শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর
উপায়ান্তর না দেখে আত্মসমর্পণের পথে এগোতে থাকে পাকবাহিনী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ পিএম আপডেট: ১৫.১২.২০২০ ১:৫৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয় মাসের এই ১৫তম দিনে পাকবাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় হয়ে উঠেছিল সময়ের ব্যাপার। যুদ্ধ চালানোর মতো সামর্থ্যহীনতার সাথে সাথে দ্রুত ভেঙে পড়ছিল মনোবলও। মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার প্রচ- ভয়ও ছিল তাদের। ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়াজির কাছে বার্তা পাঠানোর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল সেদিন। সকাল ১০টায় প্রেরিত এক বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা আশ্বাসের ওপর বেঁচে আছি। আমাদের কোনো মিসাইল নেই, আমরা কীভাবে গোলা নিক্ষেপ করব? কোনো বিমানবাহিনী নেই। বিমান হামলা হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তার কারণ।’ আরেক বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা সভা করতে যাচ্ছি গভর্নর হাউসে।’ কিন্তু পাকবাহিনীর সে সভা প- হয়ে যায় যৌথবাহিনীর বিমান হামলায়। গভর্নর ড. মালিক হোটেল বিমান হামলার ভয়ে ইন্টারকন্টিনেটালে আত্মগোপন করার পর সরকারবিহীন পূর্ব পাকিস্তানের বাতাসে চাউর হচ্ছিল আত্মসমর্পণের আভাস। অবরুদ্ধ ঢাকাবাসী চিন্তিত হয় কি ঘটবে তা নিয়ে-  আত্মসমর্পণ না চূড়ান্ত যুদ্ধ? পাকদোসররা তখন গুপ্তহত্যা চালাতে এদেশের কীর্তিমান সন্তানদের উপর। দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে লাশ ফেলে যায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ঢাকাবাসী তখনো জানে না তাদের ভাগ্যে কি ঘটছে। কি চলছে সেনাসদরে? এ সময় ঢাকাস্থ জাতিসংঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক কর্মকর্তা জন কেলি জানান, গভর্নর মালিক প্রেসিডেন্টের বার্তা মোতাবেক যুদ্ধ বন্ধ করতে চান, কিন্তু নিয়াজির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এজন্যে গভর্নর সাহায্য চান পাকসেনা অফিসার কর্নেল গফুরের কাছে। গফুর গভর্নরকে নিয়াজির সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মেজর জেনারেল ফারমান আলী গভর্নর এ এম মালিকের সঙ্গে মিলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দাঁড় করিয়ে চলে যান ইস্টার্ন কম্যান্ডে। তারপরও জেনারেল নিয়াজি চাইছিলেন রাওয়ালপিন্ডি থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ আসুক আত্মসমর্পণের জন্য। এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পোল্যান্ড পেশ করে নতুন প্রস্তাব যেখানে কেবল যুদ্ধ বন্ধই নয়, এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয় পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সমাধান হিসেবে পূর্বাংশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও শেখ মুজিবের মুক্তির বিষয়টি। প্রস্তাবের দ্বিমত জানান পাকিস্তানি প্রতিনিধি জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যান পরিষদ কক্ষ থেকে। এরই মধ্যে নিয়াজি যুদ্ধ বন্ধের বার্তা দেয় ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেল স্পিভাকের হাতে। যাতে সে ভারতীয় হাইকম্যান্ডে পৌঁছে দেয়। কিন্তু স্পিভাক সেটা সরাসরি দিল্লি না পাঠিয়ে প্রেরণ করেন ওয়াশিংটনে।

সেখান থেকে মার্কিন প্রশাসন বার্তাটি পাঠিয়ে দেয় দিল্লিতে। ভারতীয় বাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল ম্যানকশ জবাবে নিয়াজি প্রদত্ত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে জানান, ‘যেহেতু আপনি যুদ্ধ আর না চালানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, তাই আমি আশা করি, আপনি বাংলাদেশে আপনার কম্যান্ডের অধীন সব বাহিনীকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং যারা যেখানে আছে তাদের আমার অগ্রসরমাণ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশ দেবেন। তবে আমি যা বললাম তা যদি আপনি মান্য না করেন সে ক্ষেত্রে আমার আর অন্য কিছু করবার থাকবে না, ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯.০০ ঘটিকা থেকে সর্বশক্তি নিয়ে আমি আবার আক্রমণ শুরু করব।’ ওদিকে, মার্কিন ৭ম নৌবহরকে মোকাবিলা করবার জন্য সোভিয়েত রণতরীর ২০টি জাহাজ অবস্থান গ্রহণ করে ভারত মহাসাগরে। থমকে যায় বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে যাওয়া মার্কিন সপ্তম নৌবহরের আটটি যুদ্ধজাহাজও। ইতোমধ্যে যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও করায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে অবরুদ্ধ ঢাকা। ঢাকার বাসাবোতে ‘এস ফোর্সে’র মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর। জয়দেবপুরেও ব্যাপক আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। টঙ্গী, ডেমরা, গোদনাইল ও নারায়ণগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় পাকবাহিনী।

সাভার পেরিয়ে গাবতলীর কাছাকাছি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট। ভারতীয় ফৌজের একটি প্যারাট্রুপার দল পাঠিয়ে পরখ করে নেওয়া হয় ঢাকার মিরপুর ব্রিজের পাকবাহিনীর ডিফেন্স লাইন। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায় চট্টগ্রাম শহরের ভাটিয়ারীতে। সারারাত যুদ্ধ চলে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে ভাটিয়ারি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায়। শত্রুমুক্ত হয় বগুড়া জেলা ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জামায়াতে ইসলামী, পিডিপি, নেজামী ইসলামীর নেতাকর্মীদের অনেকেই আবার এদের কেউ কেউ করে আত্মগোপন। দি গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায়- ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনীকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা মুক্ত বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। দেশের ভেতর বাড়ি-ঘর থেকে বিতাড়িত লোকজনও বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করেছে।

তথ্যসূত্রঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, মূলধারা’৭১, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]