প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৭ এএম আপডেট: ০৮.১২.২০২০ ২:১৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নানা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক ও পোশাক শ্রমিকদের রাতের আঁধারে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাদের দিকে পানি ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা। ফলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও পোশাক শ্রমিক আহত হয়েছেন। কারও ভেঙেছে হাত, কেউবা চোট পেয়েছেন মাথা, কপাল, হাঁটু কিংবা পিঠে। তবে লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, কে বা কারা শিক্ষক ও পোশাক শ্রমিকদের তাড়িয়ে দিয়েছে তা তারা জানেন না।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির দফতর সম্পাদক মো. ইমতিয়াজ বিন হাকিম বলেন, ভোর পাঁচটা দিকে প্রেসক্লাবের সামনে ঘুমন্ত অবস্থায় পুলিশের একটি দল আমাদের ওপরে লাঠিচার্জ করে। এতে আমাদের প্রায় ১০ থেকে ১৫ জনের মতো শিক্ষক আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমাদের ওপর পানি ছিটানো হয়। এতে শিক্ষকরা ও পোশাক শ্রমিকরা কয়েক মিনিটের মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কারো হাত, কারো মাথায়, কারো কপালে ও পিঠে আঘাত পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি আহত হন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মো. রফিকুজ্জামান (৩৫) নামে এক শিক্ষক। তিনি ঝিনাইদাহের কোর্ট চাঁদপুর উপজেলার গড়সতী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক। দফতর সম্পাদক হাকিম বলেন, আমরা সরকারের পক্ষে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলাম। তারা যদি আগে থেকে আমাদের বলতো তাহলে আমরা উঠে যেতাম। ভোরে আমাদের ওপরে লাঠিচার্জ এটা আসলেই দুঃখজনক।
নীলফামারীর একটি স্বতন্ত্র ইবতেদিয়া মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, খুব ভোরে হঠাৎ করে বাঁশির ও চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের লাঠির আঘাত আমার কপালে ও পায়ে লেগেছে। এদিকে, শাহবাগ থানার পরিদর্শক বাশার বলেন, কে বা কারা শিক্ষক ও পোশাক শ্রমিকদের তাড়িয়ে দিয়েছে তা আমরা জানি না। আজ আমার এখানে ডিউটিও ছিল না। আর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রেসক্লাবের সৌন্দর্য ও সুনামের দিকে তাকিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক ও পোশাক শ্রমিকরা রাতের আধারে প্রেসক্লাব থেকে সরে গেছেন। আমি শুধু জানি তারা সেখান থেকে চলে গেছেন। এদিন ভোর সোয়া ৬টার দিকে সচিবালয় সড়ক থেকে এগিয়ে প্রেসক্লাব মোড়ে যেতেই দেখা মেলে শতাধিক পুলিশ সদস্যের। সংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে আন্দোলনকারীদের পোস্টার, ব্যানার এবং বিভিন্ন কাগজপত্র। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত শাহবাগ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে লাঠিপেটার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়েন। তার দাবি, এসবের কিছুই তারা জানেন না, দেখেনওনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তারা এখানে অবস্থান নিয়েছেন।