#দেশের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই: অধ্যাপিকা অপু উকিল।
#পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের খুঁজে বের করে দেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে: বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুম মিয়া।
#বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংবিধান ছিল আধুনিক ও সময়োপযোগী সংবিধান: মনিরুজ্জামান মনির।
পদ্মা সেতু শুধু রড, সিমেন্ট ও পাথরের সেতু নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৬ কোটি মানুষের আবেগ। এই আবেগ, এই স্বপ্ন আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্ত জুড়ে দাঁড়িয়ে। পদ্মার তীর থেকে দেখা যাচ্ছে পিলারের দীর্ঘ সারি। তার উপর একে একে বসানো হচ্ছে ইস্পাতের কাঠামো (স্প্যান)। করোনা সংকটের মধ্যেও থেমে নেই বাংলাদেশের স্বপ্নের স্থাপনা পদ্মা সেতুর কাজ। পদ্মা সেতু একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন।
রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা অপু উকিল, জার্মান আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মাসুম মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপিকা অপু উকিল বলেন, এই বিজয়ের মাসে আমি প্রথমেই স্মরণ করতে চাই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, এবং এই বিজয় দিবস পাওয়ার জন্য যেসব বীর বাঙালি জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি ও দুই লক্ষ মা-বোনদের প্রতি যাদের আত্মত্যাগে আমরা এই স্বাধীন বাংলা পেয়েছি। কিছু ঘণ্টা পরেই আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস তাই তাদের প্রতিও আমি সম্মান জানাচ্ছি। পদ্মা সেতুর কারণে সমগ্র বাংলাদেশ কয়েকদিন ধরে বিজয় উল্লাসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং করোনা ভাইরাসের মহামারী যদি না থাকতো এখন তাহলে সমগ্র বাংলাদেশ বাধ ভাঙ্গা উদযাপন করতো। তারপরেও আমরা দেখেছি এই বিজয়কে সামনে রেখে বাঙালি আগামী দিনের স্বপ্ন দেখছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসীনের পরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সংবিধান সহ বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্নকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে সামরিক আইন জারি করে দেশকে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে পরিচালনা করতে লাগলেন। জিয়াউর রহমান ১০টি বছর সামরিক শাসন জারি করে প্রতিদিন হত্যা, খুন, গুম করে এই দেশটিকে ১০টি বছর পিছিয়ে দিল। একাত্তরের যে পরাজিত শক্তি জীবিত ছিল তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানকে নিজের ইচ্ছা মত কেটে ছিঁড়ে সামরিক ফরমান দিয়ে সেখান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হলো। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু মূল নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এর মূলে ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্ম ভিত্তিক দল গুলো যারা ধর্মের নাম দিয়ে রাজনীতি করে তাদেরকে ১৯৭২ সালের সংবিধানে নিষিদ্ধ করেছিল কিন্তু জিয়াউর রহমান সে সংবিধানকে পাল্টিয়ে সে সব ধর্মভিত্তিক দল গুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিল। অর্থাৎ যে দল গুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল, বাংলাদেশকে সেই হানাদার বাহিনীদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল সেই আলবদর, আল শামস, জামায়াত-শিবিরদের হাতে রাজনীতি তুলে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙালি জাতিকে এখনো পাকিস্তানের গোলামী করতে হতো। ৭১ এ যারা পরাজিত হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের শত্রু। এসব শত্রুদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের যে শোষণ করেছে বঙ্গবন্ধু তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে দেশের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে আমাদের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মাসুম মিয়া বলেন, আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ভোরের পাতাকে আজকে এতো সুন্দর একটি সংলাপে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। বিশ্ব নেতৃত্বে শেখ হাসিনা এখন একটি অনুকরণীয় নাম। