প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০১ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। আগামী শনিবার সারা দেশে হাম-রুবেলার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়ে চলবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১০ বছরের নিচে প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ শিশুকে এক ডোজ করে টিকা দেওয়া হবে। এই টিকা আনার জন্য অনেক আগেই চুক্তি করেছে সরকার। বিশ্বের অনেক দেশেরই চুক্তি না থাকায় টিকা নিতে বিলম্ব হবে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে এবং দ্রুত অর্থনৈতিক যোগান দেওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশের আগেই টিকা চলে আসছে বাংলাদেশে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী বিসিপিএস ভবনে হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাংলাদেশকে কিছু টিকা দেবে। সেগুলোও সরকার সময় মতো হাতে পেয়ে যাবে। আশা করা হচ্ছে, এই টিকাগুলো থেকে ক্রমান্বয়ে দেশের প্রায় ২৭ ভাগ মানুষ টিকা পাবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী টিকাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নানা সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। সঠিক নিয়মে ও দক্ষতার সঙ্গে টিকা দেওয়ার ফলে হাম-রুবেলা, পোলিওসহ ১০ প্রকারের কঠিন সংক্রমণ ব্যাধি দেশ থেকে নির্মূলের পথে রয়েছে, এছাড়া স্বাস্থ্যখাতের সফলতায় দেশের প্রায় ৯০ ভাগ শিশুকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। টিকাদান কর্মসূচি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অতীতে বেশ কয়েকবার দেশব্যাপী হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছরে দেশে হাম ও রুবেলা রোগের প্রকোপ ও আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণকল্পে এবং ২০২৩ সাল নাগাদ দেশ থেকে হাম-রুবেলা দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে সরকার ১২ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৪ জানুয়ারি সারা দেশে আরও একটি হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে যাচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশব্যাপী ৯ মাস থেকে ১০ বছরের নিচের প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে এক ডোজ এমআর টিকা প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাম্প্রতিক টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মওলা বকস চৌধুরী, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তমু হজুমি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. ভুপিন্দর কাউল প্রমুখ।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা ভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার তিন কোটি ডোজ কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। মহামারি মোকাবিলায় যারা সামনে থেকে কাজ করছেন, শুরুতে তাদের বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে বলে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। করোনার কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা যাতে সারা বিশ্বের মানুষ পায়, তা নিশ্চিত করতে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি। গতবছরের শেষে চীন থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে পৌনে সাত কোটির বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে, কেড়ে নিয়েছে ১৫ লাখ ৭০ হাজার মানুষের প্রাণ।বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪ লাখ ৮৫ হাজার পেরিয়ে গেছে, ছয় হাজার ৯৬৭ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছে এ ভাইরাস। করোনাভাইরাসের কোনো কার্যকর ওষুধ না থাকায় পুরো বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে টিকার দিকে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১৬ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে অর্থ বিভাগ। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে কয়েকজন শিশুকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি জানিয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিকা দান চলবে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি হবে না। টিকা দেওয়া হবে কমিউনিটি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে।