আত্মত্যাগে আমরা এই স্বাধীন বাংলা পেয়েছি। এই করোনা মহামারী বৈশ্বিক মহামারী। জার্মানিতে আমরা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করছি। এই করোনায় আজকে আক্রান্ত হয়েছে ২৮৭৮৭ জন আর মৃত্যু বরন করেছে ৯৮৪ জন, যেটা বাংলাদেশে আমরা ভাবতেও পারিনা। আপনারা অনেক সুখে আছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। জার্মানি একটি উন্নত দেশ, এই জার্মানির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক ভালো তারপরেও আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। প্রতিটি বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি উজ্জ্বল দিন বিজয় দিবস। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ, স্বজন হারানোর বেদনা ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়। এই দিনে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বীর বাঙালির কাছে পরাজয় স্বীকার করে। তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। তাই বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদা, বীরত্ব ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আজকের এই বিজয় মাসে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, এই মহামারীর মধ্যে তিনি এই দেশটাকে খুব সুন্দর করে সামাল দিচ্ছেন। আজকের বিজয়ের মাসে আরেকটি বিজয় যুক্ত সেটি হচ্ছে পদ্মা সেতু। বঙ্গরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের কৃষি খাত, জিডিপি, সামাজিক সহ সকল খাত উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে গিয়েছে। যে জার্মানি পৃথিবীর উন্নত দেশের মধ্যে চতুর্থতম দেশ সেই জার্মানির জিডিপি গ্রোথ আজকে সাড়ে ৫% এর নিচে নেমে আসছে। সর্বশেষ আমি এই কথা বলেই শেষ করতে চাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পক্ষেই মৌলবাদবিরোধী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশ থেকে সকল ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে কুলুপ এঁটে দিতে হবে।