প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৯ পিএম আপডেট: ১১.১২.২০২০ ৭:০৬ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বিজয়ের এই মাসে আরেকটি বিজয় সূচিত হল পদ্মা সেতুর পূর্ণাবয়ব প্রাপ্তিতে। ৭১’ এরপর এ যেন নতুন সংগ্রামের সমাপ্তি। সমস্ত প্রাকৃতিক অপ্রাকৃতিক, আলোচনা সমালোচনাকে পিছনে ফেলে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান। ভূমিকম্প, মাটির ক্ষয়সহ যেকোনো আঘাত প্রতিরোধ করে ১০০ বছর টিকে থাকা সক্ষমতার উপযোগী করেই নির্মাণ করা হয়েছে এই সেতুর অবকাঠামো। সরকারের লক্ষ্য, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই সেতু চালু করে দেওয়া। এখন বাকি শুধু সড়ক ও রেলপথ স্থাপনের কাজ। পদ্মা সেতু যেন ভূমিকম্প ও মাটির ক্ষয়সহ যেকোনো ধরনের ঘাত প্রতিরোধী হয়, সেজন্য বাঁকা করে নদীর তলদেশে নিয়ে গাঁথা হয়েছে খুঁটি। আর গাড়ি ও মালবাহী দ্বিতল রেলের ভার বহনে সক্ষম করার জন্য এই খুঁটিগুলো পুঁতে দেওয়া হয়েছে নদীর ৪২০ ফুট গভীরে। ৪২ তলা ভবনের সমান গভীরতা। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের তথ্য জানা যায়, পদ্মার উপরিতল থেকে নদীর তল পর্যন্ত গভীরতা প্রায় ১৩০ ফুট। আর পানির তোড়ে নদীর তল থেকে মুহূর্তেই যে পরিমাণ মাটি সরে যায়, তা ২০০ ফুটেরও বেশি গভীর খাদ তৈরি করে। সেতুর চূড়ান্ত নকশায় খুঁটিগুলো স্থাপন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকৌশলগত বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানায়, পানি প্রবাহের দিক থেকে অ্যামাজানের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মা। সেকেন্ডে ১৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হওয়ায় সেতুর নকশা প্রণয়নের সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখা হয়। বিবেচনা করা হয়েছে একশ বছরে পদ্মায় কী পরিমাণ পানি প্রবাহিত হতে পারে। মাথায় রাখা হয়েছে ব-দ্বীপ বাংলাদেশের গঠনও। ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশ এখনো নতুন, যাকে বলা হয়ে থাকে ‘ইয়াং ডেল্টা’। এটাও ছিল একটা বাধার কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত সেতু নির্মিত হয়েছে বা এখনো নির্মাণ কাজ চলছে, তার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজটি কারিগরি দিক থেকে অন্যতম জটিল একটি কাজ। এর পেছনে তারা মূলত দুইটি কারণ চিহ্নিত করেছেন প্রথমত, নদীর নির্মাণাধীন স্থানে পরিবর্তনশীল গতিপথ নিয়ন্ত্রণ; দ্বিতীয়ত, নদীর তলদেশের স্তর ভবিষ্যতে আরও নিয়ে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা। পদ্মা নদীর ১০ কিলোমিটার নিচে গিয়ে পাথরের স্তর ছিল দ্বিতীয় বাধার কারণ। শেষ পর্যন্ত ৪২০ ফুট গভীরতায় খুঁটি স্থাপন করতে গিয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল হ্যামার। কারণ এরকম খরস্রোতা নদীর এত গভীরে পাইলিংয়ের জন্য যে বিশালাকৃতির হ্যামার প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানি থেকে বিশেষ অর্ডার দিয়ে আনা হয়েছিল এই হ্যামার। এত শক্তিশালী হ্যামার পৃথিবীর আর কোথাও কখনো ব্যবহৃত হয়নি। প্রকৌশলীদের ভাষ্য, পদ্মা সেতুর কাঠামোকে অসম্ভব শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে। কারণ পদ্মা নদীর যে পরিবর্তনশীল চরিত্র, তা যেন এই সেতুকে কোনোভাবেই টলাতে না পারে। তাছাড়া পদ্মা সেতুর ধারণক্ষমতাও অনেক বেশি করা হচ্ছে। কারণ এর ওপর কেবল চার লেনের সড়ক পথ নয়, থাকছে রেলপথও।