শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
আজ হাসিনা-মোদি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৩১ এএম আপডেট: ১৭.১২.২০২০ ১২:৫১ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজ ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে দু’দেশের ভেতরে বিদ্যমান বড় বড় সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে দু’দেশই আলোচ্যসূচি ঠিক করেছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাবে বড় বড় বিষয়গুলো। যে বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা ও সীমান্ত সংঘাতের মত বড় বড় ইস্যু। দু’দেশের স্বার্থে এই সব বড় বড় ইস্যুর দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার বলে দেশ দুটি মনে করে। এ সব বিষয়ে আলোচনা সফল করতে দিল্লি এবং ঢাকার সদিচ্ছার কোন অভাব নেই বলে যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। এবিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘সবকিছু নিয়েই কথা বলার সুযোগ আছে। সবগুলো নদীর পানি বিলিবণ্টন যাতে ঠিকমতো হয়, সে জন্য আমরা একটা ফ্রেমওয়ার্ক ডিজাইন করার চেষ্টা করছি। আমরা একটি কমপ্রিহেনসিভ আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে কাজ করতে চাই, সেই প্রচেষ্টা আমাদের রয়েছে।’

এদিকে বিবিসি জানায়, এক বছরের বেশি সময় পর প্রতিবেশী দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যদিও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তা হচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি গত বছরের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। আজকের ভার্চুয়ালি আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা থাকলেও সেই তালিকায় নেই বহুল আলোচিত এবং বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত পানিবণ্টন, সীমান্ত সমস্যার মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলো।  বিবিসির এই মন্তব্যের পর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি সংবাদে জানিয়েছে, আজকের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে নয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংস্থাটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে আরও জানায়, ‘এই বৈঠককালে ঢাকা পানিবণ্টন, কোভিড সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও রোহিঙ্গা সংকটসহ প্রধান সব দ্বিপক্ষীয় ইস্যু তুলে ধরবে। এছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সহযোগিতার বিষয়টি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে।’ এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে আরও জোরদার ভূমিকার জন্য দিল্লির প্রতি আহ্বান জানাতে পারে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে পাঁচটি বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে : হাতি সংরক্ষণ, বরিশালে পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্ট স্থাপন, সামাজিক উন্নয়ন, হাইড্রো-কার্বনখাতে সহযোগিতা, কৃষিখাতে সহযোগিতা। এছাড়া ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগটি ৫৫ বছর পর উদ্বোধন করা।

চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথ :দীর্ঘ ৫৫ বছর পর চালু হচ্ছে বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী রেলপথ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ রেলপথটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন রেল করিডোর। উদ্বোধন উপলক্ষে এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ী পর্যন্ত রেল লিংকটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী রেলওয়ে সেবা হতে বঞ্চিত হয়। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে থাকা রেলপথটি পুনরায় চালু হলে দুইদেশই উপকৃত হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট ৭টি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে ৪টিতে রেলওয়ে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে ৫ম ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট হিসেবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল সংযোগটি সংযোজিত হচ্ছে। এর ফলে ঢাকাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন চলাচলের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মেচিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশি পর্যটকরা দার্জিলিংসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে দ্রুত ও সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন।

কী বলছেন কূটনীতিকরা :এ বিষয়ে কথা হয় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। তার মতে, পানিবণ্টন, সীমান্ত সংঘাতের মতো ইস্যুতে আলোচনা বা সমঝোতা না হলে এসব ইস্যু ততটা গুরুত্ব বহন করে না। তিনি বলেন, ‘যে এমইউও কথা বলা হচ্ছে, এগুলোর কোনোটাই আসলে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।  যে বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় কথাবার্তা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে, উদ্বেগ আছে, তার একটা ইস্যুও এখানে নেই। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, পুরো বিষয়টার গুরুত্ব অনেকটা কমে আসছে।’ তবে তিনি মনে করেন, এমন সমঝোতার মধ্যে হাইড্রোকার্বন সেক্টরে সহযোগিতার বিষয়টি আলাদা গুরুত্ব বহন করে। তিনি বলেন, ‘হাইড্রোকার্বন সেক্টরে যে কো-অপারেশনের কথাবার্তা হয়েছে, এটা অনেকটাই নতুন। একটা হতে পারে যে, যেহেতু সাগরে আমাদের পাশাপাশি অনেকগুলো ব্লক রয়েছে, সেখানে ভারতীয়রা হয়তো সহযোগিতা করতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। সেটা হলে বেশ উপকারী হবে।’ কিন্তু তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্তে প্রাণহানি বন্ধ না হলে এই বৈঠক বাংলাদেশের জন্য ততটা উপকারী হবে না বলেই মনে করেন এই কূটনীতিক। ‘অনেকদিন ধরে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ নেই, সেই যোগাযোগটা হচ্ছে, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া যে ইস্যুগুলো আছে বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে, এর কোনোটাকেই বিরাট কিছু মনে হচ্ছে না আমার কাছে’ যোগ করেন এই কূটনীতিক।   এদিকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি দুই দেশের সম্পর্কে বিশাল পরিবর্তন আসে। দুদেশের সর্ম্পকের উন্নতি হয়েছে। বেশ কয়েকবার আলোচনা বৈঠকও হয়েছে। তারপরেও বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত কয়েকটি ইস্যুতে সমাধান আসেনি। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভাস দিচ্ছেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে, পানিবণ্টন, সীমান্ত প্রাণহানি, রোহিঙ্গা সংকট এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলার মতো বিষয় আলোচনায় উঠতে পারে।

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন :আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন যেমনটি বললেন। অধ্যাপক লাইলুফার বলেন, সেটা হোক বা না হোক, নানা ইস্যুতে দুই দেশের সমঝোতা স্বাক্ষর, বৈঠক ইতিবাচকভাবেই দেখা যেতে পারে। তার মতে, ‘যে সমঝোতাগুলো স্বাক্ষরের কথা বলা হচ্ছে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকাতর যে বিষয়গুলো রয়েছে, তার তুলনায় এগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে আমরা যে ট্রেন্ড দেখেছি, সেটা হলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা। সেটা কিন্তু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ অধ্যাপক ইয়াসমিনের ভাষায়, ‘স্পর্শকাতর বিষয়গুলো একদিনে সমাধান হয় না। আপনাকে আস্তে আস্তে দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে। ছোটখাটো বিষয়ে যখন বিশ্বাস তৈরি হবে, তখন সেটাকে বড় ইস্যুগুলোর দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’ আজ সকালে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকটি হবে। তবে সমঝোতা স্মারকগুলোয় স্বাক্ষর করবেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার। সামনের বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা। এদিকে ভারতের কূটনৈতিক দফতরের বরাত দিয়ে সেদেশের সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, গত একবছর ধরে দুই দেশের সম্পর্কের যে শীতলতা চলছে, সেটি স্বাভাবিক করারও চেষ্টা থাকবে এই বৈঠকে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]