সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মোংলায় সন্তান হারা মায়ের আজাহারি
‘আমরা গরীব বলে সন্তান হত্যার বিচার কি পাব না?’
মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:০২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

‘আমার সংসারে উপর্জনকারী এক মাত্র সন্তান হারিয়ে গেছে, কে দেখবে আমাকে। ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক সপ্ন ছিল, সংসারে অভাব, মা-বাবা কষ্টের চিন্তা করে ইপিজেডের গামেন্টেসে কাজ করে সংসার চালাতো ছেলে ইয়াসিন। সেই সন্তানকে আমার বুক থেকে কেড়ে নিল ওরা।’ 

এভাবেই আজাহারি করে কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলেছিল সন্ত্রসীদের হাতে নিহত ইয়াসিন শেখ’র মা-কাকলী বেগম। ঘটনার প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোন ব্যাবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন। সন্তানের হত্যাকারীদের প্রতিনিয়ত হুমকি আর জীবনের ভয়ে বাড়ী ঘর ছেড়ে অন্যাত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিহত ইয়াসিনের পরিবার। 

মামলা ও ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শীদের সুত্রে জানা যায়, মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের সাহেবেরমেঠ গ্রামের বসবাস করেন দিন মজুর মোজাফ্ফার শেখ। তার ৪ ছেলে মেয়রে মধ্যে ইয়াসিন শেখ দ্বিতীয় সন্তান। ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে দিন মজুরের কাজ করে লেখাপড়াসহ সংসার পরিচালনা করতো। বছর খানেক আগে মোংলা বন্দর সংলগ্ন ইপিজেড এর একটি গামেন্টে চাকরীও নিয়েছিলেন ইয়াসিন। এরই মধ্যে প্রতিবেশী এরশাদ শেখ’র বোনের মেয়ে ফাতেমা আক্তারে সাথে ইয়াসিনের প্রমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায়ই ইয়াসিনকে তাদের বাসায় ফোনে ডেকে নিত ফাতেমা। কথা-বার্তা ও দেখা সাক্ষাত হতো দুজনার।   

গত বছরের সালের ৪ জুলাই ইপিজেড থেকে এসে রাতের খাবার খেতে বসেছিল সে। হঠাৎ প্রতিবেশী ইমাম হাজারীর ছেলে শহিদুল হাজারী জরুরী কাজের কথা বলে রাতের খাবার রেখে ডেকে নিয়ে যায় সে।  রাত সাড়ে ১১টার দিকে লোকের মাধ্যমে ইয়াসিনকে এরশাদের বাড়ীতে বেধে রেখেছে এমন খবর পায় পিতা মোজাফ্ফার শেখ। তৎক্ষনিক ঘটনাস্থলেও মা কাকলী বেগম ও বাবা মোজাফ্ফার ছুটে গেলেও এরশাদের ঘরের মধ্যে ডুকতে না দিয়ে উল্টো তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয় ওখানে উপস্থিত থাকা একদল সন্ত্রাসীরা বলে অভিযোগ করে মোজাফ্ফার শেখ। 

ছেলে ইয়াসিনকে ফেরত না পেয়ে বাড়ী ফিরে আসে ইয়াসিনের পরিবার। পরের দিন ৫ জুলাই সকালে খবর আসে ইয়াসিন শেখ এরশাদের ঘরের সামনে চালার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাসঁ লাগানো অবস্থায় ঝুলান্ত ইয়াসিনের লাশ দেখতে পায় তারা। পিতা মোজাফ্ফারের অভিযোগ, আমার ছেলে দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় এরশাদের ভাগ্নীর সাথে ইয়াসিনের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে হিংসাপরায়ন হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। 

এ দিন এরশাদের ঘরে বসে কয়েকজন সন্ত্রাসীরা রাতভর নির্যাতন করে ইয়াসিনকে মেরে ঘরের পাশে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে এলাকার প্রভাবশালী ওই সন্ত্রাসী গ্রুপটি। 

