প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:০৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা এসব গোষ্ঠীকে হুঁশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্মের নামে সমাজে কোনো বিভেদ-বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। ৭১-এর পরাজিত শক্তি মিথ্যা, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টিই তাদের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এ কথা বলেন সরকার প্রধান।
রাত পোহালেই বিজয় উৎসব; পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে বাঙ্গালির মুক্তি প্রাপ্তির দিন। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা নিয়ে এক নতুন সন্ধিক্ষণে পা রাখবে ৫০ বছর বয়সী সার্বভৌম বাংলাদেশ। গৌরব জড়ানো এই বিজয় উৎসবের আগের সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ নিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে উঠে এলো বাঙ্গালির ত্যাগের ইতিহাস, গণতান্ত্রিক যাত্রাপথ, আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাসহ করোনা মহামারী পরিস্থিতি। ভাষণে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অবদান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রুকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। ১৯৭১’র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে মাঠে নেমেছে।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে মাঠে নামা একদল মুসল্লিদের নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। সাফ জানিয়ে দেন, ধর্ম নিয়ে সমাজে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে দেয়া হবে না কাউকেই।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বলেছিলেন, ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে। কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করেই এই অপশক্তি সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা শুধু একজন খাঁটি মুসলমানই ছিলেন না, তিনি ধর্মীয় আচারাদি নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালন করতেন। তিনি যখন সংবিধান রচনা করেন, তখন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র- এই চারটি মৌলিক বিষয়কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৭৫-পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিজেদের আসন চিরস্থায়ী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সামরিক জান্তা সঙ্গীনের খোঁচায় সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ধারাবাহিক অপপ্রচার চালিয়ে, ইতিহাস বিকৃত করে, আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কালিমা লেপনের চেষ্টা করে।’
সরকার প্রধান বলেন, প্রাণঘাতী ভাইরাসের ছোবল সত্যেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছরটি শুধু আমাদের জন্যই নয়, বিশ্ববাসীর জন্য এক দুর্যোগময় বছর। বিশ্ব অর্থনীতি এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। করোনাভাইরাসের মহামারির ফলে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশে আমরা সময়োচিত পদক্ষেপ এবং কর্মসূচি গ্রহণ করে এই নেতিবাচক অভিঘাত কিছুটা হলেও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২.৫ কোটি প্রান্তিক মানুষকে নগদসহ নানা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রফতানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরে ৫.২৪ শতাংশ হারে আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ বলছে ২০২০ সালে বাংলাদেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।’