বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
টাঙ্গন লোহার ব্রিজ গণহত্যা
১৫০ শহীদের লাশ দিয়ে ভরাট করা হয় একটি গর্ত
আরিফ রহমান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৭ এএম আপডেট: ০৮.১২.২০২০ ২:১৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার টাঙ্গন নদীর পুরানো ব্রিজ সংলগ্ন, বর্তমান জেলা শিল্পকলা একাডেমির দক্ষিণ ও দুর্গাম-পের পশ্চিম পাশে ১৮ মে ১৯৭১ বুধবার যে গণহত্যাটি সংঘটিত হয় তাকে ‘টাঙ্গন লোহার ব্রিজ গণহত্যা’ নামেই অভিহিত করা হয়। স্থানীয় রাজাকার, শান্তিবাহিনী ও বিহারিদের একটি অংশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঠাকুরগাঁওয়ের ইসলামনগরে পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন বর্বরতার আরেকটি ফলক স্থাপন করে। ওইদিন মধ্যরাত থেকে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ করতে করতে তারা পুরো ইসলামনগরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে।
কিছু অবাঙালি বাড়িঘর লুটপাট ও মারধর করে এবং নারী নির্যাতনের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। তখন ইসলাম নগরবাসী প্রাথমিক প্রতিরোধ হিসেবে বালু ও লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্ট করে। যদিও সশস্ত্র পাকসেনা  ও রাজাকারদের কাছে তাদের নিরস্ত্র প্রতিরোধ চেষ্টা বৃথা যায়। গোটা গ্রাম ঘিরে পরদিন সকালে পাকিস্তানিরা গ্রামের সব পুরুষকে এক জায়গায় জড়ো হতে বলে। জড়ো হওয়া আতঙ্কিত মানুষগুলোর কাছে পাক বাহিনীর নেতৃত্বদানকারী সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন আফজাল ও ক্যাপ্টেন হারুন জানতে চায়, গত নির্বাচনে তারা কোন দলকে ভোট দিয়েছিল। উত্তরে প্রাণের মায়ায় ২-১ জন মিথ্যার আশ্রয় নিলেও অধিকাংশই নির্ভয়ে বললেন, তারা আওয়ামী লীগকে অর্থাৎ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। কেন তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেনÑ এই প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় খানকা শরিফের একাদশ খলিফার সন্তান ডা. মুস্তাফা আহমাদ ইংরেজি ভাষার তার কারণ সবিস্তরে ব্যাখ্যা করেন।
সেনা অফিসাররা স্থানীয় বিড়ি মেম্বারের খোঁজ করেন। বিড়ি মেম্বার সিরাজউদ্দীন আহমেদকে স্থানীয়দের একটা তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং পরদিন সকালে তালিকার সবাইকে ইপিআর ক্যাম্পে হাজির হতে বলা হয়। এর ব্যত্যয় হলে ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইসলামনগর ত্যাগ করে হানাদার বাহিনী। এদিন রাতেই পীর সাহেবসহ নেতৃস্থানীয় সকলেই চিন্তাভাবনা ও পরামর্শ করে ঠিক করলেন যে তালিকাভুক্তদের ক্যাম্পে হাজিরা দিতে পাঠাবেন। তাদের ধারণা হয়েছিল আজ যেহেতু এখানে কাউকে হত্যা করা হয়নি তখন হাজিরা দানকারীদেরও মনে হয় হত্যা করা হবে না। জিজ্ঞাসাবাদ করেই হয়তো ছেড়ে দিবে। তাই পরদিন ২০ মে, শুক্রবার সকালে তালিকাভুক্ত ৮ জনকে গরুর গাড়িতে করে ইপিআর ক্যাম্পে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলো। ওইদিন বিকেল বেলায় গরুর গাড়ি ফেরত এলেও তারা ক্যাম্পেই ছিল। তারা কী অবস্থায় ছিল, কীভাবে ছিল তা আর কেউ জানতে পারেনি। অনেক পরে জানতে পারা যায় ৪ দিন পর ২৪ মে ১৯৭১ তারিখে তাদেরকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় টাঙ্গন নদীর পুরানো ব্রিজের কাছে এক জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায়। সেখানে তাদেরকে আরও অনেকের সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়।
টাঙ্গন লোহার ব্রিজ সংলগ্ন এই এলাকায় কমপক্ষে ৩০টি গণহত্যার ঘটনা ঘটে বলে মনে করেন ঠাকুরগাঁওয়ের গণহত্যা গবেষক মো. আব্দুস সালাম। ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় টাঙ্গন লোহার ব্রিজ সংলগ্ন উত্তর মাথার পশ্চিমে তৎকালীন সময়ে একটি বড় গর্ত ছিল সেখানে স্থানীয়দের ধরে এনে নিয়মিত হত্যা করা হতো। এছাড়া ব্রিজ সংলগ্ন উত্তর মাথার পূর্বপাড়ে বালুর চরেও বহু গণহত্যা ঘটিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। এই ব্রিজের দুই পাশে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প থাকায় তারা তাদের সুবিধার্থে নিরিবিলি জায়গা হিসেবে এই স্থান দুটিকে বেছে নেয়। ১৯৭১ সালের মে-সেপ্টেম্বর মাসের বিভিন্ন সময়ে খানসেনারা অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষকে এখানে হত্যা করে। ব্রিজ সংলগ্ন উত্তর মাথার পশ্চিমের ওই বড় গর্ত প্রায় ১৫০ শহীদের লাশ দিয়ে ভরাট হয়ে যায়। এই বড় গর্তটি ভরাট হওয়ার পর খানসেনারা ব্রিজ সংলগ্ন উত্তর মাথার পূর্বপাড়ে বালুর চরে, যা বর্তমানে নদীগর্ভে পড়ে গেছে সেখানে গণহত্যার শহীদদের লাশ ফেলা শুরু করে। সেখানেও বিভিন্ন সময়ে গণহত্যা ঘটিয়ে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও জেলায় ১৯৭১ সালে সংগঠিত গণহত্যা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন ডক্টর মো. আব্দুস সালাম। তার গবেষণায় দেখা গেছে মে থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রায় সাড়ে সাত মাস সময়ে ঠাকুরগাঁওতে ৪০৯টি ছোট বড় গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে দীর্ঘদিন পর্যন্ত মনে করা হতো এখানে সংগঠিত গণহত্যার সংখ্যা মাত্র ৮টি।
সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁও জেলায় হত্যা-নির্যাতনের গতি প্রকৃতি কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় একই রকম। দলবদ্ধভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে লুট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা-নির্যাতন এবং ধর্ষণ দিয়ে শেষ হয়েছে অপারেশন। ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় একই রকম প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দলবদ্ধভাবে ভারতে আশ্রয় নেন ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক মানুষ। শহীদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য দেশের প্রত্যেকটি বধ্যভূমি ও গণকবরে ইতিহাস সংবলিত স্মৃতিফলক বা স্তম্ভ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। আমার মতে সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে একাত্তরের স্মৃতি সংরক্ষণে নাগরিক সমাজেরও এগিয়ে আসা জরুরি।





« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]