মৃত্যুর আগে অঢেল সম্পত্তি রেখে গেছেন ম্যারাডোনা। আর সেই সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে চলছে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে রশি টানাটানি। এটা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তার লাশও তোলা হতে পারে কবর থেকে।
ম্যারাডোনার সম্পত্তির সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। তবে ফোর্বস পত্রিকার তথ্য মতে, ১ থেকে ৪ কোটি ডলারের সম্পদ রেখে গেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে জমি, বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, গয়না। যেসব দেশে তিনি খেলেছেন, বা কোচিং করিয়েছেন অথবা অন্য কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন, সেই আর্জেন্টিনা, স্পেন, ইটালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, মেক্সিকোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এইসব সম্পত্তি।
এই বিপুল সম্পত্তির মালিকানা পেতে কোমর বেঁধে নেমেছেন অনেকে। শুধু ম্যারাডোনার ছেলে-মেয়েরা বা প্রাক্তন স্ত্রী-বান্ধবীরাই নন, এই লড়াইয়ে নেমেছেন বেশ কিছু সাংবাদিক এবং চিত্রগ্রাহকরাও।
সমস্যা আরও বেড়েছে ম্যারাডোনা কোনও উইল করে না যাওয়ায়। আর্জেন্টিনার আইন অনুযায়ী, কেউ উইলে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ স্ত্রী-সন্তান ছাড়া বাকিদের মধ্যে ইচ্ছেমতো ভাগ করে দিতে পারেন। কিন্তু দুই তৃতীয়াংশ স্ত্রী-সন্তানদের জন্য রাখতেই হবে। যেহেতু ম্যারাডোনা কোনো উইল করে যাননি তাই সম্পত্তির লড়াইটা আরও কঠিন হবে। যারা নিজেকে ম্যারাডোনার সন্তান বলে দাবি করছেন, কিন্তু ম্যারাডোনা তাদের স্বীকৃতি দেননি, তাদের মামলা আদালতে উঠলে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। এরইমধ্যে দাবি উঠেছে, সেক্ষেত্রে ম্যারাডোনার কবর খোঁড়া হোক।
আরো পড়ুন: কোহলির পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে যা বললেন শচীন-স্মিথ
সম্পত্তির এই লড়াই শুরু হয় ২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর থেকেই। গত কয়েক বছর ধরে ম্যারাডোনার আইনজীবী হিসেবে কাজ করা মরিসিও দালেসান্দ্রো বলেছেন, জানি না কারা কারা সম্পত্তির ভাগ চাইবেন, কিন্তু তালিকাটা লম্বা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ম্যারাডোনার সম্পত্তির মালিকানা যারা দাবি করতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, স্বীকৃত পাঁচ সন্তান। এদের চারজন আর্জেন্টিনায়, একজন ইটালিতে। এছাড়াও আছেন আরও ছয়জন, যারা নানা সময়ে নিজেদের ম্যারাডোনার সন্তান বলে দাবি করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ম্যারাডোনা বলে এসেছেন জিয়ানিনা (৩১) এবং দলমা (৩৩) ছাড়া তার আর কোনও সন্তান নেই। এই দুজনই ম্যারাডোনার প্রাক্তন স্ত্রী ক্লদিয়া ভিলাফেনের সন্তান। দীর্ঘ ২০ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পর ক্লদিয়ার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় ২০০৩ সালে।
এরপর ম্যারাডোনা তার আরও ছয় সন্তানের কথা স্বীকার করেন। এই ছয়জনের মধ্যে চারজন কিউবায়, দুজন আর্জেন্টিনায়। রয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী-বান্ধবীরাও। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির দাবি জানিয়ে বসেন আরও দুই ‘সন্তান’ সান্তিয়াগো লারা (১৯) এবং মাগালি গিল (২৩)। দুজনেই বলেছেন, তারা নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইনি লড়াইয়ে নামবেন। বাদ থাকেনি ব্যবসায়ী এমনকী সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহকরাও।
দালেসান্দ্রো জানিয়েছেন, যারা দাবি করবেন, তাদের দ্রুত আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। মনে হচ্ছে দিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে মোট ৬০টি মামলা উঠবে আদালতে। এর অধিকাংশই অবশ্য মানহানির মামলা, যেগুলো এতদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। বিভিন্ন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন সময়ে ঠোঁটকাটা ম্যারাডোনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। এবার তারাও ম্যারাডোনার সম্পত্তির ভাগ চাইবেন। বহু ব্যবসায়ী, মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছেন তিনি। তারাও চুপ করে বসে থাকবেন না। কারণ, এই টাকার অঙ্কটা কম নয়।