বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিদেশি সাহিত্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানসম্পন্ন লেখা একেবারেই অপ্রতুল, কারণ কী?
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২৯ এএম | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলা ভাষায় বহু গল্প, উপন্যাস, নাটক বা গবেষণা ধর্মী লেখা এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হলেও ইংরেজি সহ অন্যান্য ভাষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মানসম্পন্ন ও সাহিত্যগুণ সম্পন্ন লেখা একেবারেই অপ্রতুল। খবর- বিবিসি বাংলা

উনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের ভাষ্য ও সেসময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে জানতে পারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে যুদ্ধের পর বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অগণিত সাহিত্য রচনা করা হলেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস সেই তুলনায় ছিল নগণ্য।

বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষায় লেখা সাহিত্যকর্মের পাঠকের স্বল্পতা, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষায় লেখালেখির চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো না থাকা এবং ক্ষেত্র বিশেষে লেখক বা গবেষকদের 'রাজনৈতিকভাবে অতিরিক্ত সচেতনতা' থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৫০ বছর পরও ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট পরিমাণ মানসম্পন্ন লেখা নেই বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং লেখকরা।

'সুযোগ ছিল, কিন্তু কাজে লাগানো হয়নি'

উনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক এবং লেখকরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথ্যবহুল অনেক লেখা এবং সংবাদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করা হলেও বাংলাদেশ সেগুলোর সুযোগ নিতে পারেনি বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অজয় দাশগুপ্ত।

তিনি বলেন, "১৯৭১ সালে ইংরেজি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ছিল মূলত লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক-ওয়াশিংটন কেন্দ্রিক, আর ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার কারণে দিল্লি ইংরেজি ভাষাভাষীদের একটি কেন্দ্রের মত ছিল। এই জায়গাগুলোতে বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে, শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে যত ধরণের কার্যক্রম চলেছে, তার সবই ইংরেজি ভাষায় হয়েছে।"

"আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরার জন্য যেসব অনুষঙ্গ দরকার, তার বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই বিদ্যমান ছিল। সেসময় সাংবাদিকরা ব্রিটেনে বা নিউ ইয়র্কে পরিবেশন করা সংবাদে, অনেক কলামিস্ট ও লেখকদের লেখনীতে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত ছিল এবং আমাদের কাজটাও অনেক সহজ হতে পারতো, কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগানো হয়নি।"

একাত্তর-পরবর্তী একটা লম্বা সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষের সমর্থনে থাকা শক্তি মুক্তিযুদ্ধকে 'গুরুত্ব দিতে চায়নি' বলে প্রামাণ্য দলিল থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়নি বলে মনে করেন মি. দাশগুপ্ত।

তিনি বলেন, "আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ছোট ছোট অসংখ্য গল্প, ঘটনা রয়েছে যেগুলো সারাবিশ্বের মানুষের কাছে আবেদন তৈরি করতে পারে। কিন্তু সেসব গল্প আমাদের নিজেদের উদ্যোগী হয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের হয়ে অন্য কেউ এই কাজটা করে দেবে না।"

রাজনৈতিক বিবেচনায় ইতিহাস পরিবর্তন

সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই দলের সুবিধা এবং চাহিদা অনুযায়ী ইতিহাস পরিবর্তনের চেষ্টা অনেক দেশেই হয়েছে। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে ইতিহাস পরিবর্তনের প্রচেষ্টা করার ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য নির্ভর একটি ইংরেজি বইয়ের লেখক কাইয়ুম খান - যার বই ২০১৩ সালের হে ফেস্টিভালে ঢাকায় প্রথমবার প্রকাশিত হয় - মন্তব্য করেন যে সবসময়ই ক্ষমতাসীনরা ইতিহাসের একটি 'নির্দিষ্ট সংস্করণের প্রতিষ্ঠা' নিশ্চিত করতে চেয়েছে, যার ফলে ঐতিহাসিক সত্য সম্বলিত সাহিত্যকর্মের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

কাইয়ুম খান বলেন, "বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উইনস্টন চার্চিল 'হিস্ট্রি অব দ্য সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার' লিখে নোবেল পুরষ্কার পান। কিন্তু তার বইয়ের অনেক তথ্যই গ্রহণযোগ্য নয়।"

কাইয়ুম খান মনে করেন, বাংলাদেশের লেখক ও গবেষকদের অনেকেই 'রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি সচেতন' বা 'খুব বেশি ভীরু।'

"তারা যখন আভাস পান যে তাদের কাজের একটি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তখন তারা সে বিষয়টি এড়িয়ে চলেন।"

এসব কারণে ইংরেজিতে মানসম্পন্ন লেখার সক্ষমতা এবং ইচ্ছা থাকলেও অনেক লেখক বা গবেষক এই ধরণের কাজ করা থেকে বিরত থাকেন বলে মনে করেন মি. খান।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অজয় দাশগুপ্ত অবশ্য মনে করেন শিক্ষাবিদ বা গবেষকরা উদ্যোগী হয়ে ইতিহাস সঙ্কলনের উদ্যোগ নিলে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে গিয়ে সরকার সেই উদ্যোগকে সমর্থন দেবে।

"বাংলা বাদে অন্য কোনো ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহের বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণ করা হলে তা শুধু একটি প্রজন্ম বা একটি ভাষাভিত্তিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। তাই শিক্ষাবিদ বা বুদ্ধিজীবীরা যখন এ ধরণের কোনো গবেষণা করে, তখন তা দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে সবখানেই গ্রহণযোগ্যতা পায়।"

তবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের জন্য এই ধরণের গবেষণা কোনো কোনো সময় সংবেদনশীল হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে বলে মনে করেন মি. দাশগুপ্ত।

বাংলাদেশে ইংরেজি সাহিত্যের পাঠক স্বল্পতা

লেখক কাইয়ুম খান মনে করেন, বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষায় লেখা সাহিত্যকর্মের পাঠকের সংখ্যা কম থাকার কারণে বাংলাদেশি লেখকরা ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করায় যথেষ্ট আগ্রহ পান না।

তিনি বলেন, "ভারতের সাথে যদি তুলনা করেন, সেখানে ইংরেজি ভাষায় লেখা বইয়ের বিপুল পরিমাণ পাঠক রয়েছে। এই কারণে সেখানে প্রচুর ইংরেজি বই ছাপায় প্রকাশকরা।"

এসব কারণে ভারতে লেখকদের মধ্যে ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করার প্রবণতাও বেশি বলে মনে করেন মি. খান।

বাংলাদেশে ইংরেজি লেখার পাঠকের সংখ্যা কম হওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণ এবং মানসম্পন্ন অনুবাদও হয় না বলে মনে করেন তিনি।

"ভারতে দেখা যায়, একই পাঠক তার নিজস্ব ভাষায় একটি বই পড়ে আবার সেটির ইংরেজি অনুবাদও পড়েন। যার ফলে সেখানে প্রচুর বইয়ের অনুবাদও প্রকাশকরা ছাপান। কিন্তু বাংলাদেশে ইংরেজি বইয়ের যথেষ্ট পাঠক না থাকায় সেই পরিমাণ অনুবাদও ছাপতে আগ্রহী হন না প্রকাশকরা।"



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]