ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম আপডেট: ১৬.১২.২০২০ ১২:০৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ
ডিসেম্বর, অহংকার, গৌরব আর বিজয়ের মাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। আমরা তার সন্তানসম সহযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে এখনো পাকিস্তানি প্রেতাত্মারূপে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে আমি আত্মা দিয়ে অনুভব করি বলেই সাতক্ষীরার মতো জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় থেকেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসাবে কাজ করে যাচ্ছি নিরন্তর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সন্তান হিসেবে, আমরা মুজিব আদর্শের সৈনিক হয়ে শেখ হাসিনার আলোয় আলোকিত ও উদ্ভাসিত হয়েছি। ভবিষ্যতেও হবো। বাঙালির নবজীবনের সূচনা হয় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরেই। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাভূত হয় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। বিশ্বের বুকে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ নামের একটি জাতি-রাষ্ট্র। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এই বাংলাদেশের আছে নানা অর্জন, আছে নানা চ্যালেঞ্জ।
বাঙালির জাতীয়তাবোধের উন্মেষের সুদীর্ঘ ইতিহাসে অবিস্মরণীয় মাস ডিসেম্বর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম আর ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে আসে জাতীয় মুক্তি। আজকের দিনে অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেই সঙ্গে এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীর সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস যজ্ঞে মেতে উঠেছিল। পুরো জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এমন ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের নজির বিশ্ব ইতিহাসে আর নেই। বাঙালি এই কারণে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনায় উদযাপন করে বিজয়ের মাসটি। প্রতিবছর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নানা অনুষ্ঠানে মাসজুড়ে বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করে পুরো দেশ। লাল-সবুজের পতাকা ওড়ে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে কিছুটা ছেদ পড়েছে আনুষ্ঠানিক উৎসব আয়োজনে। এবার বিজয় দিবস এসেছে এমন এক সময়ে, যখন দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। অন্ধকারের শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অপশক্তিকে মোকাবিলার ডাকও এসেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানে ১ ডিসেম্বর শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। প্রতিবছরের মতো এবারও পদক্ষেপ বাংলাদেশ উদযাপন করবে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রহর’ ও ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’। এবার অনুষ্ঠান হবে অনলাইনে।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রাক্কালে সম্প্রীতি বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে বলেছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পরিচয় মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জনগণের সম্মিলিত শক্তি সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এনে দেবে নতুন মুক্তি। বিবৃতিতে এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সমসাময়িক সময়ে মৌলবাদীরা আবারো আস্ফালন দেখাচ্ছে। কিন্তু তারা এই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার সঠিক ইতিহাস জানে না বা বুঝে নাই। এদেশে মৌলবাদীরা কখনোই সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সৈনিকরা যতদিন এ দেশে বেঁচে থাকবে, কেউ ছাড় পাবে না। আজকের এই বিজয় দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, মৌলবাদ মুক্ত বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে সম্প্রীতির অনন্য ছোঁয়া। তাহলেই জাতির জনকের আত্মা শান্তি পাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক :সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম।
পরিচালক, এফবিসিসিআই।
সাবেক সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য ও ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।