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে দুর্যোগ দুর্বিপাক যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের গভীর আঁধার থেকে দেশের মানুষকে নতুন দিনের সূর্যালোকে নিয়ে আসতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। ওই সময়েই ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের বীজ বপন করা হয়। আজকে এই অগ্রগতির বাংলায় ফের হানা দিয়ে উঠেছে সেই পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা। বাংলাদেশের মানুষ অনেক ধর্মপরায়ণ। আমাদেরকে যা বলা হয় আমরা তাই বিশ্বাস করি। এই নিরীহও বাঙালিদেরকে পুঁজি করে এক শ্রেণির আলেম অনেক বিষয়েই নিজের মনগড়া ফতোয়া দিয়ে থাকেন। কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যাও নিজের মত করে থাকেন। আজকে বিজয় মাস ও পদ্মা বিজয় নিয়ে সারা বাংলার মানুষ অনেকে উল্লাসে মেতে পড়তো, কিন্তু তারা তা পারছে না। একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম নেতৃত্বকারী দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সেই ৭১ এর পরাজিত শত্রুদের প্রেতাত্মা ও তাদের কুসন্তানরা বাংলার বুকে বেঁচে আছে। মৌলবাদীরা বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যু নিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গণজাগরণ মঞ্চ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে তারা অবস্থান নিয়েছে। একাত্তরেও এই পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা ধর্মের দোহাই দিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে। আজকের মৌলবাদীরা তাদেরই প্রতিনিধি। যারা বাংলাদেশের পাকিস্তানি, যারা বঙ্গবন্ধুর স্থাপত্য নিয়ে কথা বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের বাংলার মাটিতে স্থান নেই। বঙ্গবন্ধুর স্থাপত্য নিয়ে কোনো পাকিস্তানি প্রেতাত্মা ষড়যন্ত্র করার আগেই ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে আমাদের।
মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে আমি দীর্ঘ কোন বক্তব্যে না গিয়ে একটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে আমরা কিভাবে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেলাম সেটা আমরা দেশের প্রতিটি ইতিহাসে পেয়েছি দেখেছি। আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় এই ইতিহাস সম্পর্কে প্রত্যেকটি স্তর সম্পর্কে আমি অবহিত আছি। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ এর প্রত্যেকটি ইতিহাসের সাথে জড়িত আছে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এই বাংলাদেশের মূল কাঠামো কি হবে, আমার বাংলাদেশের মূল নীতি কি হবে তা কিন্তু তিনি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। সমাজ তন্ত্র, গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা। এই চারটা মূল নীতিকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি হবে, বাংলাদেশের মানুষের জীবন ব্যবস্থা কি হবে, এর চিন্তা করেই তিনি ১৯৭২ সালে একটি আধুনিক সংবিধান তৈরি করেছিলেন। দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশের একটা প্রজন্মকে বিতর্কিত ইতিহাস দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছিল। বাংলাদেশিরা একমাত্র জাতি যাদের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস আছে। আজকে আমাদের অবহেলা, অসচেতনতার কারণে অন্যরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা আমাদের কাছে শক্তির জায়গা। তিনি এত পরিশ্রম করছেন, তার সব পরিশ্রম যেন বিফলে না যায় তার জন্য আমাদের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। তাকে হত্যা করার জন্য জিয়া, এরশাদ, খালেদা এবং তারেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। আমাদের নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন কর্মী হয়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকতে হবে। আজকে যদি বঙ্গবন্ধুর সেই আধুনিক সংবিধানের আলোকে এই দেশটাকে পরিচালিত করতে পারতাম তাহলে আজকে যে বার্নিং ইস্যু নিয়ে দেশে একটি সংশয় চলছে তা কখনোই হতো না। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ এবং মুসলমান। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অভ্যুদয়ের পেছনে কোনো ধর্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠার চেতনা কাজ করেনি। বরং সব ধর্মমতের মানুষ পরস্পরের ধর্মকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করবে– এটাই ছিল বাংলাদেশের জন্মকালীন আকাঙ্খা। কিন্তু এখন মূর্তি-ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।