প্রকাশ: বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম আপডেট: ১৬.১২.২০২০ ২:০৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির দিন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে আজই এক নতুন রাষ্ট্র নাম লিখেছিল, তার নাম বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ২ লাখ মা-বোনোর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা, অতঃপর ঐতিহাসিক বিজয় মূলত বাঙালির বীরত্বগাথাকেই বারবার মনে করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় বাঙালিসহ এ ভূ-খণ্ডের সব জাতি-গোষ্ঠী কখনো কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করতে জানে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো পরাশক্তির কাছেই কখনো মাথা নত করেননি। তাঁর কাছ থেকে দীক্ষা পাওয়া জাতি আজ বিজয়ের ৪৯তম বছর পূর্ণ করে পদার্পণ করেছে ৫০তম বছরে। আগামী মার্চ মাসেই বাংলাদেশ পদার্পণ করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে। এই সময়েই জাতি উদযাপন করছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষও।
দেশে ও দেশের বাইরে আজ কোটি বাঙালি বিপুল আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করছে। একইসঙ্গে বেদনাহত হৃদয় দিয়েই স্মরণ করবে মৃত্যুঞ্জয়ী সেই বীর সন্তানদের। যারা স্বাধীনতার বেদীতে ঢেলেছিল অকাতর রক্ত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে অভ্যুদয় হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের। সেখানেও পূর্ব পাকিস্তানের উপর শোষণ, নির্যাতন চালায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা। ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়’ সেøাগানে তখন ধীরে ধীরে গর্জে উঠতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের আপামর মানুষ। তবে, পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার পূর্ব পাকিস্তানের উপর প্রথম আঘাত হানে মাতৃভাষা ইস্যুতে।
১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে আপামর ছাত্র জনতা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশ্বে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তা রূপ নেয় স্বাধীনতার আন্দোলনে। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনের পরম্পরায় বাঙালির জীবনে আসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ডাক দেন চূড়ান্ত যুদ্ধে। যার কাছে যা আছে তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন শত্রুদের মোকাবিলার জন্য। গর্জে উঠেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এর মত কালজয়ী ভাষণে।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বীর সন্তানরা হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, জনতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, কাদেরিয়া বাহিনী, মুজিব বাহিনী, ছাত্র ইউনিয়ন-ন্যাপ-কমিউনিস্ট গেরিলা বাহিনী, ভারতীয় মিত্র বাহিনী নেমে পড়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ভেতর দিয়ে বিজয় অর্জন করে বাঙালি। আজ থেকে ৪৯ বছর আগে সেই রমনা রেসকোর্স ময়দানেই আত্মসমর্পণ করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। লাল-সবুজ পতাকা উঁচিয়ে চলছে প্রগতির পথের অভিযাত্রা বাঙালি।
আজ বিজয়ের ৪৯ বছরের পরও সেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সরকার বজায় রেখেছে বিজয়ের অভিযাত্রা। সাম্প্রতিককালের পদ্মাসেতুই তার বড় উদাহরণ। সবাধীনতার পরও বার বার ফিরে এসেছে সেই সাম্প্রদায়িক পাকদোসর মৌলবাদীরা। কিন্তু, তাদের প্রয়াস সফল হয়নি বাঙালির ঐক্যবদ্ধতার কারণে। সফল হয়নি মৌলবাদীদের জাতির পিতার উপর অবমাননার প্রয়াসও।