প্রকাশ: সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:২১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
একাত্তরের গণহত্যা ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অপরাধে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের নিকট রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শেষে পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ। শাহবাগে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ।
মিছিল থেকে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে পাকিস্তান দূতাবাসে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ভাস্কর শিল্পী রাশা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন, আইন বিষয়ক সম্পাদক এজেডইউ প্রিন্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ডিপ্লোমেটিক পুলিশের ডিসি আশরাফুল ইসলাম।
সমাবেশের বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, "পাকিস্তানকে অবিলম্বে গণহত্যার দায় স্বীকার করে বাংলাদেশের নিকট রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দূতাবাস এখনো ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। পাকিস্তান দূতাবাসের কার্যক্রমে নজরদারি বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।"
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, "পাকিস্তানকে একাত্তরের গণহত্যা ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের অপরাধে দ্রুত ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় গণহত্যার অপরাধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবো। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমরা এদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবো।"
সমাবেশে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "আজ ১৪ ডিসেম্বর: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙ্গালি জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্টদায়ক দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিলো জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানদের। প্রতিথযশা লেখক, কবি, সাহিত্যক, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিজ্ঞানীদের কে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানি জান্তারা যখন বুঝতে পেরেছিল যে, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হতে যাচ্ছে ঠিক তখনই জাতিকে মেধা শূন্য করার জন্য এদেশীয় রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের সহযোগিতায় হত্যা করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা দিয়ে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত ত্রিশ লক্ষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী বাহিনী। এদের দ্বারা দুই লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিল। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানী দোসররা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। লাল-সবুজের পতাকা আবারও খামচে ধরতে চায় পুরনো শকুনেরা। সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুরের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত দিয়েছে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি পাকিস্তানের দোসর মামুনুল-ফয়জুল গংরা। বিজয়ের মাসে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তিদের আবারও পরাজিত করতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধুর অবমাননার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে অবমাননা করা হয়েছে। পাকিস্তানী দোসররা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘনকারী ও জাতির পিতার অবমাননাকারী ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল-ফয়জুল গংদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে একাত্তরের গণহত্যার দায় স্বীকার করেনি। এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। একাত্তরের গণহত্যা, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি একই সূত্রে গাঁথা। পাকিস্তানকে অবশ্যই এসব নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বাংলাদেশের নিকট রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। পাকিস্তান দ্রুত ক্ষমা না চাইলে বাংলাদেশ সরকারকে পাকিস্তানের সাথে সকল ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হব। অন্যথায় সমগ্র দেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।"