ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ পিএম আপডেট: ১৫.১২.২০২০ ১:৫৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর সরকার একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সেটা হলো সরকার প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২২২ শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা তৈরি করেছে এবং এ তালিকাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। আগামীতে আরো বুদ্ধিজীবীকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলবে বলে আশা করা যায়। দেশের যেসব মেধাবী সন্তান একাত্তরের বর্বর পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর সহযোগী ঘাতক জামায়াত-শিবির-আলবদরের হাতে বিজয় দিবসের আগে মর্মান্তিক হত্যার শিকার হয়েছিলেন; তাদের একটি পুরিপূর্ণ নির্ভুল তালিকা হওয়া জরুরি। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের জন্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং এও বলা প্রয়োজন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের এ যাবতকাল পর্যন্ত যথার্থ মূল্যায়ন হয়েছে এই আত্মতুষ্টিলাভের কোনো সুযোগ নেই। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার অর্জনের পথে তারাও একাত্ম হয়ে কাজ করে গেছেন। তাদেরকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তাদের অবদানের চালচিত্র আরও জীবন্ত করে তোলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের পাশাপাশি দেশের জন্য তাদের অবদানকে নিয়ে কর্মকা- চালানোটা জরুরি। শহীদ বুদ্ধিজীবীর যে তালিকা সরকার প্রকাশ করেছে, এর সঙ্গে আগামীতে আরো শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম সংযুক্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। হতে পারে যে এমন শহীদ বুদ্ধিজীবী রয়েছে, যার ব্যাপারে জাতি এখনো তেমন কিছুই জানে না। সঠিকভাবে অনুসন্ধান চালালে তা বের হয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।
গতকাল সোমবার গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জনের একটি তালিকা করেছে সরকার। চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে গঠিত কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষকে সভাপতি করে গঠিত ১১ সদস্যের এ কমিটির প্রথম সভায় এক হাজার ২২২ ওই তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এদিকে বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা কি হবে তা নিয়ে কথা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী কারা, তার সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য আমাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ঐকমত্য হয়েছে, আগামী সভায় এটা লিখিত আকারে উপস্থাপিত হয়ে অনুমোদিত হবে। আউটলাইন ঠিক হয়েছে, কারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
সরকারের এ পদক্ষেপ প্রশংসা যোগ্য। বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা ঠিক করে অতঃপর শহীদ বুদ্ধিজীবী চিহ্নিত করা সহজ হবে। মহান স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ ও অগণিত মা-বোন সম্ভ্রম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেক শহীদ বুদ্ধিজীবী জীবদ্দশায় খুবই সুপরিচিত ছিলেন। জীবদ্দশাতেই প্রখর মেধাবী ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার এমনও হতে পারে দেশের কোনো প্রত্যান্ত এলাকায় নিভৃতে জ্ঞান চর্চা করেছেন, মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো বিতরণে নিয়োজিত ছিলেন। বাঙালি সংস্কৃতির এক নিষ্ট সেবক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ঘাতক জামায়াতের বুলেটে মৃত্যু হয়েছে।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন, শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রণয়ন করে উৎকৃষ্ট একটি কাজ সরকার তুলে ধরেছে। অবশ্য জানা গেছে, ১৯৭২ সালে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৭০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা হয়েছিল। পরে ডাক বিভাগ ১৫২ জন শহীদের ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়। আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, শহীদ বুদ্ধিজীবীকে বাঙালি জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা ও দেশের জন্য তাদের অবদানকে উচ্চে তুলে ধরতে হবে। এটা করে হয়তো তাদের ঋণ শোধ করা যাবে না। তবে নতুন প্রজন্ম বিস্তারিতভাবে জানতে চায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কথা। কারণ এরাই ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান তাদেরকে চিনে রাখা অনেক জরুরি, বিধায় সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।