#পদ্মা সেতু নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল: সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
#জিয়া, এরশাদ ও খালেদার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক শক্তি গড়ে উঠেছে: অসীম কুমার উকিল।
#উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: ড. শাহীনূর রহমান।
#শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সংকটেও সাহস পাই: ড. মোহাম্মদ আলী মানিক।
পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। পদ্মার তীর থেকে দেখা যাচ্ছে পিলারের দীর্ঘ সারি। তার উপর একে একে বসানো হচ্ছে ইস্পাতের কাঠামো (স্প্যান)। করোনা সংকটের মধ্যেও থেমে নেই বাংলাদেশের স্বপ্নের স্থাপনা পদ্মা সেতুর কাজ। পদ্মা সেতু একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৮০ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। রবিবার (০৬ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং দুদকের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. শাহীনূর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ড. মোহাম্মদ আলী মানিক। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, আজকের এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করায় ভোরের পাতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে কিছু বলার পূর্বেই আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি আমার বক্তব্য শুরু করতে যাচ্ছি। আমি আশ্চর্য হয়েছি যে একটি সরকারের এই পদ্মা সেতু নিয়ে বিব্রত অবস্থায় ফেলার জন্য কিভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা আমি নিকট অতীতে দেখিনি। আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, আমি পাকিস্তানি শাসকদের হিংস্রতা দেখেছি, আমি সামরিক বাহিনীদের অপশাসন দেখেছি, কিন্তু এখন এই স্বাধীন বাংলাদেশে যারা এই স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেনা, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি আছে তারা এই প্রগতিশীল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে সহ্য করতে পারেনা, যারা তার রাজনীতির উন্নয়নে ঈর্ষাকাতর তারাই এই কাজগুলো করে বেড়াচ্ছে। সকলেই তাদেরকে চিনেন, তাদের মুখোশ ইতিমধ্যে উন্মোচিত হয়েছে। তারাই এই ষড়যন্ত্রের বীজ রোপণ করেছিল। বিশ্ব ব্যাংকে ব্যবহার করে তারা এই ষড়যন্ত্র করেছিল। এভাবে বলতে চাই, বিশ্ব ব্যাংক তাদের ব্যবহার করেছে, তারা বিশ্ব ব্যাংকের কাঁধে ভর করে এটা করেছে। তারা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছিল। আজকের ২০২০ সালের প্রেক্ষাপট আর ২০১২ সালের প্রেক্ষাপট, এর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে যে ৮ বছর রয়েছে এটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সে সময় আমাদের সব মিডিয়াতেই যেভাবে বিশ্ব ব্যাংকের অযৌক্তিক অভিযোগকে যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল এটা যে কতো বড় ষড়যন্ত্র তা কি কেউ ভেবে দেখেছে? আমরা যতই বলেছিলাম, যতই কেঁদেছিলাম কোনটাই কিন্তু তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিলোনা। তখন বলা হয়েছিল পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছিল। আমি তখন দুদকের থাকা অবস্থায় এই বিষয়টি আমার কাছে সবচে বেশি গুরুত্ব ছিলো। তখন আমি বলেছিলাম পদ্মা সেতু নিয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক তখন বলেছিল, পদ্মা সেতুর মূল বিষয় কোন দুর্নীতি হয়নি কিন্তু তারা পরে নিশ্চুপ থেকে অভিনব কায়দায় তারা আরও একটি অভিযোগ করে বসলো। তারা বলে বসলো যে, সরাসরি দুর্নীতি না হলেও দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছিল।
অসীম কুমার উকিল বলেন, আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। আমার আগের আলোচক খুব ভালোভাবেই এটাকে বিশ্লেষণ করেছেন। তাই আমি এই বিষয়ে কিছু না বলে অন্য একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি। আজকে ৬ ডিসেম্বর। দিবসটা এমন বলা হয়, স্বৈরাচার পতন দিবস, গণতন্ত্র মুক্তির দিবস। ১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচারি সরকারের পতন হয়েছিল। গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছিল স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে, সামরিক জান্তাদের হাত থেকে, মৌলবাদীদের কবল থেকে। আমরা সেদিনকার মূল লক্ষ্য ছিল, রাতের আঁধারে ক্ষমতার পালা বদল নয়, জনগণের ভোটে ক্ষমতার পালা বদল হবে। সরকার গঠন করবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সেই প্রক্রিয়াটি এখন অব্যাহত আছে। এর মাঝখানে অনেক গুলো ঘটনা হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬, এই ২১টি বছর যারা বাংলাদেশকে চালিয়েছে তারা হলো, জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও বেগম