প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১৪ এএম আপডেট: ০৪.১২.২০২০ ১:৩১ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৭১ সালে পাকিস্তান আমাদের মানুষের প্রতি যে নৃশংসতা চালিয়েছে বাংলাদেশ তা কখনও ভুলতে এবং ক্ষমা করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গণহত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালের ঘটনা ভোলার নয়। এ ব্যথা চিরদিন থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার নথি নিয়ে প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই এই বই থেকে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অনেক ঐতিহাসিক সত্য জানতে পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ উর্দু সংস্করণ পাকিস্তানে অন্যতম বেস্ট সেলার বই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অন্যান্য দেশের মতো পাকিস্তানেও এটি অধিক পঠিত বই। রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট পৌঁছে দেন। শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শুভেচ্ছা জানান। পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের মিরাকল সম্পর্কে জানতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন।
বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক ফোরাম নিষ্ক্রিয় রয়েছে জানিয়ে তিনি দুই দেশের মধ্যকার পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শক (এফওসি) কার্যক্রম সক্রিয় করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি নিয়মিত করতে এখানে কোনো বাধা নেই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী। দুই দেশের মধ্যে ফরেইন অফিস কনস্যুলেশন সক্রিয় করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চান পাকিস্তানের হাইকমিশনার।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি নিয়মিত করতে এখানে কোনো বাধা নেই। ইমরান আহমেদ বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করেন। বিশ্ব অঙ্গনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দায়িত্ব পালনকালে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল গণভবনে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিনডের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান, বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এখানে ব্যবসা করার অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছি। আমরা সেখানে অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ সৃষ্টি করেছি। কাজেই সুইডেন এখানে বিনিয়োগ করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বিগত ১২ বছরে দেশের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেন। যারমধ্যে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি, যেটি দেশের দারিদ্র বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নের বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ব্যবস্থার প্রতি তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তাঁর সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাুবলা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পেয়েছে, যদিও তাঁর সরকার পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে আদেশ বাতিলের কারণে বাংলাদেশে তৈরি পোষাক শিল্প’র উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারি উদ্ভূত দুঃসময়েও কোন ক্রয়াদেশ বাতিল না করার জন্য সুইডেনকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে তাঁর সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফান লোফভেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ এবং সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ তাঁর জনগণের জন্য ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সুইডিশ রাষ্ট্রদূত আলেকজাদ্রা বার্গ ভন লিনডে উল্লেখ করেন, সুইডেন অনেকগুলো সবুজ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়নসাধন করেছে এবং বাংলাদেশকে সেগুলো ব্যবহারেও তিনি অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন, সুইডেন জেন্ডার সহিংসতা এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়। রাষ্ট্রদূত নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে স্বাগত জানান এবং তাঁকে দায়িত্ব পালনকালে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।