১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন রূপ পায় আমার, আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ। আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, বিজয় অর্জনের পর আমাদের এই দীর্ঘ পথচলা খুব সহজ ছিল না, নানা চড়াই উৎরাই পার করে আজকের এই রূপে আমাদের বাংলাদেশ। বিজয় অর্জনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন শিক্ষার্থীরা। ভবিষ্যতেও এই তরুণ শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, বিজয়ের এই দিনে তাদের ভাবনা তুলে ধরেছেন 'ভোরের পাতার' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রেজওয়ান সীমান্ত।
'বিজয় শব্দটি রক্ত দিয়ে কেনা'
শোষণ,নিপীড়নের দীর্ঘ অধ্যায় পেরিয়ে সংগ্রামের সফলতা এসেছিল রক্তে কেনা বিজয়ে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে এনেছিল শকুনের হাত থেকে স্বাধীনতা এবং বিজয় লাভ করেছিল লাল সবুজের পতাকা।এই মহান বিজয় এত সহজ ছিলো না। তাদের অবাধ্য সাহস আর দূর্ভেদ্য দেশপ্রেম একসাথে হয়ে উঠেছিল অপরাজেয়। এই বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। বিজয় দিবস আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় এবং বাংলাদেশকে অভেদ্য অপরাজেয় বাংলায় প্রতিষ্ঠিত করে। সম্প্রতিকালে দেখা যাচ্ছে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মৌলবাদী আস্ফালন । যারা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা , সংবিধান এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে । এরা আর কেউ নয় , ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর যারা পরাজিত হয়েছিল এরা তাদেরই উত্তরসরি ।
এই বিজয়ের মাসে আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে । বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের এই যাত্রায় অবদান রাখবো আমরা শিক্ষার্থীরাও এই প্রত্যয় নিয়ে অগ্রসর হবার আহবান সকলের প্রতি ।
রাজীব বিশ্বাস
অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
'অর্জন হয় নি প্রত্যাশিত সাফল্য'
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানাটা আমাদের অন্যতম কর্তব্যের মধ্যে একটি। ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি কিভাবে নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জন করেছি৷ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর থেকে আমাদের স্বাধীনতা লাভ করার ইতিহাসটা যেমন অন্যরকম তেমনি প্রতি বছরে বিজয়ের মাসে আমাদের বিজয়ের আনন্দটাও অন্য সবার থেকে একটু আলাদা। তবে বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র দেখে মনে হয় সত্যিই "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা বড় কঠিন"। আজ স্বাধীনতা অর্জনের ৪৮ বছর পরেও আমরা নিজেদের প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করতে পারিনি৷ না, এর জন্য কোনো সরকার দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী শুধু আমরাই। আমরা নিজেদের জাতি সত্ত্বা ভুলে গিয়ে অপ-সংস্কৃতির চর্চায় মগ্ন হয়ে আছি৷ যার ফলে এই দেশ থেকে আজ তৈরী হচ্ছে না কোনো কাজী নজরুল ইসলাম বা এস এম সুলতানের মতো বিশ্ব নন্দিত সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব। আজ এ দেশের ঘরে ঘরে বসে বাংলা গানের পরিবর্তে ভিনদেশী গানের পসরা। এর জন্য তো আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিনি। যুব সমাজ আজ মাঠে খেলাধুলা করার বদলে নেশায় আসক্ত হয়ে দেশকে নিয়ে যাচ্ছে আরো ধ্বংসের দিকে। এসবের জন্যেই কি তবে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে এ দেশের মাটি ভিজেছিলো? আজ নতুন প্রজন্মের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এই বিজয়ের মাসে আমাদের শপথ হওয়া উচিত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এবং দেশের কল্যাণে নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা। তবেই হবে আমাদের প্রকৃত বিজয়, তবেই স্বাধীনতা ফিরে পাবে তার পূর্ণতা।
আপন শরীফ
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
'অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন শক্ত করেছে বিজয়ের ভীত'
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে পৃথিবীর বুকে"বাংলাদেশ"নামক স্বাধীন ও সার্বভোম রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয় আমার বহুল আকাঙ্খিত বিজয়।
