প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০১ এএম আপডেট: ১১.১২.২০২০ ৭:০৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে বিচারাধীন মামলায় কুয়েতে আটক থাকা সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে ১০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন মো. খুরশীদ আলম। জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে সেলিনা ও ওয়াফার আবেদন বৃহস্পতিবার নাকচ হয়ে গেলেও জেসমিনের আবেদনটি এদিন কার্যতালিকায় আসেনি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত তাদের আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য ১০ দিন সময় দিয়েছেন।’ এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি এদিন আদালতের নজরে আনা হয়। যেখানে তিনি আসামিদের এফডিআর এবং ঋণের টাকার ক্ষেত্রে ‘অর্থপাচার প্রতীয়মান হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন। আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘এ কারণে আগামী ৪ জানুয়ারি তাকে (আরেফিন আহসান মিঞা) হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত। কোন কর্তৃত্ববলে তিনি ওই চিঠি দিয়েছেন সে ব্যাখ্যা উপ-পরিচালককে দিতে হবে।’ পাপুল কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার পর গত ১১ নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সেখানে অভিযোগ করা হয়, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠানের’ আড়ালে জেসমিন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে তাদেরও আসামি করা হয়। মামলায় জেসমিনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ইসলাম ও দুলাভাই শহিদ ইসলাম পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে ‘লিলাবালি’ নাসের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিভিন্ন ব্যাংকে তার প্রায় ৪৪টি হিসাব পাওয়া গেছে। যেখানে শুধু এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেই রয়েছে ৩৪টি এফডিআর হিসাব। আসামি শহিদ ইসলাম পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন বিধায় এই সুবিধা গ্রহণ করতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি। পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। গত ২২ জুন একই অভিযোগে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।
এর আগে গত ১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেওয়া হয় দুদকের পক্ষ থেকে। সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। মানব ও অর্থপাচার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগে কুয়েতে পাপুলের বিরুদ্ধে করা মামলায় আগামী ২৮ জানুয়ারি রায়ের দিন ঠিক করেছে সে দেশের আদালত।