শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড: পলাতক দুই আলবদর নেতা মাঈনুদ্দিন-আশরাফুজ্জামানকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক দুই আলবদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ১৮ বুুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ফাঁসির আসামি তারা। দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিদেশে অবস্থান করেও স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী এই দুই আলবদর নেতা। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান খান অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দিন আছে যুক্তরাজ্যে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিনের অনুপস্থিতিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তাদের। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচেছ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সরকার বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে অনেক আগে থেকেই জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। আর যারা বিদেশে পলাতক আছে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামী তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় আশরাফ-মাঈনুদ্দিনকে। তারা দুজনে ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কীভাবে আলবদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলে, তা উঠে এসেছে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের রায়ে।

আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন সেই হত্যাকাণ্ডের ‘চিফ এক্সিকিউটর’। আর চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ছিল সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।

কে এই চৌধুরী মাঈনুদ্দিন

চৌধুরী মাঈনুদ্দিনের জন্ম ১৯৪৮ সালের নবেম্বরে, ফেনীর দাগনভূঞা থানার চানপুর গ্রামে। তার বাবার নাম দেলোয়ার হোসাইন। একাত্তরে মাঈনুদ্দিন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র। দৈনিক পূর্বদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসাবেও তিনি কাজ করেছে। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে মাঈনুদ্দিন ছিল জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের একজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্য। সেই হিসাবে পাকিস্তানী হানাদারদের সহযোগিতার জন্য গড়ে তোলা আলবদর বাহিনীতেও তাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দায়িত্ব দেয়া হয়। যুদ্ধের শেষভাগে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নেতৃত্বে ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাঈনুদ্দিন পালিয়ে চলে যায় পাকিস্তানে । সেখান থেকে যান যুক্তরাজ্যে। এখন পর্যন্ত লন্ডনেই অবস্থান করছে। লন্ডনে জামায়াতের সংগঠন দাওয়াতুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক দাওয়াতের বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছে। মাঈনুদ্দিন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের একজন পরিচালক, মুসলিম এইডের ট্রাস্টি এবং টটেনহ্যাম মসজিদ পর্যদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছে। একাত্তরে ‘পাকিস্তানে অখণ্ডতার’ পক্ষে থাকার কথা নিজের ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতিতে স্বীকারও করেছে মাঈনুদ্দিন।

আশরাজ্জামান খানের পরিচয়

আশরাজ্জামান খানের জন্ম ১৯৪৮ সালে, গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের চিলেরপাড় গ্রামে। বাবার নাম আজহার আলী খান। ১৯৬৭ সালে সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর আশরাফুজ্জামান ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগে। ওই বিভিগ থেকেই ১৯৭০ সালে স্নাতক ডিগ্রী পায় ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুজ্জামান। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা আল বদর বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব আশরাফুজ্জামানের ওপর বর্তায়। বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং বাস্তবায়নকারী নেতা হিসাবেও তাকে অভিযুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পালিয়ে পাকিস্তনে চলে যান এবং কিছুদিন রেডিও পাকিস্তানে কাজ করে। পরে সেখান থেকে চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে আশরাজ্জামান খানের ঠিকানা নিউইয়র্কের জ্যামাইকা। ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকার সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে আশরাফ।

জিয়া ও এরশাদের আমল

জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মাঈনুদ্দিনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়া হয়। এই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে। বলা হয়েছে, এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো বলে উল্লেখ করা হয় রায়ের পর্যবেক্ষণে।

পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই। এজন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানকে ফিরিয়ে আনতে আইনী জটিলতার অন্যতম বাধা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ কিংবা পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশ-ই যে কোন বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে একটি অবস্থানে এসে পৌঁছেছে এবং এই অবস্থানের কারণে চৌধুরী মাঈনুদ্দিনকে বাংলাদেশে ফেরত নেবার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামানের ক্ষেত্রেও আইন যুক্তরাজ্যের মতোই বলা যায় এক রকম। এ যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি যুক্তরাজ্য থেকে কম। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আশরাফুজ্জামানের ক্ষেত্রে অবস্থানটাও কিছুটা পরিষ্কার হতে পারে কূটনৈতিক তৎপরতায়, যেমনটায় বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মহিউদ্দিন আহম্মেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছিল। তবে আন্তঃদেশীয় উষ্ণ সম্পর্ক, কূটনৈতিকভাবে ভাল যোগাযোগ, এপ্রোচ কিংবা রাজনৈতিক কিংবা ভূ-রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নানা কৌশলের মাধ্যমেও এ ধরনের আপাতদৃষ্টিতে জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।

সূত্র: জনকন্ঠ 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]