রাজনৈতিক বিবেচনায় ইতিহাস পরিবর্তন
সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই দলের সুবিধা এবং চাহিদা অনুযায়ী ইতিহাস পরিবর্তনের চেষ্টা অনেক দেশেই হয়েছে। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে ইতিহাস পরিবর্তনের প্রচেষ্টা করার ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য নির্ভর একটি ইংরেজি বইয়ের লেখক কাইয়ুম খান - যার বই ২০১৩ সালের হে ফেস্টিভালে ঢাকায় প্রথমবার প্রকাশিত হয় - মন্তব্য করেন যে সবসময়ই ক্ষমতাসীনরা ইতিহাসের একটি 'নির্দিষ্ট সংস্করণের প্রতিষ্ঠা' নিশ্চিত করতে চেয়েছে, যার ফলে ঐতিহাসিক সত্য সম্বলিত সাহিত্যকর্মের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
কাইয়ুম খান বলেন, "বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উইনস্টন চার্চিল 'হিস্ট্রি অব দ্য সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার' লিখে নোবেল পুরষ্কার পান। কিন্তু তার বইয়ের অনেক তথ্যই গ্রহণযোগ্য নয়।"
কাইয়ুম খান মনে করেন, বাংলাদেশের লেখক ও গবেষকদের অনেকেই 'রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি সচেতন' বা 'খুব বেশি ভীরু।'
"তারা যখন আভাস পান যে তাদের কাজের একটি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তখন তারা সে বিষয়টি এড়িয়ে চলেন।"
এসব কারণে ইংরেজিতে মানসম্পন্ন লেখার সক্ষমতা এবং ইচ্ছা থাকলেও অনেক লেখক বা গবেষক এই ধরণের কাজ করা থেকে বিরত থাকেন বলে মনে করেন মি. খান।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অজয় দাশগুপ্ত অবশ্য মনে করেন শিক্ষাবিদ বা গবেষকরা উদ্যোগী হয়ে ইতিহাস সঙ্কলনের উদ্যোগ নিলে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে গিয়ে সরকার সেই উদ্যোগকে সমর্থন দেবে।
"বাংলা বাদে অন্য কোনো ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহের বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণ করা হলে তা শুধু একটি প্রজন্ম বা একটি ভাষাভিত্তিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। তাই শিক্ষাবিদ বা বুদ্ধিজীবীরা যখন এ ধরণের কোনো গবেষণা করে, তখন তা দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে সবখানেই গ্রহণযোগ্যতা পায়।"
তবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের জন্য এই ধরণের গবেষণা কোনো কোনো সময় সংবেদনশীল হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে বলে মনে করেন মি. দাশগুপ্ত।
বাংলাদেশে ইংরেজি সাহিত্যের পাঠক স্বল্পতা
লেখক কাইয়ুম খান মনে করেন, বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষায় লেখা সাহিত্যকর্মের পাঠকের সংখ্যা কম থাকার কারণে বাংলাদেশি লেখকরা ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করায় যথেষ্ট আগ্রহ পান না।
তিনি বলেন, "ভারতের সাথে যদি তুলনা করেন, সেখানে ইংরেজি ভাষায় লেখা বইয়ের বিপুল পরিমাণ পাঠক রয়েছে। এই কারণে সেখানে প্রচুর ইংরেজি বই ছাপায় প্রকাশকরা।"
এসব কারণে ভারতে লেখকদের মধ্যে ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করার প্রবণতাও বেশি বলে মনে করেন মি. খান।
বাংলাদেশে ইংরেজি লেখার পাঠকের সংখ্যা কম হওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণ এবং মানসম্পন্ন অনুবাদও হয় না বলে মনে করেন তিনি।
"ভারতে দেখা যায়, একই পাঠক তার নিজস্ব ভাষায় একটি বই পড়ে আবার সেটির ইংরেজি অনুবাদও পড়েন। যার ফলে সেখানে প্রচুর বইয়ের অনুবাদও প্রকাশকরা ছাপান। কিন্তু বাংলাদেশে ইংরেজি বইয়ের যথেষ্ট পাঠক না থাকায় সেই পরিমাণ অনুবাদও ছাপতে আগ্রহী হন না প্রকাশকরা।"