তৃণমূল আওয়ামী লীগে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চায় কেন্দ্র। এ জন্য চলমান উপজেলা সম্মেলনে শীর্ষ পদে এমপিদের প্রার্থী হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, যারা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছেন, তারা উপজেলা সম্মেলনে প্রার্থী হতে পারবেন না। একই সঙ্গে ‘মাইম্যান’ দিয়েও কমিটি করা যাবে না। সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করতে হবে। এতে করে গণতান্ত্রিক চর্চা যেমন হবে, তেমনি তৃণমূল কর্মীরা পছন্দের ব্যক্তিকে শীর্ষ পদে বসাতে পারবেন।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, মাঠে এখন শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় অধিকাংশ স্থানেই আওয়ামী লীগের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ। সে কারণে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। কোথাও ‘এমপি লীগ’ বনাম ‘আওয়ামী লীগ’ সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে ক্ষমতার ভারসাম্য চায় কেন্দ্র। এ কারণে একই ব্যক্তি যেন একসঙ্গে দুই পদ না পায় সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দলীয় এমপিদের উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
কেন্দ্রের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার আগে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হওয়ার সময় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে পারবেন না দলীয় এমপি। বর্তমানে তৃণমূলে সম্মেলন শুরু হওয়ায় সেই নীতিতেই অটল রয়েছে দলের নীতিনির্ধারকরা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এমপিরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না-এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা এটা। তৃণমূলে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতেই এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা সম্মেলনে ত্যাগী-পরীক্ষিত এবং নেতা-কর্মীরা যাকে সব সময় বিপদে-আপদে পাশে পায়, সেই নেতা যেন নির্বাচিত করতে পারে সেজন্য ভোট করতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তৃণমূল থেকে উপজেলা পর্যায়ে যারা দলীয় এমপি তাদেরকে প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এমপিদের পকেট কমিটি করতেও বারণ করা হয়েছে। নেতা নির্বাচিত হবে ভোটের মাধ্যমে। ত্যাগী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিদেরই প্রাধান্য দিয়ে কমিটি করতে হবে।
দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, গত শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনির্ধারিত আলোচনা সভায় তৃণমূল সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে নির্দেশনা দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা যেন মূল্যায়ন পায় সে নির্দেশনা দেন তিনি। এক্ষেত্রে ‘মাইম্যান’ দিয়ে কমিটি গঠনেও নিষেধ করেন দলীয় সভানেত্রী।
গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যেসব জায়গায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি এবং কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সেসব জায়গায় দ্রুত কাউন্সিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব বলয় তৈরি করতে মাইম্যান দিয়ে কমিটি গঠন করা যাবে না।
সূত্রমতে, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দলকে ‘আওয়ামী লীগারদের’ হাতে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে তৃণমূল সম্মেলনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গত বছর যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছিল, পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয়েছে। যেখানে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের স্থান দেওয়া হয়নি এমন জেলা কমিটি ফেরত দেওয়া হয়েছে। ত্যাগীদের স্থান দিয়ে জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
তৃণমূল সূত্র জানায়, অনেক দলীয় এমপি রয়েছেন, যারা আগে কোনো দায়িত্বশীল পদে না থাকলেও এমপি হওয়ার কারণে উপজেলার শীর্ষ পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন। কোথাও কোথাও এমপির বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন না কেউ। আবার এমপিরা প্রার্থী না হলেও ‘মাইম্যান’-কে শীর্ষ পদে বসাতে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন তারা। কোথাও ‘ক্ষমতার’ দাপট দেখিয়ে পছন্দের লোককে শীর্ষ পদে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নানাভাবে অন্য কাউকে প্রার্থী হতে দিচ্ছেন না। আবার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও যারা প্রথমবার এমপি হয়েছেন তাদেরকে ঘিরে হাইব্রিডদের একটি বলয় তৈরি হয়েছে। এসব হাইব্রিড নেতাদের শীর্ষ পদে আনতে চাচ্ছেন কেউ কেউ।