৭১পরবর্তী বাংলাদেশে ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীন উন্নয়ন সাধনের মধ্য দিয়ে বিজয়ের ভীত আরও সমৃদ্ধ আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও তার অনুসারীদের উন্নয়নের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে এখন গর্ব করা যায়। মাথাপিছু গড় আয়, মোট জাতীয় আয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলেছে।রাজনৈতিক আগ্রাসন ধ্বংস করে বিশ্বমানের রাজনৈতিক আগ্রগতি হচ্ছে।
শিক্ষার সামগ্রিক মান বাড়ছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অভাবনীয় উন্নতি। শিল্পী - সাহিত্যিক,লেখকদের বৃদ্ধি এদেশীয় সাহিত্যের জন্য বিরাট সম্ভাবনাময়।
ঘুমন্ত মানবজাতি আত্মসমলোচনার কাছে পরাজিত হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষশক্তি হয়ে মৌলবাদবিরোধী সমাজ গড়ার ব্রতে দীক্ষিত হয়ে বাংলাকে আরও একবার স্বাধীনতা দিয়েছে।
এই বহুল প্রতীক্ষিত সূর্য রংয়ের স্বাধীনতা ধরে রাখতে আমাদের প্রত্যেকের সবুজ রংয়ের ঢাল হয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করে যেতে হবে।
দেড় হাজার বছরের ইতিহাস সবটাই আমাদের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধ,বিজয়, স্বাধীনতা এর বিস্তৃত ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় সুদীর্ঘকালের বহুল আকাঙ্ক্ষিত অর্জন আমাদের। এই অর্জন আমাদের শক্তি, আমাদের আশা, আমাদের স্বপ্ন।
মিতালি মন্ডল
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
'নিজেকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কারিগর হিসেবে তৈরি করতে হবে'
১৬ই ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। একাত্তরের ১৬ ই ডিসেম্বরকে প্রথম পালিত বিজয় দিবস ধরলে এবার ৪৯তম বিজয় দিবস। প্রতি বছর বিজয় দিবস আসে, যায়। এদিন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিটি জনপদে এক অনন্য অনুভব কাজ করে। যখনই বিজয় দিবস আসে, আমাদের মনে পড়ে যায় ১৯৭১ সালের রক্তমাখা স্মৃতি আর সাত কোটি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের হাজার ছবি। আমরা নতুন প্রজন্মের তরুণরা বিজয় দেখিনি; কিন্তু আমরা শুনেছি জেনেছি সেই বিজয়ের আত্মকথা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে আমাদের তারুণ্য। আমাদের অনেক কিছু নির্ভর করে এমন তরুণদের ওপর। যার উজ্জ্বল প্রমাণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছে দুর্বার গতিতে। তবে আজকের তরুণ আর একাত্তরের তরুণের মধ্যে সংখ্যাগত যেমন ব্যবধান রয়েছে, তেমনি রয়েছে আরো অনেক কিছু। কেননা তারা যুদ্ধ দেখেনি। একাত্তরের তরুণদের মধ্যে ছিল না আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া, ছিল না ব্যাপক শিক্ষা ও জ্ঞানভান্ডার। তবে তাঁদের মধ্যে বড় ছিল শক্তি, চেতনা, মনোবল, উৎসাহ ও উদ্দীপনা, যার পুরোটা ঘিরে ছিল স্বাধীনতা। নেতার গুণাবলি ছিল এমন, যেখানে আস্থা ছিল শতভাগ। এমন এক নেতা ছিলেন, যেখানে সবাই উন্মুখ ছিল ডাকের অপেক্ষায়। শিক্ষাটাকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে সত্যিকার অর্থেই সোনার বাংলা গড়া সম্ভব। আজকে যারা বর্তমান তারা একদিন সাবেক হবে, তরুণ প্রজন্ম একদিন এ দেশের এমপি, মন্ত্রী,সচিব হবে। তাই নিজেকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কারিগর হিসেবে তৈরি করতে হবে। কারণ দেশ আমার, দায়িত্বও আমার। আমাদের নিজের পরিবারের প্রতি যতটা দায়িত্ব, এ দেশের প্রতিও ঠিক ততটাই দায়িত্ব। ৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা ঘটে এবং জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। অজস্ত্র রক্তের বিনিময়ে আমরা এই বিজয় লাভ করি। এই ইতিহাস আমরা আজও ভুলতে পারিনি। ডিসেম্বর এলে আমিও স্বাভাবিকভাবেই তারুণ্যদীপ্ত হয়ে উঠি। স্মরণ করি সেইসব বীর সেনাদের যারা শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে অনাগত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রীর বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল। আমাদের সবাইকে বিজয় দিবসের অর্জনকে ধারণ করে নতুনদের কাছে বিজয় দিবসের কথা তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নির্যাতন-নিষ্পেষিত হওয়ার কথা জানাতে হবে। তারুণ্য মনে, মননে, শক্তিতে, সামর্থ্যে এবং ভাবনায়। সবাই মিলে দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরাই গড়ে তুলব আগামীর বাংলাদেশ।
তাসমিয়া তাওয়াজ রিশতা
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।