প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১২ পিএম আপডেট: ১১.১২.২০২০ ৭:১৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
পর্দা একটি ইবাদত। সালাত যেমন আবশ্যকীয় ইবাদত। তেমনি পর্দা মান্য করা বাধ্যতামূলক । ইসলামের পর্দা ব্যবস্থা নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে মর্যাদা বৃদ্ধি করে ও সুরক্ষা দেয়। তাফসীনে ইবনে কাসির এ বলা হয়েছে, আবু উমামা (রহ.) যখন কোন নতুন কাপড় কণ্ঠ পর্যন্ত পরিধান করতেন তখন তিনি বলতেন আমি অল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যিনি আমাকে পোশাক পড়িয়েছেন, যার দ্বারা আমি জরুরী ভিত্তিতে স্বীয় দেহ আবৃত করেছি এবং সাথে সাথে নিজের সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি করেছি। ” সতরাং মহিলারা শালীন ও সুন্নতি পোশাক পড়ার মাধ্যমেই সৌন্দর্য বিকশিত করে থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। (সুরা আননূর-১৯) এক যুবক রসুল সাঃ এর কাছে এসে ব্যবিচারের অনুমতি চাইল, সাহাবীরা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলেন। কিন্তু নবিজীর দৃষ্টিভঙ্গী ছিল ভিন্ন। শান্ত সমাহিত চিত্তে তিনি যুবকটিকে তার আরো কাছে আসতে বলেন। তারপর তিনি বলেলন, তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা (ব্যভিচার) মেনে নেবে? যুবকটি জবাব দিলো না। রসুল (সাঃ) বল্লেন, অন্য লোকেরাও তাদের মায়ের জন্য এটা অনুমোদন করবেনা। অতঃপর রাসুল বারবার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন সে তার কন্যা, বোন, ও চাচীর জন্য এটি অনুমোদন করবে কি না ? প্রতিবার যুবক বলল “না”। অতঃপর তিনি যুবকটির হাত ধরে বল্লেন, আল্লাহ তার ( তরুণের) পাপ (তার এই কামনার বিরুদ্ধে) মার্জনা করুন (আহমদ, তাবরানী)। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে, তোমরা নিকটবর্তী হয়োনা ব্যভিচারের । নিশ্চয়ই তা অশ্লীল এবং নিকৃষ্ট আচরণ। ” (বনি ইসরাইল-৩২)
পাশ্চাতত্যের ইহুদী-খৃষ্টান সমাজই প্রথম নারীর পোশাক খর্ব করেছে। আর এ কালচার বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুপে আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে। পাশ্চাত্য নারীদের অনুকরণ করায় আমাদের সমাজে নিয়ম শৃংঙ্খলা বিঘিœত হচ্ছে। আমাদের দেশে ধর্ষণ ও অপহরণের অন্যান্য কারণের মধ্যে এটি অন্যতম। বর্তমানে আমাদের দেশে দিন-দুপুরে পার্ক, কিংবা হোটেলে প্রেমের নামে বেপর্দা নারীরা অনৈসলামিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব নারীর হৃদ্যতা দৈহিক সম্পর্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউটিউব ভিডিওগুলো অনসন্ধানে জানা গেছে দৈহিক সম্পর্কের ব্যাপারে নারীরা অগ্রগামী। বিশ্ব ভালবাসা দিবস, বিবাহ উৎসব, জন্ম দিন, সুন্নতে খতনাসহ বিভিন্ন উৎসবে নারীদের পাশ্চাত্যধর্মী ছোট- খাট পোশাক ও অনৈসলামিক গান-বাজনার কারণে আমরা গোনহগারের তালিকায় নাম লিখাচ্ছি। মনে রাখতে হবে যে মুসলমানদের জন্য আনন্দ উৎসব দুটি। সেটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। অন্য কোন দিবস পালন করার বিধান সহি হাদিসে পাওয়া যায় না। অশ্লীল কাজে শয়তান মহিলাদেরকে সহযোগীতা করে। হাদিসে আছে যখন একজন যুবক যুবতী নির্জনতা