#পদ্মা সেতু নিয়ে সকল কটু কথার উচিৎ জবাব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা: ফারুক হোসেন।
#পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ অর্থায়ন হয়েছে বাংলাদেশের টাকায়: রাশেদ কাঞ্চন।
#শেখ হাসিনার সাহসিকতার বিজয় হচ্ছে পদ্মা সেতু: এম এ সোহরাব।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আমাদের বিজয়ের অহংকার পদ্মা সেতু। সারা বিশ্বের সকল বাংলাদেশীদের অহংকার এখন পদ্মা সেতু। এক থেকে একচল্লিশ নম্বর স্প্যান বিজয়ের ইতিহাস। গর্বের ইতিহাস। স্প্যানগুলো যেন একেকটি প্রতিশোধের স্পৃহার প্রতীক। একেকটি স্প্যান মাথা উঁচু করে গর্বের সহিত দাঁড়িয়েছে আর ষড়যন্ত্রকারীদের চপেটাঘাত করেছে। জবাব দিয়েছে সকল ষড়যন্ত্রের। দেশের আত্মমর্যাদার সংকটের কঠিন পরিস্থিতিতে সাহসী সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অদম্য বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন-প্রগতির মহাসড়কে দাপটের সঙ্গে পথ চলতে শুরু করেছে শেখ হাসিনার হাত ধরে।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক, সাবেক সচিব, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নির্বাহী চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন, সম্প্রচার সাংবাদিক, (যুদ্ধ রিপোর্টিংয়ের জন্য সমধিক পরিচিত) রাশেদ কাঞ্চন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এম এ সোহরাব। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ফারুক হোসেন বলেন, আজকে আমরা একটু একটু করে একটা মাইলস্টোন অতিক্রম করেছি। এই পদ্মাকে ঘিরে আমরা কত প্রস্তুতি, কত আকাঙ্ক্ষা, কত স্বপ্ন, সব জায়গায় আমরা এখন আস্তে আস্তে সফলতা অর্জন করেছি। আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ পার করে এই পর্যায়ে এসেছি। আমার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে পদ্মার সাথে কিছুটা যুক্ত ছিলাম। এর ক্রয় প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পদ্মার সঙ্গে ডেভেলপ পার্টনারদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আর পদ্মাকে আমরা যখন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে নিতে চেয়েছিলাম তখন। একটা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। পদ্মার মত একটি নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ করার কারিগরি দিক থেকেও অনেক চ্যালেঞ্জিং। এর সাথে ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্সরা সব সময় যুক্ত ছিল। যদিও আর্থিক সমস্যা না থাকলেও ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্সরা এই ধরণের প্রকল্পের সাথে অন্যান্য দেশে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদেরকে সংযুক্ত করা, এই ধরণের প্রকল্পের সাথে কনসালটেন্ট যারা যুক্ত ছিল তাদের সাথে পরামর্শ নেওয়া, এই ধরণের প্রকল্পের সাথে যে সমস্ত যন্ত্রাংশ আছে সেগুলো ব্যবহার করা এবং সর্বোপরি কোয়ালিটি ইমপ্লিমেন্ট করা এবং এর সাথে কোন দুর্নীতি না হয় তা দেখা। আমাদের এই পদ্মা সেতুকে নিয়ে যে অভিযোগ এসেছিল তা শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে এর কোন বাস্তবিকতা ছিলো না। তারপরেও আমরা অনেক মূল্য দিয়েছি, অনেক কথা শুনেছি এর পাল্টা জবাব দিতে হয়েছে আমাদের। এক্ষেত্রে আমি ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই জন্য যে, তিনি প্রতিটি কথার জবাব দিয়েছেন ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্সদেরকে। প্রধানমন্ত্রী ত্বরিত প্রতিক্রিয়ায় সে সময় বলেছিলেন, ‘যেখানে একপয়সাও ছাড় হয়নি সেখানে দুর্নীতির কথা বলে ঋণ বন্ধ করে দেয়া, উন্নয়ন বন্ধ করা, অর্থাৎ আমাদের উন্নয়ন যেন আমরা করতে না পারি সেদিকে আমাদের পিছিয়ে নেয়া। এটা আমরা কি করে মেনে নেব, এটা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না। কোনো বাঙালি এটা মেনে নিতে পারবে না।’ এই রকম অনেক জবাব একজন শক্তিশালী দেশ শাসক এর ভিত্তিতে তিনি তাদের দিয়েছিলেন। এবং সর্বশেষ এই জবাবগুলো প্রমাণিত হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব জবাব সঠিক ছিল।
