সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৭জন প্রাণ হারিয়েছেন। এনিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৭১৫৬ জন। আর এই রোগের নমুনা পরীক্ষার ফলে ১ হাজার ৬৩২ জনের দেহে করোনা ধরা পরেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে করোনার সর্বশেষ এই তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ১ হাজার ৬৩২ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪১ জন হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৭ জনসহ সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত সর্বমোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৫৬ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত একদিনে বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও ২ হাজার ৬২২ রোগী সুস্থ হয়েছেন। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৩৫১ জন হয়েছে। বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম কওে যায়। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবের মধ্যে ৩০ জুন একদিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান।
এদিকে, বিশ্ব করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৬তম স্থান দখল এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া, গোটাবিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এরমধ্যে ৭ কোটি ২২ লাখ পেরিয়েছে। সেই সাথে মৃতের সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৬ হাজার পেরিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে বিভিন্ন ১১২টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ১৮টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ১০টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে সর্বমোট ১৪০টি ল্যাবে ১৭ হাজার ২৫টি নমুনার এসব পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ওই পরীক্ষাগারে ৩০ লাখ ২২ হাজার ৫৩৭টি নমুনা পলীক্ষা করা হয়। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ । সেই হিসেবে শনাক্ত রেটে সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুস্থতার হার ভালো দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ লাখ ১১ হাজার ৯৬৬টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৬ লাখ ১০ হাজার ৫৭১টি ।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম ছিল। যেখানে ২৩ জন পুরুষ আর নারী ৪ জন। এদের সবাই হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আর বয়েসের হিসেবে ষাট উর্ধো লোকের সংখ্যা বেশি। যেখানে ১৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে জানাগেছে। মৃতদের মধ্যে ১৯ জন ঢাকা বিভাগের, ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন রাজশাহী এবং ২ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৭ হাজার ১৫৬ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৪৬২ জনই পুরুষ এবং ১ হাজার ৬৯৪ জন নারী। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৮৭০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়াও ১ হাজার ৮৩৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৮৪৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৩৬৩ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৫৭ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৫৫ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৩ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম। আর বিভাগী হিসেবে ঢাকা বিভাগে সব চেয়ে বেশি। যেখানে ৩ হাজার ৯০৬ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৩৩০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪২০ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫১২ জন খুলনা বিভাগের, ২৩১ জন বরিশাল বিভাগের, ২৮০ জন সিলেট বিভাগের, ৩২২ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৫৫ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে। ক্রমেই মহামারি রূপ নিয়ে এই রোগের সংক্রমণ বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে এখন চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এরমধ্যে দেশে বিজয় দিবসসহ নানা অনুষ্ঠানে সবাই সতর্কভাবে যেন অংশগ্রহণ করে সেখানে সরকার সাধারন মানুষকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।