প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১৪ এএম আপডেট: ০৪.১২.২০২০ ১:৩৮ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ ঠেকাতে যুদ্ধের পরে বাংলাদেশে যে এমআর বা মাসিক নিয়মিতকরণ সেবার প্রচলন করা হয়, তার কথা ভেবে এখনও বিস্ময়ের ঘোর কাটে না মার্কিন চিকিৎসকদের। যুদ্ধকবলিত একটি দেশে কীভাবে এমন আইনের ভাবনা আসলো, তা ভেবেই মূলত অবাক নিউইয়র্কের বিখ্যাত নারী গবেষক ওয়েন্ডি শেল্ডন এবং তার সহকর্মীরা। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে নারীদের অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ এবং তার প্রতিকার সংক্রান্ত একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটির জনপ্রিয় ‘ফিক্সেস’ কলামে লেখা সেই মতামতে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক প্যাট্রিক অ্যাডামস গাইনিইউটি হেলথ প্রজেক্টসের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট শেলন্ডনকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সেই আইনের কথা উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এমআর-কে বৈধতা দেয় সরকার। আগে এমআর করার সর্বোচ্চ সময়সীমা ছিল আট সপ্তাহ, কিন্তু এখন ১২ সপ্তাহ। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই এমআর-এর আলাদা বিভাগ আছে। প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোও বৈধভাবেই এমআর করছে। সামাজিক এবং ধর্মীয় কারণে গর্ভপাতকে দেশে বৈধতা দেওয়া হয় না, কিন্তু অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ এড়াতে এর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বাংলাদেশের এই আইনের ধারণা থেকে শেল্ডন তার সহকর্মীদের নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে একটি গবেষণার আইডিয়া বের করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যের নারীদের সঙ্গে তারা কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেন, কেন গর্ভধারণের টেস্টের আগেই তারা মাসিক নিয়মিতকরণের ট্যাবলেট সেবন করতে চান।
বাংলাদেশের এমআর-এর কথা উল্লেখ করে শেল্ডন টাইমসকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো জায়গায় ওই সময় কীভাবে এমআর-এর ধারণা আসল, আমি সেটাই ভেবেছি। ওই ধারণা আমাকে ভাবিয়েছে যেসব দেশে গর্ভপাত বৈধ, এমনকি সেসব জায়গায়ও নারীরা এটি বেছে নিতে পারেন। তাতে তাদের মানসিক চাপ এবং সামাজিক লজ্জায় পড়তে হবে না।’ বাংলাদেশের আইনে শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে মায়ের জীবন বাঁচাতে গর্ভপাতের সুযোগ আছে। কিন্তু এমআর-এর নামে ছোট ছোট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ‘গর্ভপাতের’ অনেক ব্যবসা গড়ে উঠেছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, সেখানে প্রশিক্ষিত ডাক্তার নেই। আয়া বা নার্স দিয়েই গর্ভপাতের কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু এনজিও তাদের হাসপাতালের মাধ্যমে এই এমআর সেবা দিচ্ছে। আর এখন সার্জারি ছাড়া ওষুধের মাধ্যমেও গর্ভপাত করানো হয়। বাংলাদেশে এখন সেই ওষুধ পাওয়া যায়।
গার্টমেকার ইনস্টিটিউটের একটি হিসাব থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ১০০ এমআর করা হয়। অর্থাৎ প্রতি হাজারে এমআর করা হয় ১৮.৩ টি। একই বছর সরাসরি গর্ভপাতের ঘটনা ছিল ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬০০টি। সে বছর প্রতি ১০০০ গর্ভবতীর মধ্যে ১৮ দশমিক ২ জন গর্ভপাত করিয়েছেন, তাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে।