#নব প্রজন্মকে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে: আফজালুর রহমান বাবু
#নিজের মধ্যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে নৈতিকভাবে ধারণ করতে হবে: জয়দেব নন্দী
#আজকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে বিশ্বাস করে: মুরাদ খান
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দেশ। ইতিহাসের এমনই এক সন্ধিক্ষণে উপনীত এবারের বিজয় দিবস। দিবসটির প্রাসঙ্গিকতায় যুক্ত হয়েছে নানা মাত্রা, নানা তাৎপর্য। এবারের বিজয় দিবসে আমাদের নতুন বিজয়ের অহংকার স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এক থেকে একচল্লিশ নম্বর স্প্যান বিজয়ের গর্বের ইতিহাস। বিজয় দিবসের প্রতিটি দিনই বাঙালির বীরত্বের পরিচয় বহন করে। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৮৯তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রনেতা আফজালুর রহমান বাবু, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী, নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ খান। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকে আমাকে ভোরের পাতা সংলাপে আমন্ত্রণ করার জন্য। ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরে আমাদের বিজয়ের প্রতিধ্বনি বাজবে সারা বাংলায়। এই বিজয়ের আনন্দে আমরা উদ্বেলিত। বাংলার গণমানুষের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই জানি, পদ্মা সেতু নিয়ে কি বিশাল ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিশেষ করে ড. ইউনুসের মতো লোক বিশ্ব ব্যাংকের সাথে তাল মিলিয়ে দুর্নীতি নিয়ে একটি ভুয়া তকমা লাগানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আজকে এটা বাস্তবে পরিণত হয়েছে যে, জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সাহস ও সততা দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মা সেতুকে স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছেন। যারা সে সময় এই পদ্মা সেতুকে নিয়ে বলেছিল এটা কোনোদিনই সম্ভব হবে না, তারা কিন্তু আজকে চুপসে গিয়েছে। তাই আজকের বিজয়ের দিনে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। তার এই প্রচেষ্টার কারণে আজকে আমরা এই জায়গায় এসেছি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে শেখ হাসিনা দিনে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নিয়মিত। তিনি শুধু দেশকে নিয়ে ভাবেন। নিজের দেশ ছাড়া তার মাথায় আর কিছুই নিতে চান না। সারাদিন কিভাবে দেশের উন্নয়ন, কোথা থেকে কি করা যায় তার জন্যই সব সময় তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। আজকে যখন আমরা বিজয় দিবস উৎযাপন করতে যাচ্ছি তার প্রাক্কালে দেখতে পারছি ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কথা উঠছে। সে বিষয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর সমাধান করা হয়েছে। আজকে আবার সে বিষয়টিকে বিতর্কের নামে ষড়যন্ত্র করছে মামুনুল হক ও বাবুনগরী। মৌলবাদীরা শান্তিময় দেশকে আফগানিস্তান আর পাকিস্তান বানাতেই মাঠে নেমেছে। তারা কখনও আন্দোলন করে ধর্ম অবমাননার নামে, কখনও কাউকে কাফের আখ্যা দেওয়ার নামে, আবার কখনও ভাস্কর্য অপসারণের নামে। আসলে তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। হেফাজত এতদিন ছিল জামায়াতের মতো ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি সাধারণ ধর্মীয় দল। ইসলাম শিক্ষা ও ইসলাম প্রচার ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। এখন হেফাজতের আদি ও পুরানো নেতৃত্ব পরিবর্তিত হয়েছে। বাবুনগরী হেফাজতের নেতৃত্ব দখল করার পর দলটিতে কট্টরপন্থিদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে। তারা যখন দেখেছে আম্পান, বন্যা, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের একটি লোকও না খেয়ে মারা যাচ্ছে না, সেখানে তাদের এটা কোনভাবেই সহ্য হচ্ছে না। তারা আবার দেশের মধ্যে তাদের পুরানো ষড়যন্ত্র কায়েম করার পাঁয়তারায় নেমেছে। নব প্রজন্মকে এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে, এরা যাতে কোনভাবেই দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় না হতে পারে, এটাই হোক আমাদের বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা।
জয়দেব নন্দী বলেন, ঠিক যে মুহূর্তে এই বিজয়ের উল্লাসে আমরা মাততে যাচ্ছি, ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা একটা বিশেষ সন্ধিক্ষণে আছি। এই বিশেষ সন্ধিক্ষণ বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি, একদিকে শুভ আরেকদিকে অশুভ। শুভ দিক হচ্ছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি, আরেকদিকে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমাদের একেবারেই দৌরগোঁড়ায়। পাশাপাশি আমরা যেই মুহূর্তে বিজয় দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি ঠিক সে সময় রাজাকার, আল-বদর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা তার শাসনামলে করেছেন। আমি নিজেকে এই প্রজন্মের একজন হিসেবে বিশ্বাস করি, কেননা যত অন্ধকারাছন্ন আসুক না কেন, আমার পূর্ব প্রজন্ম যারা নয় মাস তাদের রক্ত ও আত্মত্যাগ দিয়ে এই দেশটাকে স্বাধীন করেছে তাদেরই রক্তের স্রোতধারা আমাদের রক্তের মধ্যে বইছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিছক ভাস্কর্য নয়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গোটা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতিচ্ছবি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আমাদের লাল-সবুজের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে তারা আমাদের অস্তিত্বে আঘাত করেছে। গর্তের ভেতর থেকে তারা আস্ফালন করছে। আমরা বসে থাকেতে পারি না। আসুন অমরা এই মৌলবাদী অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াই। আমরা সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবো। এই যে সমসাময়িক সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিরা একটি ধ্রুমজাল সৃষ্টি করছে। আমরা পূর্বজ, মধ্যজ ও অগ্রজ একসাথে হয়ে আমাদের এই অন্ধকার মুহূর্তটিকে এক সাথে মোকাবিলা করতে হবে। ধর্মান্ধতা কোনো পবিত্র ধর্মেরই পোষকতা করে না। তা ধর্মের নাম ভাঙিয়ে অন্য ধর্ম ও মতের মানুষের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালনোর হাতিয়ার। সাধারণ ফ্যাসিবাদের চাইতেও ধর্মান্ধ ফ্যাসিবাদ মানবতার আরো বড় শত্রু। প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের এই অন্ধকারাছন্ন মুহূর্তটিকে মোকাবেলা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে আগাতে হবে। আজকে এই দিনে আমি আরও বলতে চাই এইযে বছরের শুরুর দিকে মহামান্য হাইকোর্ট একটি আদেশ জারি করেছে যে, জাতীয় দিবসগুলোয় উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারী ও রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান যাতে উচ্চারণ করেন, সে জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এটা কি আমরা সব জায়গায় করতে পেরেছি। নিজের নৈতিকতা থেকে সবাইকে এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের পূর্ণ অর্থ নিজের মধ্যে ধারণ করে সব জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে।
মুরাদ খান বলেন, আজকে এই দিনে আমি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। একইসঙ্গে স্মরণ করছি, ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও অসংখ্য মানুষের কথা। তাদের আত্মত্যাগ ও রক্তভেজা মুক্তিযুদ্ধ কখনও ভুলবার নয়। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যার জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারতাম না। তিনি বাঙালি জাতির ললাটে এনে দিয়েছেন স্বপ্নের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে সকল দিক থেকে অর্থবহ করে তোলার মাধ্যমেই আমরা তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা দেখাতে পারি। আজ থেকে বিশ বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় ছিল। আজকে এমন একটা অবস্থানে আমরা এসেছি যার পিছনে সব অবদান রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের অনন্য শিখরে পৌঁছে গিয়েছে। আজ থেকে বিশ বছর আগে আমরা প্রবাসীরা এই দেশে অন্যদের কাছে খুবই নিরীহ অবস্থানে থাকতাম, কিন্তু আজকে প্রেক্ষাপট পাল্টে গিয়েছে। আজকে আমরা উঁচু গলায় কথা বলতে পারছি, বুক ভরা গর্ব নিয়ে কথা বলতে পারছি জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে। আজকে এই বাংলাদেশে যারা ১৯৭১ এর সংবিধানের বাহিরে গিয়ে কথা বলছে, যারা ধর্মকে ইস্যু করে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে, এদের সবার রূপ কিন্তু এক। ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এবং ১৯৭৫ সালে আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করে তারা এই দেশটাকে আবার সেই পরাজিত শক্তিদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। ৭৪ এ কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরি করে দিয়েছিল এই আমেরিকা। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার নাটের গুরু ছিল। তারা এখনও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, আছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো। তখনও জাতির পিতা তাদের বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তারই কন্যা শেখ হাসিনা। কীভাবে সম্ভব পিতার শত্রু, দেশের শত্রুদের কাছে মাথানত করবে? মাথানত করেননি। নিরাশ হয়েছেন অনেকে। হাল ছাড়েননি একজন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা পরাজিত হবার নন। শেখ হাসিনা মাথা নোয়ানোর নন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার, হত্যার হুমকিসহ সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে, মাথা উঁচু করে দেশের স্বার্থকে সামনে তুলে এগিয়ে নিয়েছেন। তাদের সব ষড়যন্ত্রের আসল ফল তখনও বাস্তবায়ন হয়নি এখনো সম্ভব হচ্ছে না বা হবে না যত দিন না বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন, যত দিন না বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া আওয়ামী লীগ টিকে আছে।