পদ্মা সেতু সরকারের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, জনগণের টেক্সে নির্মিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এই সেতু নির্মাণের ব্যয় মানুষের কষ্টার্জিত পকেটের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে। বরং যেখানে এক টাকা ট্যাক্স দিতে হতো সেখানে আপনারা ১০ টাকা ট্যাক্স নিচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন ‘মনে হয় যে তারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দিয়ে তৈরি করেছে। একজন তো বলছে, বিএনপি ওপর দিয়ে যাবে না নিচ দিয়ে যাবে? মানে এটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি!’ ‘বিএনপি পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাবে না নিচ দিয়ে যাবে’ তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এমন মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, এটা মানুষের পকেট কেটে কেটে কিন্তু নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি মানুষ এখানে ট্যাক্স দিচ্ছে। যেখানে এক টাকা ট্যাক্স দিতো সেখানে ১০ টাকা ট্যাক্স দিচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভ্যাটের পরিমাণ তিন/চার/পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা যারা ব্যাংকে টাকা রাখতো, তারা বলছে এখন আর পারছি না। এখন আর সংসার চলছে না। এটা হলো বাস্তবতা। আপনারা গভীরভাবে দেখবেন। এখানে যেটা চলছে সেটা হলো উন্নয়নের নামে পুরোপুরিভাবে একটা লুটপাট। প্রত্যেকটা জায়গায় তারা এখন মুনাফা খোঁজে। বাড়িঘর বানাচ্ছে উড়াল সেতু বানাচ্ছে, মেগা প্রজেক্ট বানাচ্ছে। মেগা লুট করছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আমরা সবসময় উন্নয়নের পক্ষে, আমাদের দলই হচ্ছে উন্নয়নের পক্ষে, সৃজনশীলতার পক্ষে। আমরা কখনোই কোনো নেগেটিভ রাজনীতি করি না। আমরা পজেটিভ পলিটিক্স করি। আমরা সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে চাই, আমরা সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে চাই। সেটা বলতে গেলেই তাদের গায়ের মধ্যে জ্বালা ধরে যায়।’ পদ্মা সেতু বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশের উন্নয়ন শুরুই হয়েছে বিএনপির সময়ে। উন্নয়ন বলতে গুটিকয়েক মানুষের উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন বলতে সাধারণ জনগণের উন্নয়ন। উন্নয়নের ভিত্তি জিয়াউর রহমানের সময় শুরু হয়েছিল, সেই ভিত্তির ওপরেই এখন উন্নয়ন হচ্ছে। আজকে যে রেমিটেন্স আসছে, গার্মেন্ট শিল্প, কৃষি বিপ্লব সবই জিয়াউর রহমানের সময় শুরু হয়েছিল। ’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থা ভয়াবহ, সরকারি হাসপাতালে গেলে দেখবেন কোনো রকমের চিকিৎসার সুযোগ নেই। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন না হলে পাবেন না। শিক্ষার অবস্থা কোথায় দাঁড়িয়েছে সেটা সবাই জানেন। দুর্নীতি কী হারে বেড়েছে। এখন তাদের দলের লোকেরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছে। যুবলীগ-ছাত্রলীগ যে হারে টাকা পাচার করেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের কানাডা-মালয়েশিয়ায় বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে টাকা পাচার হচ্ছে। তার সঙ্গে আমলারাও জড়িত। কিন্তু প্রকাশ হচ্ছে না। আজকে কোন সেক্টরটা ভালো আছে?’ ‘আজকে যে বিদেশ থেকে যে রেমিটেন্স আসছে, এই রেমিটেন্স শুরুর প্রক্রিয়াটা জিয়াউর রহমান সাহেবের সময় থেকে। আজকে যে গার্মেন্টেসের ওপর ভিত্তি করে যেটা দাঁড়িয়েছে সেটাও পুরোপুরি ভিত্তি হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে। কৃষিতে যে বিপ্লব ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের আমলে যে দুর্ভিক্ষ সেটাকে পাশ কাটিয়ে উঠে ১৯৭৬ সালের মধ্যে কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জন করা যেটাও জিয়াউর রহমানের সাহেবের সময়ে। তাই আজকে কোন একটা ব্রিজ তৈরি হওয়া, কোনো একটা রাস্তায় তৈরি হওয়া-এটাকে আমরা মনে করি যে, দিস ইজ নট, উন্নয়ন নিঃসন্দেহে। উন্নয়ন হচ্ছে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার কতটুকু পরিবর্তন হল-এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই উন্নয়নের পক্ষে। আমাদের দলই হলো উন্নয়নের দল, সৃজনশীলতার দল। আমরা কখনও কোনো নেগেটিভ রাজনীতি করি না। ভাস্কর্য নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন দুটো। একটা হচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা, করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা, যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসা করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। ’