অবলম্বন করে তখন শযতান হয় তার তৃতীয় সঙ্গী। সুরা বাকারাতে (১৬৮,১৬৯) আল্লাহ বলেন, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো এই নির্দেশ তোমাদিগকে দিবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর প্রতি এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর যা তোমরা জান না। প্রত্যেক মুসলমান তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এক্ষেত্রে নর-নারী কারও জন্য ছাড় দেয়া হয় নি। বোখারি শরিফে ( হাদিস নং-৬৬১২) উল্লেখ করা হয়েছে , মহান আল্লাহ আদম সন্তানদের জন্য ব্যভিচারের একটি অংশ লিখে দিয়েছেন। যা সে নিশ্চিত পাবে। যেমন চোখের ব্যবিচার হলো দেখা, মুখের ব্যবিচার হলো কথা বলা, মনের মধ্যে যে কামনা ও বাসনা জাগ্রত হয় , আর লজ্বাস্থানের মাধ্যমে তা সত্য বা মিথ্যা প্রমানিত হয়। শরিয়তী পর্দা মেনে না চলার কারণেই বাংলাদেশে ইভটিজিং বাড়ছে। এজন্য ছেলেরা দায়ী হলেও মেয়েরা তাদেরকে উদ্দীপনা সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে নবী, তুমি নিজের বিবিদেরকে ও কন্যাদেরকে এবং মুমিনগণের নারীদের বল যেন, তারা নিজেদের চাদর মাথার উপর কিছুটা টেনে নেয়, এতে তাদেরকে চিনতে সুবিধা হবে, ফলে তাদের উত্তক্ত করা হবে না। (আহযাব ৫৯)ব্যভিচারের শাস্তি সম্পর্কে মুসলিম শরিফে বলা হয়েছে, বিবাহিতের শাস্তি বেত্রাঘাত ও রজম। একজন বিবাহিত নর অথবা নারী যিনা করলে সমাজের বিশাল ক্ষতি হতে পারে। যেমন -সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে, খুনাখুনি হতে পারে। পরে বিবাহ বিচ্ছেদের পরে সন্তানাদিও ভবিষ্যৎ হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই বিবাহিত যিনাকারীদের শাস্তি অবিবাহিত ব্যভিচারীর চেয়ে একটু বেশি কঠিন। যাতে মনের ভুলেও কেউ না আসে। নারী তার স্বামীকে খুশী রাখার জন্য ঘরের ভেতে সাজ সজ্জা করতে পারে। কিন্তু বাইরে চলাফেরার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর নারীরা যেন তাদের পা এমন জোরে না ফেলে, যা দ্বারা তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ পায় ( নূর-৩১)। অথচ আমাদের সমাজের নারীরা পাশ্চাত্য সমাজের নারীদের মত উঁচু জুতা পরে উটের মত হেলে -দুলে চলে। ফলে বিপথগামী পুরুষরা আকৃষ্ট হয়। রাসুল (সাঃ )বলেছেন, নির্লজ্জতার কারণে সমাজে মহামারি, সংক্রামক ব্যাধি ও ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মুসলিম নারীদের চলাফেরা , কথা-বার্তা, ও চাল-চলনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরুষরাও তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হবে। নইলে শয়তান সুযোগ নিয়ে অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। একারণে নারীর প্রতি পর্দার আদেশ জারি করা হয়েছে। পর্দা নারীর জন্য প্রতিবন্ধকতা নয়, পরকালীন মুক্তি ও আত্ম রক্ষার সনদ। এটা নারীর জন্য বর্ম স্বরূপ। তাই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য সঠিকভাবে পর্দা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলিম নারীর একান্ত কর্তব্য।
লেখক:আরবী প্রভাষক, রামপুর ছিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা। মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী।