গোয়েন্দা ও দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে চাঁদা নিতে আসা এক প্রতারককে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়স্থ ইবনেসিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস রুবেল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে সদরঘাটের আওলাদ হোসেন নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল। পরে ওই ব্যবসায়ীর সন্দেহ হলেতিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান এবং পুলিশ হাতেনাতে ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আওলাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মুন্সিগঞ্জের মাহাবুব আলম ও আশুলিয়ার ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় তাদের কাছে প্রায় ৩ কোটি ২৫ লক্ষ ৪১ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করেন। কিন্তু এই টাকা চাইলে আওলাদ হোসেনের সঙ্গে নানা টালবাহানা শুরু করেন ওই দুজন। প্রায় দেড় মাস আগে এই টাকাকে কেন্দ্র করে তাদের দুজনের সঙ্গে আওলাদ হোসেনের বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরই সূত্র ধরে গত ৫ নভেম্বর, ৮ নভেম্বর, ২২ নভেম্বর, ২৮ নভেম্বর, ৩ ডিসেম্বর এবং ৫ ডিসেম্বর কখনো ডিবি, কখনো এনএসআই, কখনো ডিজিএফআই, কখনোবা এসবি অথবা দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেনকে ফোন দেয় প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস রুবেল।
আওলাদ হোসেন জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তার এসব ভুয়া পরিচয়দানকারী প্রতারক রুবেল আমাকে বলে, ‘ আপনি অবৈধ ব্যবসা করেন, আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে, আপনাকে আমরা ওয়াচ বা স্যাডো করছি। আপনি যদি পাঁচ লাখ টাকা না দেন বা আমার কথামত না চলেন তবে আপনার বড় ধরনের ক্ষতি হবে। আপনি আমার সাথে দ্রুত দেখা করেন, আপনার সমস্যার সমাধান হবে।’
ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস রুবেল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয় দেওয়ায় আমার সন্দেহ হয়। বিষয়টি আমি পুলিশকে অবহিত করলে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস রুবেলের সাথে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করি। এর প্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটায় দয়াগঞ্জ মোড়স্থ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এসে প্রতারক ফেরদৌস আমাকে ফোন দেয়। এ সময় আমি আমার কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে তার সাথে দেখা করি। আলাপের এক পর্যায়ে প্রতারক ফেরদৌস আমার সব সমস্যার সমাধান করে দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করে। এমনকি টাকা না দিলে সে আমার বড় ধরনের ক্ষতি ও আমাকে হয়রানি করবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক টহলরত পুলিশকে অবহিত করলে গেন্ডারিয়া থানার এসআই সাজ্জাদুজ্জামান ফোর্সসহ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন এবং প্রতারক ফেরদৌসের কাছে পরিচয় জানতে চান। এ সময় সে সিটিএসবি’র কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। এরপর পুলিশের জেরার মুখে সে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং স্বীকার করে যে, আমার সঙ্গে যে দুজনের ব্যবসায়িক বিরোধ রয়েছে তাদের প্ররোচনায় সে এই প্রতারণা করেছে। এরপর পুলিশ তার মোবাইল ফোন জব্দ করে এবং থানায় নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন জানান, এই প্রতারণার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে শুক্রবার গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
গেন্ডারিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো.সাজ্জাদুজ্জামানকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
শনিবার সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস রুবেল তার অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।