জেনারেল খালেদা জিয়া! এই তিন জেনারেলের হাত ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির যে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে অর্থনীতিসহ সকল সেক্টর হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। আজকে আবার ভাস্কর্য নিয়ে নতুন ইস্যু তৈরি করা হয়েছে। আসলে এটাও রাজনীতি। তারা একেক সময় একেকটা আবরণে প্রকাশিত হয়। আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই ষড়যন্ত্রের যে নতুন মাত্রা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এটা জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এই সাম্প্রদায়িক শক্তি গড়ে উঠেছে। তারা একসময় বলেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে সারাদেশে মসজিদ থেকে লোক দূরে সরে যাবে, তারা বলেছে শান্তি চুক্তি বাস্তবিত বলে আখাউরা পর্যন্ত আগরতলা হয়ে যাবে। তারা বায়তুল মোকাররম পবিত্র চত্বরে দাড়িয়ে স্লোগান দিয়েছিল, 'আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান'। এরইমাঝে দাড়িয়ে আমরা আমাদের জননেত্রী, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি দুর্বার গতিতে।
ড. শাহীনূর রহমান বলেন, আজকের এই দিনে আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমারা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা দাড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারা মা বোনদের। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। আজ আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই আজকে সেই উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিরা আজও ঘাপটি মেরে বসে আছে তারা এখনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসার পর থেকে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন যার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে আমাদের পদ্মা সেতু। ফিনিক্স পাখির মত বার বার ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনি বার বার বেচে গিয়েছেন এই দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে। তারই ফলশ্রুতিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এই করোনাকালে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনা আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করেছেন। ৭১ এখনো আছে। যুদ্ধ এখনো চলমান। এর মধ্যে দুই পক্ষ হচ্ছে মুক্তি যুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও এর বিপক্ষের শক্তি। আজকে যদি তাদেরকে আমরা কঠোর হস্তে দমন না করি তাহলে ভবিষ্যতে এরাই আবার আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করবে। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনমত গড়ে তুলতে হবে।
ড. মোহাম্মদ আলী মানিক বলেন, আজ এমন একটা দিনে আমরা আলোচনায় যুক্ত হয়েছি যে এই মাসটা আমাদের বিজয়ের মাস। আজকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা আলোচনা করছি এই স্বপ্নটিকে বাঙ্গালিকে দেখিয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যা অনেক ষড়যন্ত্র দমন, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন আমাদেরকে। আজ তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের একটি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন একটি উন্নয়নশীল দেশ গড়ার যা ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে সর্ব মহলে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশে শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জাইকার সমীক্ষা মতে, পদ্মাসেতুর মাধ্যমে প্রতিদিন ২১,৩০০ যানবাহন যাতায়াতে সক্ষম হবে আর ২০২৫ সালে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৪১,৬০০ তে। দেশের ১.২ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে আঞ্চলিক জিডিপি বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৩.৫ শতাংশে। দক্ষিণবঙ্গে শিল্পায়নের গতি ব্যাপক বেড়ে যাবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অসামান্য অবকাঠামোগুলো একটি। ধীরে ধীরে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ বিশেষ করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এবং দক্ষিণ পশ্চিমের জনগণের অর্থনৈতিক, ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই পদ্মা সেতু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছিল তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি নেতৃত্বে আমরাও তখন আন্দোলন করেছিলাম। বিশ্ব ব্যাংকের যে সদর অফিস ছিল তার সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। এই কৃতিত্বটির কথা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখনি আমাদের এইখানে আসেন তখন তিনি আমাদের প্রশংসা করেন। তাই নিজেকে একজন আওয়ামী লীগার বলতে গর্ববোধ করি।