প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৪ পিএম আপডেট: ১৫.১২.২০২০ ১২:৫৬ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাধীনতার
স্বপক্ষের শক্তিকে আরও শক্তিশালী করে মৌলবাদীদের ভীত সমাজের শেকড় থেকে
উপড়ে ফেলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল সোমবার একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির
প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা
নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। এসময় একাত্তরের
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ২৬ মার্চ প্রকাশ
করা হবে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, জিয়া, এরশাদ ও
খালেদা সরকারে থাকা অবস্থায় নিজেদের স্বার্থে মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে
রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করেছে। তাই আমাদের সমাজে মৌলবাদীদের প্রভাব অনেক
গভীরে। এক কথায় এদের সমূলে উৎখাত করা প্রায় অসম্ভব হলেও বাঙালি জাতিকে
ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ভ-ামী ও অসত্য দাবিগুলোকে খ-ন করা। তাহলেই তারা আর মাথা
চারা দিতে পারবে না।
মন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে
হত্যার পর প্রায় ৩০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার জন্য মৌলবাদের সাহায্য
সহযোগিতা করেছে। তাই এদের চিন্তাচেতনা পরিবর্তন করতে হলে সময় নিয়ে
পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। মোজাম্মেল হক জানান, ‘স্বাধীনতার পর
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গড়ে তোলার কাজ চলছে। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, গণতন্ত্র,
সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে বাঙালিরা এগিয়ে চলেছে। আর আমাদের দেশে
ওই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে সামনে নিয়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ
করেছিলাম।’ তবে সব চেয়ে আফসুসের বিষয় ৭৫’ এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপিরবারে হত্যার
পর বাংলাদেশ যে দীর্ঘ সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে
তা ছিল দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিন্তার বিপরীতে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে আবার যখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকে
মৌলবাদী ভ্রান্ত চিন্তা চেতনা থেকে বেরি আসতে বারবার তাদেরকে সতর্ক করা
হয়েছে। তারপরও তারা নানা সময়ে অরাজনৈতিক দলের কথা বলে দেশে অস্থিতিশীল করার
চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের দিক
নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য। তাই আমরা কোনো
পর্যায়েই ওদের বিরুদ্ধে আইন হাতে তুলে নিইনি। আমাদের চিন্তা-চেতনা দিয়ে,
মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিতে উজ্জীবিত হয়েই রাজনৈতিকভাবে এই বিষফোঁড়া উপড়ে
ফেলার জন্য ঐক্যবদ্ধ আছি।’
সাংবাদিকরা রাজাকারদের তালিকা প্রসঙ্গে
প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আগে রাজাকারদের তালিকা করা ছিল আমাদের নৈতিক
দায়িত্ব, আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। গত দুই সপ্তাহ আগে মন্ত্রিসভায় জাতীয়
মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের সংশোধন করে রাজাকারদের তালিকা করার বিষয়টি
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে।’ জাতীয় সংসদে আগামী অধিবেশনেই সংশোধিত ওই আইন
পাস হয়ে যাবে বলে মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ
করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী সরাসরি কিছু না বললেও তিনি জানান,
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসকল বিষয় জানেন। তিনি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা যায় না।
এরপর তিনি বলেন, তবে আইন হোক বা না হোক, আমরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে ঘৃণা
করি, প্রত্যাখ্যান করি ও এর বিরোধিতা করি।’
স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ
বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে
মন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বুদ্ধিজীবী
পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন তাদের
নামের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আগামী ২৬ মার্চ প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, ‘গতকাল
১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে আমরা এক হাজার দুইশ’ ২২ জন বুদ্ধিজীবীর
নাম তালিকা প্রকাশ করেছি। আরও যেসব শহীদ এরবাইরে বাদ পড়েছে তাদের নাম খতিয়ে
দেখা হচ্ছে। বাদপড়াদের নিয়ে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকা আগামী ২৬ মার্চ প্রকাশ
করা হবে। মন্ত্রী বলেন, সারাদেশ থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস সংগ্রহ
করছি। এ মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে এক হাজার দুইশ’ ২২ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামের
তালিকা প্রকাশ করা হবে। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ
কে আবদুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন,
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম,
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক নৌমন্ত্রী
শাজাহান খান তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।