লাশ গোসল করানো ব্যাক্তি মোঃ মোফিজ উদ্দিন শেখসহ এলাকাবাসী অনেকেই জানিয়েছে, লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ণ পেয়েছি। এছাড়াও রাতে খবর পেয়ে এরশাদের বাড়ীতে গেলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য আছাদুর রহমান শেখ’র নির্দেশে কাউকেই ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেয়নী এবং সে সময় ঘরের কোথাও কোন ঝুলান্ত লাশ দেখতে পাইনী আমরা, তবে সকালে ঘরের সামনেই ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো মাটিতে হাটু গাড়া ঝুলান্ত অবস্থায় ইয়াসিনকে দেখতে পাই। যে অবস্থায় ইয়াসিনকে পাওয়া গেছে, সেখানে কোন ভাবেই আতœহত্যা করা সম্ভব নয় বলে জানায় এলাকাবাসী।

নিহত ইয়াসিনের লাশ উদ্ধার, ময়না তদন্ত ও দাফন করাসহ সকল আনুষ্ঠানিকতাই করেছে ওই এলাকার প্রভাবশালী মহলটি। কিন্ত সেখানেও তার পরিবারের কাউকেই এসকল কাজে অংশ গ্রহন করতে দেয়া হয়নী বলেও দাবী নিহত ইয়াসিনের পরিবারের। 

প্রভাবশালী ওই সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ী থেকে ইয়াসিনকে যে ডেকে নিয়েছে বা যার ঘরে ঘটনা ঘটছে তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগও দিতে না পারলেও ঘটনার ১৪ দিন পর সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে মা-কাকলী বেগম বাদী হয়ে শহিদুল হাজারী, এরশাদ শেখ, আল আমিন শেখ ও সুরজু বেগমসহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫জনকে আসামী করে বাগেরহাট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করে।
    
আলোচিত ইয়াসিন হত্যার এ মামলাটি ঘটনার মুল রহস্য উধঘাটনের জন্য সিআইডির কাছে ন্যাস্ত করেন আদালত। চলতি বছরের মার্চ মাসে ইয়াসিনের দ্বিতীয় দফায় লাশ উত্তালন করেন সিআইডি। এ নিয়ে দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ইয়াসিন হত্যার ঘটনার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন তারা। সর্ব শেষ গত ২৪ নভেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বি,এম শাহরিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তিনিও দিনভর নিহত ইয়াসিনের কর্মস্থল, বাড়ী, মামলার স্বাক্ষী ও এলাকাবাসীর সাথে পৃথক পৃথক জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। 

এব্যাপারে নিহত ইয়াসিনের পিতা মোজাফ্ফার শেখ বলেন, আমরা গরিব ও নীরহ বলে ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করে আরো বিপদে পড়েছি। প্রতিনিয়ত ছেলের হত্যাকারী চিহ্ণিত সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ী ছেড়ে অন্যাত্র আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সর্বক্ষনিক আতংঙ্কের মধ্যে থাকি। 

অভিযুক্ত ফাতেমা আক্তারের মামা এরশাদ শেখ জানায়, ঘটনার রাতে আমি ঘরে ছিলাম না, বাড়ীর কিছু কাছেই একটি স্কুলে নাইডগার্ডের পাহারায় ছিলাম। তবে সকালে এসে আমার ঘরের পাশে গলায় ফাস দিয়ে ঝুলানো ইয়াসিনকে দেখতে পাই।

বাগেরহাট জেলা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বি,এম শাহরিয়ার বলেন, দায়িত্ব পেয়ে সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর সকালে আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে মোংলায় এসে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাক্ষীদের সাথে কথা বলেছি। ঘটনাস্থলে এসে মামলাটি নিয়ে সন্দেহ আরো ঘনিভুত হয়েছে। তাই পুনরায় তদন্ত শুরু করেছি, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে বলেও আশ্বাস্ত করেন সিআইডির এ কর্মকর্তা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]