প্রকাশ: শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৫৬ এএম আপডেট: ১২.১২.২০২০ ১২:১৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার আসার পথে ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডাম্ব ফেরি রাণীগঞ্জের তলায় ফাটল ধরে। পরে যাত্রী ও যানবাহন ঘাটে নামিয়ে দেয়ার পরে নোঙর করা হলে ফেরিটি ডুবে যায়।
দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘাটে না যেতে পারলে পদ্মায় ডুবে সব শেষ হয়ে যাবে। এমন ভাবনা থেকে ফেরির মাস্টার (চালক) মো. ফজলুল করিম তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আর সাহস কাজে লাগিয়ে রক্ষা করেন যানবাহনসহ যাত্রীদের।
ফেরির মাস্টার মো. ফজলুল করিম বলেন, দুর্ঘটনার ভয়াবহতা টের পেয়ে ফেরিতে থাকা যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের আমরা কিছু বুঝতে দিইনি। দুর্ঘটনার পরপরই প্রাথমিকভাবে সাব মার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করি আমরা। কিন্তু পানির বেগ বেশি থাকায় ব্যর্থ হই। এদিকে হাতে সময়ও খুব কম। যেকোনো সময় ফেরি ডুবে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমন অবস্থায় ফেরি থেকে ২৬ জন কর্মীকে দায়িত্ব দিই লেপ, তোশক, বালিশ, বস্তা—যা কিছু আছে সেগুলো দিয়ে যতটা সম্ভব পানির প্রবেশ ঠেকাতে।
ফেরির কর্মীরা চালিয়ে যান তাঁদের কাজ। এমন সময় ফজলুল করিম ইঞ্জিনের গতি সর্বোচ্চ বাড়িয়ে দেন। একই সঙ্গে ফোন করে ঘাটের ব্যবস্থাপককে জানিয়ে দেন দুর্ঘটনার কথা, খালাসের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলেন ৪ নম্বর ফেরিঘাটটি। জানানোর ২০ মিনিটের মধ্যে ফেরিটি বাংলাবাজার ৪ নম্বর ঘাটে পৌঁছায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে যানবাহন নামানো শেষ হতেই ঘন কুয়াশায় চারপাশ ঝাপসা হয়ে যায়। ফেরিটি ডুবে যেতে থাকায় মাস্টার ফজলুল করিম ঘাট থেকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যান।
তিনি বলছিলেন, ‘ফেরিটি ঘাট থেকে দূরে না সরালে মূল ঘাটেই ফেরিটি ডুবে যেত। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত ফেরি চলাচল। তাই ঘাট থেকে ৩০০ ফুট দূরে ফেরিটি নোঙর করি।’ সেখানেই রাত ৪টার দিকে ফেরিটির ৯০ ভাগই ডুবে যায়। তখনো পাড়ে বসা মাস্টার ফজলুল করিম।
উল্লেখ্য, রানীগঞ্জ নামের এই ফেরিকে ডাম্ব ফেরি বলা হয়। ফেরিটির বয়স অন্তত ৬০ বছর। ব্রিটিশ শাসনামলে এই মডেলের ফেরিগুলোর প্রচলন হয়, যার কিছু এখনো পদ্মা নদীতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার দুই ঘাটের মধ্যে চলাচল করে। তবে এটি ঠেলা ফেরি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। কারণ, এ ফেরির নিজস্ব কোনো ইঞ্জিন নেই। ইঞ্জিনসংবলিত একটি জাহাজ ফেরিটিকে টেনে নিয়ে যায়। এসব ফেরিতে সাধারণত যানবাহন পারাপার হয়। রোববার (৬ ডিসেম্ব) দুর্ঘটনার দিন রাত ১০টায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৭টি ট্রাক, ৫টি বাস, ৭টি ছোট গাড়িসহ প্রায় ৪০০ যাত্রী বহন করেছিল রানীগঞ্জ ফেরিটি। আর ইঞ্জিনচালিত জাহাজ ছিল আইটি-৯৬। এর মাস্টার ছিলেন মো. ফজলুল করিম।
/ই