কেরানীগঞ্জ আ. লীগে ৩২ মামলার আসামি, বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয়!
ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে জায়গা পেয়েছে ৩২ মামলার আসামি আবু সিদ্দিক ওরফে গাল কাটা সিদ্দিক। সন্ত্রাস, মাদকের কারবার, চাঁদাবাজি, মন্দিরের জমি দখলের মতো নানা অভিযোগে ভুক্তভোগীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এসব মামলা করেছেন। এই সন্ত্রাসী মাদক কারবারির সন্ত্রাস-জুলুম থেকে রেহাই পাননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। সেই গাল কাটা সিদ্দিক এখন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির ৩ নম্বর সদস্য।
শুধু তা-ই নয়, নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে ধর্ষণ মামলার আসামি ও বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয়দের নেতা বানানোর অভিযোগ উঠেছে। এই কমিটির নেতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মেজর ডালিমের ফুফাতো ভাই আরিফুল ইসলাম যুবদলের নেতা ছিলেন।
গত বুধবার ৬২ সদস্যবিশিষ্ট কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
মডেল থানা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইউসুফ আলী চৌধুরী সেলিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে শফিউল খান বারকু, আলতাফ হোসেন বিপ্লব ও সাকুর হোসেন সাকুকে। এ ছাড়া কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন ধর্ষণ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নাজমুল জাহান রিপন।
আবু সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এলাকায় অভিযোগের শেষ নেই। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী। কিছু দিন আগেই তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুকের প্যাড জালিয়াতির অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এলাকায় জায়গা দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার নামে। অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এলাকায় বেশ আলোচিত আবু সিদ্দিকের নেতৃত্ব লাভে হতাশ অনেকে।
বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয় কীভাবে আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ পায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
জানা গেছে, আরিফুল হযরতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। বিএনপি আমলে এই আরিফুল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন বলে জানান স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে কমিটির আরেক সদস্য নাজমুল জাহান রিপন ধর্ষণের দায়ে একটি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তার মামলার রায় হয়ে যাবে বলে এলাকাবাসী জানায়। ধর্ষণ মামলার আসামির বর্তমান কমিটিতে পদ পাওয়া নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে বিতর্কের।
বিতর্কিত অনেকে পদ পেলেও পদবঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী ও দুর্দিনের প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি আজাহার বাঙ্গালী, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম হিলটন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি হাজি মোশতাক হোসেন, তারানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. জয়নাল আবেদীন। , জিনজিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোবারক হোসেন নোভেল, কালিন্দী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মিন্টু, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাবুল হোসেনসহ অনেক ত্যাগী নেতার ঠাঁই হয়নি নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে।
বিতর্কিত অনেকে কমিটিতে সুযোগ পেলেও দলের দুঃসময়ে যারা ছিলেন, যারা দলের জন্য যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন ব্যক্তিরা পদবঞ্চিত হওয়ায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের আমলে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন রফিকুল ইসলাম হিলটন। বর্তমানে তিনি হযরতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। হিলটন জানান, আরিফুল ইসলাম সেলিম করত যুবদল। সে এখন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আমরা দলের দুঃসময়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি, কিন্তু আমরা ভালো পদে যাওয়ার সুযোগ পাই না।