শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে রেকর্ডকৃত একটি সরকারি রাস্তার প্রায় ২০০ ফুট জায়গা দখল করে পাকা ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে রাখায় এলাকাবাসীর চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে। গত প্রায় ২৫ বছর যাবত শ্যামসিদ্ধির কয়কীর্ত্তণের বটতলা গ্রামের বাসিন্দা প্রভাবশালী মো. খলিলুর রহমান গংদের বিরুদ্ধে এই সরকারি রাস্তা দখলের অভিযোগ উঠেছে। দখলমুক্ত না হওয়ার কারণে রাস্তা নির্মাণে একাধিকবার সরকারি বরাদ্দ আসলেও আর রাস্তা নির্মাণ কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এতে করে হাজারো মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বটতলার বাসিন্দা মো. শাহিন নামে এক ব্যক্তি রাস্তার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে দখলকারীরা হুমকি প্রদান করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় শ্রীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে ওই ভূক্তভোগী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামসিদ্ধি এলাকার শ্রীনগর-দোহার আন্ত:সড়ক সংলগ্ন সড়কের দক্ষিন পাশে মে:া খলিলুর রহমান ও তার চাচাত ভাই নুরুল ইসলামের বসতবাড়ি থেকে দেওয়ান বাড়ি পর্যন্ত প্রায় সোয়া কিলোমিটার রেকর্ডের রাস্তাটির খলিলুর রহমানের বাড়ির পশ্চিম পাশে অথাৎ দক্ষিন-উত্তর মুখী অবস্থিত সরকারি রাস্তাটির ওপর পাকা ভবন ও প্রাচীর নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও নিচু ওই রাস্তাটির প্রায় ২০০ ফুট জায়গা বালু ভরাট করেন দখলকারীরা। এতে করে স্থানীয়দের চলাচলে বিঘœ ঘটছে। দেখা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে বছরের এসময়েও নিচু রাস্তার কোথাও কোথাও বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপার হচ্ছেন বৃদ্ধসহ শিশুরা। জানা যায়, এনিয়ে প্রতিবাদ করলে খলিলুর রহমানের পুত্র মো. রানা (৪০) একই গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহিনকে ফোনে হুমকি ধমকি প্রদান করে। এছাড়াও রানার পক্ষে বেজগাঁও এলাকার মুন্না হোসেন টুটুলসহ (৩৫) ৭/৮ নিয়ে শাহিনের বাড়িতে গিয়ে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে আসে। এঘটনায় শাহিন শ্রীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। এছাড়াও শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন।
এ সময় স্থানীয় সাবেক শিক্ষক আব্দুল খালেক মাস্টার (৬০), মুন্নি বেগম (৪০), সুরাইয়া খানম (৪৫), বিপ্লব হোসেন (৪৭), নুরু জামান (৫০), আব্দুল রফিক (৬০),আব্দুল কাশেম মৃধা (৭২) সহ অনেকেই বলেন, গত ২৫ বছর যাবত এলাকার প্রভাবশালী খলিলুর রহমান গং রাস্তাটির ওই অংশ দখল করে রাখছেন। একাধিক বার ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি বরাদ্দ আসলেও তাদের কারণে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়নি। রাস্তার বিষয়ে কথা বললে, টুটুলসহ ৭/৮ জনের একটি গ্রুপ ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী শাহিনের বাড়িতে এসে হুমকি প্রদান করে বলে জানান তারা।
মো. শাহিন বলেন, খলিলুর রহমানে ছেলে রানা আমাকে ফোনে হুমকি দেয়। পরে তার বন্ধু টুটুল লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে এসেও দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করার পাশাপাশি রাস্তার সংক্রান্ত বিষয়ে ইউএনও স্যারের কাছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আবেদন করেছি। অভিযুক্ত টুটুলের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রানা ভাইয়ের সাথে শাহিনের ফোনে কথা কাটাকাটির বিষয়ে জানতে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। কোনও হুমকি প্রদান করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে কথা বললেই জানতে পারবেন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।
দখলকারী নুরুল ইসলামের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তার বিষয়ে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা চলছে। যদি সমাধান না হয় তাহলে রাস্তা ছেড়ে দেবো। মো.খলিলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিতো মানুষের চলাচলের জায়গা তৈরী করে দিয়েছি। তার পরেও আমার দখলে থাকা সরকারি রাস্তা থাকলে আমিন দিয়ে মেপে ছেড়ে দিবো। শাহিনকে হুমকি প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে গালমন্দ করার কারণে (আমার পুত্র) রানা জানতে শাহিনের কাছে ফোন করেছিল। টুটুল গ্রুপ শাহিনে বাড়িতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তারাও বিষয়টি জানতে ওই বাড়িতে যায়। তবে কোনও হুমকি প্রদান করা হয়নি বলে দাবী করেন তিনি।
শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রতন মিয়ার কাছে রাস্তাটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রাস্তাটি নির্মাণ কাজের জন্য সর্বশেষ মনে হয় ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। ঝামেলার কারণে টাকা ফেরত চলে গেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শ্রীনগর থানার এসআই আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। বাদী পক্ষের কাছে সিডিআর চাওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার জানান, বিষয়টি আমি অবগত আছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।