#বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে এখনো সক্রিয় আছে: আবু আহমেদ নাসিম পাভেল।
#ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ফাইয়াজুল হক রাজু।
#দেশের স্থপতিকে নিয়ে দুরাচার করার সাহস কোথা থেকে পায় এরা?: ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন।
সম্প্রতি বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, অস্তিত্বের অহম মুক্তিযুদ্ধ এবং একক সাহস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিকৃত ইঙ্গিতে আওয়াজ তুলতে দেখা যায়। এরা ধৃষ্টতা নিয়ে বলেছেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে সরিয়ে ফেলবার কথা। বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কৌশলে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, ভোটাধিকার এবং ক্ষমতার অংশীদার করবার ফল এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। তাই তাদের এই ঘাড় এখনি মটকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাড়াতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৮১ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, আওয়ামী লীগ নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
আবু আহমেদ নাসিম পাভেল বলেন, ধন্যবাদ সঞ্চালককে এতো সুন্দর করে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেওয়ার জন্য। আপনার মাধ্যমে ভোরের পাতার অগণিত দর্শক শ্রোতাদেরকে বিজয়ের এই মাসে আসন্ন বিজয় দিবস ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনারা জানেন ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাই এবং তিনি দেশে ফিরে আসার পর তখন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে তুলে দাঁড়ানোর জন্য পরিশ্রম করছিলেন। ঠিক তখন ১৯৭৪ সালে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা দেশে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সৃষ্টির মাধ্যমে জাতির পিতা তথা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পাঁয়তারা করা হয়েছিল তখন। নানান সাম্রাজ্যবাদীর শক্তিরা তাদের দেশীয় দোসর, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও পরাজিত দেশ, বিদেশি শক্তি এবং ঘাতক চক্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করেছিল। বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণিত, বর্বর ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা। তখন আমরা আরও হারিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক এবং যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনিকে। মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ নানা চড়াই উতরাই পেড়িয়ে সরকারে এসে আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কয়টি অত্যন্ত প্রশংসাময়ী কাজ সম্পন্ন করেছে তার দুটো হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইবুন্যাল গঠন। যুদ্ধাপরাধীর বিচারে প্রতীকী কলঙ্ক মুক্তি ঘটলেও তাদের অনুসারী লাখ লাখ নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে তাদেরই একটা অংশ অত্যন্ত সুচতুরভাবে কৌশলী মেধা নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারকে অস্থির করে, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ভূলুণ্ঠিত করে ৭১ এর ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতেই ব্যস্ত। কুষ্টিয়ায় জাতির জনকের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত ক'দিন আগে মুমিনুল হক আর বাবুনগরী যে দম্ভোক্তি করেছিলেন, আজকের ন্যক্কারজনক ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। এই আঘাত শুধুমাত্র একটি ভাস্কর্যের ই অবমাননা নয়, এটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সর্বোপরি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির এক সর্বনাশা চ্যালেঞ্জ।
ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন, একটা বিষয় আমাদের বুঝতে বাকি নেই যে, কোন না কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশে গত কয়েক মাস ধরে। ইনফেক্ট এই সরকার আসার আগ থেকেই এই ষড়যন্ত্র হয়ে আসছে। নানান রকম ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক মোকাবেলা করে আজকের এই জায়গায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ষড়যন্ত্র আছে এবং থাকবে এটা যেমন সত্য আরেকটি সত্য হলও এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। প্রগতিশীল শক্তি ও মুক্তমনাদেরকে নিয়ে এখনি একটি জাতিয় ঐক্য গড়ে তোলার সময় হয়েছে। এখানে একটা গ্যাপ রয়েছে। আমরা যে যেই রাজনৈতিক মতাদর্শের হইনা কেন, কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদেরকে একত্র হতে হবে। এটাও ঠিক যে সব রাজনৈতিক নেতারা এখানে আসবে না। যারা প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত আছে বিশেষ করে যারা সেকুলার রাজনীতির সাথে জড়িত আছে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত, তাদের কাছ থেকে এই ক্রান্তিলগ্নে কোন সাড়া শব্দ পাইনি। শুধু পত্রিকায় ও টকশোতে বসে এটা নিয়ে কথা বললে হবে না। একটা সুদূরপ্রসারী চিন্তা বাস্তবায়নের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে আমাদের এগুতে হবে। এই যে মাদ্রাসা ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের ব্যবহার করে আজকে যারা মাঠ কাঁপানোর চেষ্টা করছেন বা মাঠ দখলের চেষ্টা করছে তাদের মূল জায়গাটি বের করতে হবে। আমি মনে করি, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটি নতুন কাঠামো গঠন করার সময় হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের উন্নতির সঙ্গে একটি বড় অংশ মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত আছে। তারা কিন্তু যুব সম্প্রদায়। তাদেরকে এখনি একটি মনস্তাত্ত্বিকভাবে আধুনিকরণে সম্পৃক্ত করতে হবে।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, আজকে আমার ভাবতে অবাক লাগে যে, দেশের জাতির জনকের গায়ে আঘাত করতে পারে তারা! এতো বড় দুরাচার করার সাহস কোথা থেকে পায় এরা। এতো বড় ষড়যন্ত্রের পিছনে কারা ইন্ধন দিচ্ছে? কারা এদেরকে মদদ দিচ্ছে? এই জায়গাটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে এই ইস্যুকে পুঁজি করে দেশের ভেতর অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। আওয়ামী লীগ তা হতে দিবে না। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এ মাসে হায়েনাদের অন্তরজ্বালা বেড়ে যায়, বঙ্গবন্ধু মুজিবের প্রতিচ্ছবি তাদের হ্রদয়ের দহনকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে, তাই নেতা মুজিবের ভাস্কর্য প্রতিরোধে ডিসেম্বরকেই এরা বেঁচে নিয়েছে। মুক্তি সংগ্রামের পঞ্চাশ বছরে, এ জাতির অর্জন অনেক। অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন, জন্ম মৃত্যু আর জনমিতির নানা সূচকে পাকিস্তানকে টপকিয়েছে বহু আগেই, এই অগ্রগতি প্রতিবেশীসহ অনেক দেশেরই অন্তরজ্বালার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের ২১ বছরেও বাংলাদেশে কেউ এতটা ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। দেশীয় আর আন্তর্জাতিক চক্র যারা প্রিয় বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় ও অগ্রগতিকে আজও মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি, সেই ঘৃণ্য অপশক্তিই শাপলা চত্বরের ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে সামনে রেখে মরণ নেশায় মত্ত হয়েছে। সারাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান, মাতারবাড়ীতে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল বদলে দেবে যোগাযোগের চিত্র, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সুফল ফসল পদ্মাসেতু ঘুরিয়ে দেবে দেশের দক্ষিণাঞ্চল - এতো সব নিকট সম্ভাবনাকে সামনে রেখে চক্রান্তে নেমেছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী।