রাণী বেগম নামে এক প্রসূতির নরমালি সন্তান ডেলিভারি হওয়ার পর জোর করে সিজার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। রাণী বেগম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কয়ারগাছি গ্রামের আল আমিনের স্ত্রী।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে প্রসূতির স্বামী আল আমিন কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে রাণী বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হলে কালীগঞ্জ শহরের দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এসময় উপস্থিত ডাক্তার রোকসানা পারভিন ইলোরা বলেন, 'দ্রুত অপারেশন করতে হবে, নইলে রোগী ও তার সন্তানকে বাঁচানো যাবে না।' এসময় অপারেশনের জন্য ১২ হাজার টাকা চুক্তি হয়। কিছুক্ষণ পরেই রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় কিন্তু সিজারের আগেই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে পুত্র সন্তান হয়। তারপরও জোরপূর্বক ডাক্তার ও ম্যানেজার মাসুদ হোসেন সিজার করতে যায়। এসময় প্রসূতি অপারেশনে বাধা দিলে ম্যনেজার রোগীকে মারধর শুরু করে। এসময় বলে, ‘তুই কি ডাক্তারের থেকে বেশি বুঝিস। বেশি কথা বললে চিরদিনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেব’। এরপর জোরপূর্বক অজ্ঞান করে সিজার করে।
প্রসূতির স্বামী আল আমিন বলেন, 'অপ্রয়োজনে তার স্ত্রীকে মারধর ও অপারেশন করা হয়েছে। স্ত্রীকে অমানবিকভাবে মারধর ও হত্যার হুমিকির বিচার দাবি করেন।'
দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল গিয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার ও ম্যানেজার মাসুদকে পাওয়া যায়নি। তবে, হাসপাতালের মালিক ফিরোজ হোসেন জানান, 'বাচ্চা নরমালেই ডেলিভারি হয়েছে। তবে রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। ফলে রক্ত বন্ধ করতেই সিজার করা হয়েছিলো।'
এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, 'অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে দেখছি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ জেলার বেশিরভাগ ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই মাসের পর মাস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোতে অহরহ অপচিকিৎসা চলছে। ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু ঘটছে। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার উন্নত পরিবেশ নেই। সর্বক্ষনিক চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স নেই। ১০ বেডের পরিবর্তে শয্যা বাড়িয়ে ৫০/৬০ জন করে রোগী ভর্তি করা হয়। নীতিমালা ভঙ্গ করার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নতুন লাইসেন্স পাচ্ছে। পুরানো লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টরের সংখ্যা ১৬৯টি। এর মধ্যে ক্লিনিক রয়েছে ৮১টি। সূত্রমতে, জেলার কোটচাঁদপুরের একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন আছে। বাকি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। এছাড়া ৮৯টি ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের ২০১৮ সাল থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।