মাও. সুলতান আহমাদ গাজী
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৪০ পিএম আপডেট: ০৪.১২.২০২০ ১:৪২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
দাওয়াত অর্থ ডাকা, আহবান করা, দাওয়াত দেয়া। অর্থাৎ দীনের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেয়া। আর তাবলিগ অর্থ পৌঁছে দেয়া, প্রচার করা। অর্থাৎ দীনের কথা প্রচার করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সব চেয়ে প্রিয় হচ্ছে তাঁর দীন। দীনের প্রচার-প্রসারের জন্য তিনি যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। পয়গম্বরগণ হলেন মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ। শ্রেষ্ঠ মানুষ দিয়ে আল্লাহ পাক দীনের শ্রেষ্ঠ কাজ করিয়েছেন। আমাদের নবী হলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে কোনো নবী আসবেন না বিধায় দীন প্রচারের দায়িত্ব এই উম্মতের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। যারা এই কাজে নিজেকে জড়াবেন তারা হবেন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।
এ মর্মে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই হলে শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০) আয়াতে মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায় হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তারা মানবজাতির কল্যাণার্থে সৃষ্ট হয়েছে। আর তাদের প্রধান কল্যাণ এই, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদান করে মানবজাতির আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক সংশোধনের চেষ্টাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। দাওয়াত ও তাবলিগের দ্বারাই মানুষের সবচেয়ে বড় কল্যাণ হয়। কারণ, দাওয়াতের দ্বারা এক ভাইয়ের ঈমান ঠিক হয়ে যায়, আমল ঠিক হয়ে যায়। আর এভাবে তার নাজাতের ব্যবস্থা হয়ে যায়। মুক্তির পথ খুলে যায়। একজন মানুষের নাজাতের পথ করে দেওয়ার চেয়ে আর বড় কল্যাণ কী হতে পারে?
আমরা মানুষের জন্য অনেকভাবে উপকার করতে পারি। মানুষের ঘর-বাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারি, চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি, ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইন করে দিতে পারি, খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত করে দিতে পারি। এসব অবশ্যই ভাল কাজ। মানুষের উপকার ও কল্যাণের কাজ। কিন্তু সব চেয়ে বড় উপকার ও কল্যাণ হলো যদি নাজাতের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। দুনিয়ার দুঃখে-কষ্টে পাশে দাড়ালে যদি উপকার হয়। দুনিয়ার আগুনে কেউ নিক্ষেপ্ত হলে সে আগুন থেকে উদ্ধার করলে যদি কল্যাণ হয়, তাহলে জাহান্নামের অনন্ত কালের আগুন থেকে রক্ষা করাতো অনেক বড় উপকার ও কল্যাণ হওয়ার কথা। আজ দুনিয়ার মানুষ অনন্ত কালের আগুনের দিকে দৌড়াচ্ছে, অথচ তাদেরকে ফিরানোর গরজ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উপমা হলো ওই ব্যক্তির মতো, যে আগুন প্রজ্জলিত করেছে, আর তাতে পতঙ্গরা ঝাপ দিচ্ছে। সে তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তাদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তোমাদের সঙ্গে আমার দৃষ্টান্ত অনুরূপ। আমি তোমাদেরকে কোমরে ধরে ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তোমরা আমাকে পরাস্ত করে সেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছো। (মুসলিম : ৬০৯৭)
তাই নিজেদের স্বার্থেই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে হবে। শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ইসলাম নির্দেশ করেনি। কোরআন-সুন্নাহয় প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি সাধ্যমত অন্যকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ফরজ করা হয়েছে। বিশেষত: আপন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের কুকর্ম থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা আপন মুক্তির পথ বন্ধ করার নামান্তর; যদিও নিজে পুরোপুরি সৎকর্মশীল হয়। কেননা আল্লাহ কোরআনে বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধিন হবে মানুষ এবং পাথর,যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। (সূরা তাহরিম : ৬)
লেখক: খতিব, বাইতুন্নুর জামে মসজিদ