শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বন্দর গ্রাম গণহত্যা, চট্টগ্রাম
প্রাণ বাঁচাতে বন্দিরা সজোরে কালিমা পড়ছিল আর পাকসেনারা চালিয়ে ছিল গুলি
আরিফ রহমান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৪২ এএম | অনলাইন সংস্করণ

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ২০ মে ভোর চারটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত প্রায় ২২৮ জন বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে চট্টগ্রাম জেলার বন্দর গ্রাম এলাকায় হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। এখানে রচিত হয় ইতিহাসের বর্বরতম এক অধ্যায়ের। মূলত ২৫ মার্চের পর থেকেই চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর থেকে প্রাণভয়ে শত শত নারী পুরুষ কর্ণফুলীর বিপরীত তীরবর্তী এই বন্দর গ্রামে আশ্রয় নিতে শুরু করে। আশ্রয়প্রার্থীদের বন্দর গ্রামে এভাবে আশ্রয় গ্রহণই কাল হয়ে দাঁড়ায় গ্রামবাসীর জন্য। স্থানীয় রাজাকাররা এ সুযোগকে কাজে লাগায়। বন্দর গ্রামে অবস্থিত মেরিন একাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তারা অভিযোগ করে শহর থেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিপুলসংখ্যক লোক এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় যুবকরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিচ্ছে। এমনই সংবাদ পাওয়ার পর চট্টগ্রামের পাকিস্তানি প্রশাসন ওই গ্রামের প্রতি কড়া নজর রাখতে শুরু করে। ওইদিন ফজরের আজান পড়ার আধাঘণ্টা আগে অপারেশন শুরু করে তারা। কয়েকভাগে বিভক্ত পাঁচ শতাধিক সেনা ও স্থানীয় দালালরা হিন্দুপাড়া থেকে যাকে পেয়েছে ধরে নিয়ে জড়ো করছে বন্দর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। পুরো বন্দর গ্রাম ঘেরাও করে রাখা হয়েছে, কারো পালাবার পথ নেই। আজানের সাথে সাথে শুরু হল ব্যাপকহারে ধরপাকড়, মা-বোনদের নির্যাতন আর লুটপাট। 

গণহত্যার শিকার হন রুহিনী সেন। তিনি ছিলেন পরিচয়পত্রধারী চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মচারী। গণহত্যার তা-ব দেখে পরিচয়পত্রের ভরসা না কারে ঘর থেকে পাহাড়ের ঝোপের দিকে দৌড়াতে থাকেন তিনি। পিছু ধাওয়া করে দুই পাকিস্তানি সেনা। পা পিছলে পড়ে তিনি ধৃত হন সেনাদের হাতে। তাকে আনা হয় ক্যাপ্টেন আনোয়ারের সামনে। ক্যাপ্টেন বললেন, এর তো আইডেনটিটি কার্ড আছে, তাকে মারা যাবে না। দু’সেনার জবাবÑ ‘উওলোক হারামি-হামকো বহুত হয়রান কিয়া’। মুহূর্তেই গুলি। লুটিয়ে পড়ল রুহিনী সেন। এভাবে রাত ৪ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে ৪ ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে আরও ১৫৭ জনকে জড়ো করা হয় বন্দর কমিউনিটি সেন্টারের কাছে পাহাড়ের টিলার নিচে সমতল ভূমিতে। চতুর্দিকে পাকিস্তানি সেনারা ঘেরাও করে রাখে বন্দিদের। টিলার উপরে ৪ টি মেশিনগান তাক করা হয় বন্দিদের দিকে। 

সেনা কর্মকর্তারা ওয়ারলেসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলছে। ধৃতরা বিশ্বাস করতে পারছে না এত লোককে একসাথে মারা হবে! হয়তো ছেড়েও দিতে পারে। ক্যাপ্টেন ওয়ারলেসে কথা শেষ করে সকল বন্দিকে ৪ লাইনে দাঁড় করানো শুরু করে। সকলে বুঝতে পেরেছে তাদের আর রক্ষা নেই। পাকিস্তানি সেনাদের মন গলার জন্য মুসলিম বন্দিরা সজোরে কালিমা পড়তে শুরু করেন। কিন্তু কালিমার শব্দ তাদের জীবন রক্ষা করতে পারল না। মুহূর্তে বাঁচার আকুতিতে গগন বিদারী কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে আসে। যেন কান্না নয় কোনো ঝোড়ো হাওয়া।
 
ক্যাপ্টেনের নির্দেশে গুলি ছুঁড়ছে সৈন্যরা। মুহূর্তেই শত শত গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ১৫৬ জন গ্রামবাসী। যারা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তানি সেনারা একে একে সবাইকে পেটে বেয়নেট ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করছিল। গণহত্যা থেকে একমাত্র বেঁচে যান কালু সিংহ। 

একই সময়ে নিকটবর্তী গোয়ালপাড়ায় জড়ো করা ৩৪ জনকেও একই কায়দায় গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে একে একে হত্যা করা হয়। সতীশ মহাজনের বাড়িতে ৯ জন এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরও ১৩ জনসহ সেদিন এ গ্রামে ২২৮ জন নিরীহ গ্রামবাসী ও আশ্রিত মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার ও এদেশীয় দোসররা। সেদিন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল এই গ্রাম। এ গণহত্যার দৃশ্য যারা দেখেছে তারা আজও ভুলতে পারেনি লোমহর্ষক এ গণহত্যার তাণ্ডব।

শত শত লাশ পড়ে ছিল খোলা আকাশের নিচে। ঝাঁকে ঝাঁকে শিয়াল কুকুর হামলে পড়ে লাশ ভক্ষণে। বহুদূর থেকে ঝাঁক বেঁধে উড়ে এসেছে শকুনের দল। কয়েকদিন যেতে না যেতেই পচন ধরে সেইসব লাশে। বীভৎস গন্ধে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সেইসব লাশ মাটিতে পুঁতে রাখবে- সেই মানুষও পাওয়া যায়নি গ্রামে। পাক সেনাদের ভয়ে বন্দর গ্রামের দিকে মানুষ হাঁটেনি অনেকদিন। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]