ড. কাজী এরতেজা হাসান
গতকাল বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর ওপর শেষ স্প্যানটি বসানো হলো। শেষ স্প্যানটি বসানোর দিকে গোটা বাঙালি জাতি তাকিয়ে ছিল। এই শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো। যুগ-যুগান্তর ধরে এই ইতিহাস বহমান থাকবে। আর বারবার উচ্চারিত হবে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। যার সৃষ্টি প্রেরণায় পদ্মা সেতুর জন্ম। ইতিহাসের পাতায় আর বাঙালি জাতির হƒদয়ের মনিকোঠায় তার নামটিই আলোর বিচ্ছুরণ ছড়াবে।
পদ্মা সেতু শেষ স্প্যানটি স্থাপিত হয়ে যাওয়াতে সারা দেশের মানুষ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন। মহান বিজয়ের মাসে এই বিজয় খুব সহজে আসেনি। যেমন আসেনি আমাদের মহান স্বাধীনতা এবং বিজয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সুদীর্ঘ-সংগ্রাম লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা, বিশ্বনেতা-গণতন্ত্রের মানস কন্যা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক লড়াই এবং বিচক্ষণতা দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু এনে দিলেন। কোনো ষড়যন্ত্রই আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে আটকে রাখতে পারবে না। এবার দুর্বারগতিতে এগিয়ে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের কাক্সিক্ষত উন্নতি।
গতকাল অবাক-বিস্ময়ে গোটা বিশ্বই দেখেছে, পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানো হয়েছে। বাকি আর যে কাজ আছে, তা তড়িৎপ্রবাহের ন্যায় এগিয়ে যাবে। গতকাল গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘গতকাল দুপুর ১২টা ২ মিনিট। এই সময়ে পদ্মা সেতুর ওপরে সর্বশেষ স্প্যানটি বসার মধ্য দিয়ে যুক্ত হলো পদ্মার এপাড়-ওপাড়, তার সঙ্গে যুক্ত হলো সমগ্র বাংলাদেশ। দক্ষিণবঙ্গের কিছু খাল, নদী নালা বাদ দিলে সড়কপথে আজ পুরো বাংলাদেশ এখন সংযুক্ত। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বাকি আছে, রেলসংযোগ সড়কসহ আরও অনেক খুচরো কাজ বাকি-সেগুলো শেষ করতে হয়তো আরও বছরখানেক সময় লাগতেও পারে।’ পদ্মা সেতুতে সড়কপথ ছাড়াও রেলপথ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল একই দিনে যান ও ট্রেন চলবে পদ্মা সেতুতে। সরকারের এ ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে একই সময়ে যান ও ট্রেন চলবে কি-না তা সময়ই বলে দেবে।
গতকালই সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের কথা দেশবাসী জানে। এটা আর নতুন করে না বললেও চলে। তবে একটি কথাই সবার কাছে উৎকীর্ণ হয়ে থাকবে যে, বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিচল সিদ্ধান্তের ফলেই পদ্মা সেতু আর স্বপ্নের কোনো বস্তু নয়। এটা এখন নির্ঘাত বাস্তব যে, আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ সড়ক দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে সক্ষম হবে।
এই সেতুর পাশাপাশি সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে পদ্মা দ্বিতীয় সেতু; যেটি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় নির্মিত হবে। এ সেতুর নির্মাণ কাজ সরকার কবে নাগাদ শুরু করবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া সেতু ভীষণভাবে অপরিহার্য। এ সেতুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে পশ্চিমাঞ্চলের উন্নতি-সমৃদ্ধি। বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের বিশেষ অনুরোধ, আপনার স্বপ্নের দ্বিতীয় পদ্মা সেতু যা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াকে সংযুক্ত করবে সেই সেতুর নির্মাণ কাজ যত দ্রুত সম্ভব শুরুর চিন্তা-ভাবনা করুন। এই সেতুর সঙ্গে বৃহত্তর যশোর জেলা, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-রাজবাড়ী-ফরিদপুর বাসীর স্বপ্ন জড়িয়ে আছে। জড়িত রয়েছে গোটা পশ্চিমাঞ্চলের স্বার্থ। এ অঞ্চলের মানুষ মাওয়া-জাজিরা পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় যেমন আনন্দিত তেমনি তারা আশা করেন আপনি (বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া সেতু নির্মাণে কালক্ষেপণ করবেন না। পরিশেষে বলা প্রয়োজন, এ দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক, বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পদ্মা সেতু নির্মাণ স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। কারণ বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার-দৃঢ় মনোবল, ষড়যন্ত্রকারীদের সব কিছু ব্যর্থ করে দিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা শুনে বিএনপি কোমরবেঁধে সমালোচনায় নামে। আজ তারা কোথায়? পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতু জয়ের যে ইতিহাস রচিত হলো, এই শুভ লগ্নে তাদের মূক হয়ে থাকাটা বাঙালি জাতি নিশ্চয় খেয়াল করেছে। দেশের মানুষ বিএনপি নামক দলটি, স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক জামায়াতের পা চাটা দলে পরিণত হয়েছে। জামায়াতকে নানা অপকর্মে উসকে দিয়ে নিজেদের বীরত্ব নিজেরাই দেখতে চায়, আর বাংলাদেশ ও বাঙালির বিরুদ্ধে তাদের যতো ষড়যন্ত্র, আস্ফালন, জামায়াতিদের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়।
বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন, তাদের চোখে বিষের মতো লাগে। এতে বাঙালি জাতির কিছুই আসে-যায় না। পাকিস্তানপন্থি-’৭১ এর পরাজিত ঘাতক জামায়াতের শক্তিতে বলিয়ান বিএনপি বাংলার মাটিতে আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। বাঙালি জাতি সেই সুযোগ কোনোদিন তাদের আর দেবে না। ফলে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু নিয়ে তারা যে ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার করেছে, তার উত্তর তারা গতকাল পেয়ে গেছে শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে। পদ্মার উপরের এই সেতু জাতির আরেকটি বিজয় চিহ্ন।