রাস্তায় অনেক মানুষের ভীর, একটা মিটিং চলছিল আমার কৌতূহলী মন জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে এখানে কী হচ্ছে, বিস্তারিত জানতে দাড়িয়ে যাই মিটিং-এর পাশে, এবং তাদের কার্যক্রম গুলো শুনি, ভালো লাগে। তখন অনেক ছোট ছিলাম ঠিকমতো গুছিয়ে কথা বলতে পারতাম না তবুও তাদের একজনকে জিজ্ঞসে করি তাদের ব্যপারে আরও জানতে। তখন তারা আমাকে বলেন এটা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ পরিচালিত 'শিশু ফোরাম'। এখানে, শিশুরাই যুক্ত থাকে। শিশু ফোরামের মাধ্যমে শিশুরা তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। এরপরই তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যায়, ২০১৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয় শিশু ফোরামের সাথে, আলাপচারিতায় এমনটিই জানাচ্ছিলেন জাতীয় শিশু ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দোলা আক্তার রেবা ।
৬বছর ধরে শিশু ফোরামের সাথে যুক্ত থেকে আওয়াজ তুলেছেন শিশু অধিকার আদায়ে, কাজ করেছেন বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম প্রতিরোধ, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশসহ শিশুদের যাবতীয় বিষয় নিয়ে, শিশু ফোরামের সাথে কাজ করতে করতে বিভিন্ন সংস্থার সাথে বেশ পরিচিতি হয়েছে তার 'বাংলাদেশ মানবাধিকা কমিশন' এর সি.আর.সি বোর্ড মেম্বার হিসেবে যুক্ত রয়েছেন এই কিশোরী । সংস্থাগুলোর সাথে যুক্ত হওয়ার ফলে শিশু ফোরামের কাজ গুলো আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন তিনি।
দোলা বলেন শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধাবিপত্তির শিকার হতে হয়েছে, মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে মিশে কাজ করে; বিশেষ করে পাড়াপ্রতিবেশিদের কাছে এই ধরণের কথা শুনতে হয়েছে। আমার কাজগুলো প্রথম প্রথম আমার মা তেমন একটা সমর্থন করতেন না, আমার অজর্ন দেখার পর থেকে সমর্থন করা শুরু করেন।
দোলা আরও বলেন আমি বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করেছি এবং অসংখ্য বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি অথচ নমব-দশমে থাকার সময় প্রতিবেশীরা আমার মায়ের কাছে এসে বলতো মেয়েতো বড় যাচ্ছে বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন কীনা, বাল্যবিবাহের কথা বলতে এলে অভিভাবকদের পাড়া-প্রতিবেশীদের কথা না শোনার পরামর্শ দোলার।
শিশু ফোরামকে নেতৃত্ব দেওয়া এই কিশোরী নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে বিদেশের মাটিতেও, ২০১৯ সালের ৮ থেকে ১৪ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে ওয়ার্ল্ড ভিশন গ্লোবালের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাত দিনব্যাপী 'চিলড্রেন পারটিসিপেশন টু এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ' শিরোনামে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
শিশু ফোরামকে এগিয়ে নিতে, শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের অধিকারের কথা জানান দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানান দোলা, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এই বাসিন্দা পড়াশোনা করছেন ফিরোজা বাসার আইডিয়াল কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে । স্বপ্ন রয়েছে দেশের বাইরে গিয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করার ।
অপূর্ব চন্দ্র সকারের বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহের পূর্বধলা উপজেলায়, তিনি বলেন শিশু ফোরামের সাথে পথচলা শুরু ২০১২ সাল থেকে। তখন আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন পূর্বধলা উপজেলায় কাজ শুরু করে, একটি মতবিনিময় সভায় আমাকে নেওয়া হয় এলাকার সমস্যা গুলো তুলে ধরার জন্য। আর ঠিক এসময়ই তাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট পরিচালিত শিশু ফোরামের সাথে যুক্ত হই। তখন ভালো ভাবে কথা বলতে পারতাম না, ধীরেধীরে একজন যোগ্য লিডার হতে পেরেছি যার পেছনে শিশু ফোরামের ভূমিকা অনেক। গল্পেরছলে এভাবেই বলছিলেন জাতীয় শিশু ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অপূর্ব চন্দ্র সরকার। তিনি আরও বলেন এরপর ২০১২ সালেই উপজেলা শিশু ফোরামের সম্পাদক নির্বাচিত হই । ২০১৪ সালে রাজেন্দ্রপুর বিভাগের ওয়ার্কশপে যোগদান করি, অার সে বছরেই উপজেলার সভাপতি নির্বাচিত হই ।
টানা ৩ বার অর্থাৎ ৬ বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। আমাদের পূর্বধলায় বাল্যবিবাহের হারটা অনেক বেশি ছিলো প্রায় সময়ই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে গিয়েছি।
অপূর্ব আরও বলেন, ২০১৮ সালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শিশু ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হই। অনেক বড় একটা স্বপ্ন পূরণ হয়, আর সে বছরেই জাতীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। তার ১বছর পরে সভাপতি ইনেক্টিভ হওয়ায় অামাকে জাতীয় শিশু ফোরামের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কাজ করছি শিশু ফোরামের সাথে । বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সাথে কথা বলেছি, শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে । ডিসি থেকে শুরু করে বিভাগীয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথেও কথা বলেছি। আগামী দিনে এই নেতৃত্ব সবটাই ধরে রাখতে চাই, দীর্ঘ সময়ে অন্য নেতৃবৃন্দের শিখিয়েছি কিভাবে শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে শিশু ফোরামের উপদেষ্টা হিসেবে এবং অন্যান্য সংগঠনের কাজ করবো যারা শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে। আমার স্বপ্ন একটা শিশু বান্ধব পৃথিবী গড়ার। আর নিজ উদ্যোগে যতোটুকু পারি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়ে যাবো।