রাশেদ কাঞ্চন বলেন, একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি একটু ভিন্ন। "বার্ডস আই" এর মত চারদিক থেকে আমাদের সব কিছু পর্যালোচনা করতে হয়। পদ্মা সেতুকে নিয়ে গত কয়েক বছরের ইতিহাস নিয়ে ফারুক ভাই ইতিমধ্যে চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। এই পদ্মা সেতু যে গড়তে পারবে বর্তমান সরকার এই বিশ্বাসটুকু আমার ছিল শুরু থেকে কারণ একটাই, তিনি শেখ হাসিনা। তার দ্বারা সকল চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং তিনি তা করে দেখাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস এই জন্যই ছিল কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমার বিশ্বাস এই জন্যই ছিল কারণ শেখ হাসিনা ও শেখ হাসিনা পরিবারের যেই অবদান ও সংগ্রাম সেটি এখন সবার কাছেই প্রশংসিত। আমি দুটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চায়। একটি হচ্ছে, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা। নিজের টাকা বলতে আমরা জনগণ আসলে কি বুঝি। এই টাকাটা কি আমাদের রাজস্ব থেকে এসেছে? এই টাকাটা কি আমাদের রিজার্ভ থেকে এসেছে নাকি এই টাকাটা আমাদের ধার করতে হয়েছে? আমি বিষয়টাকে একটু গভীরে যেতে চায়। অবশ্যই নিজের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে। কোন ডলার, রূপিতে, ইউরোতে পদ্মা সেতু হয়নি। পদ্মা সেতু হয়েছে বাংলাদেশের টাকাতে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন হয়েছে আমাদের রিজার্ভ থেকে লোণের মাধ্যমে। বাংলাদেশের সেতু বিভাগকে বাংলাদেশের সরকার এই ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ১ শতাংশ ঋণের হারে সেতু বিভাগ এই সেতুকে কমপ্লিট করেছে। এখন প্রশ্ন আসে, এই ত্রিশ হাজার কোটি টাকা শোধ করবেন কে? এই সেতুটির টাকা শোধ করবেন তারাই যারা এই সেতুটির উপর যাওয়া আসা করবেন, মালামাল পরিবহন করবেন। অর্থাৎ যারা এই পদ্মা সেতু যারা ভোগ করবেন তারাই কিন্তু আগামী ৩৫ বছরে এই পদ্মা সেতুর ঋণের টাকা শোধ করবেন। সুতরাং কথাটি আমি পরিষ্কার করলাম যে আমাদের নিজের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু গড়ে তুলেছি। এখন আমরা কথায় কথায় বিশ্ব ব্যাংকে বা বিশ্ব ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানকে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় করে দেখি কিন্তু আমাদের এই কথা ভুললে চলবে না যে এই ২০২০ সালে আমাদের অন্তত ১৭টি প্রজেক্টে ফাইনান্স করেছে।
এম এ সোহরাব বলেন, আজকে ভোরের পাতা সংলাপের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কিছুই জানলাম আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে যার অনেক কিছুই আমার আগে জানা ছিলো না। এই পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কমিটমেন্ট ছিল বাঙালি জাতির প্রতি। উনার সাহসিকতার বিজয়ের মাধ্যমে এই পদ্মা সেতু আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই পদ্মা সেতুকে নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের যে রিপোর্টটি এসেছিল দুর্নীতি নিয়ে, তার ফলে প্রবাসীদের মধ্যে একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল। যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না, যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, যারা বাংলাদেশকে নিয়ে ঈর্ষা করে, অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর লোকেরা সম্মিলিতভাবে এখানে ৬০০ এমপিকে চিঠি লেখেন। তারা চিঠিতে লিখেন বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নিয়ে বিশাল দুর্নীতি হচ্ছে। তারা এখানে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছিল। তখন আমরা এর প্রতিবাদে এই ৬০০ এমপির কাছে যেতে হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক তো ছিলই, ছিল নানামুখী ষড়যন্ত্র, গুজব। পদ্মাসেতুর বিরোধিতা যারা করেছেন তাদের এজেন্ডার বড় অংশটাই রাজনৈতিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে যেখানে দাঁড় করিয়েছেন, তা এক অসম্ভব সাফল্য, যা অনেকের কাছে অকল্পনীয় আবার অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়।