প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১৪ এএম আপডেট: ০৪.১২.২০২০ ১:৩২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এ দুটি একে অপরের সমার্থক। জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ বাস্তবতা। এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। তারই বহিঃপ্রকাশ করোনা মোকাবিলা। তিনি বলেন, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এ সফলতার কারণে সেনাপ্রধান হিসেবে আমি গর্বিত। নবগঠিত কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে চারটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এ কথা বলেন। কর্মদক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপ্ত জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষা এবং দেশমাতৃকার যেকোনো প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সব ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। পতাকা উত্তোলন প্যারেডে উপস্থিতির উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলাসহ দেশের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। সেনাপ্রধান বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তিন লাখ ২৪ হাজার ৭০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ২৯ হাজার ৬১ জন কৃষককে মৌসুমি ফসল বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। পোশাক দিয়েছে ২৯ হাজার ২৮৯টি দুস্থ পরিবারকে। এছাড়া সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে সারা দেশে ৭৪ হাজার ২৩৫টি টহল পরিচালনা করেছেন সেনা সদস্যরা।
জেনারেল আজিজ আরও উল্লেখ করেন, করোনার কারণে যখন সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে সমস্যা হচ্ছিল, তখন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প পরিচালনা করে ৫০ হাজার ৮৩১ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। পাশাপাশি ১৪ হাজার ৬৪৭ জন গর্ভবতী মায়েদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ চিকিৎসাসেবা। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টিন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনায় সেনাবাহিনী নির্ভরতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ১০ পদাতিক ডিভিশন রামু সেনানিবাসে উপস্থিত সেনা সদস্যদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পারিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও যোগ্য সেনাসদস্য হিসেবে গড়ে ওঠার নির্দেশ দেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
সেই সঙ্গে পেশাদারিত্বের ঈপ্সিতমান অর্জনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশনাও প্রদান করেন তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, করোনাকালে সেবার মানদ-ে সেনাবাহিনীর চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশের গ-ি পেরিয়ে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও সেবার মানসিকতা এ অর্জনের পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ বলেছেন, জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ বাস্তবতা। আর এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। এটি নিশ্চিত করেণে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পদবির সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ১০ পদাতিক ডিভিশন ও কক্সবাজার অঞ্চলের চারটি ইউনিটের নবযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উন্নয়ন রূপকল্প পোর্সেস গোল ২০৩০-এর বাস্তবায়নের পথে আরেকটি মাইলফলক সংযোজিত হলো। এই ডিভিশন সকল প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকা-ের পাশাপাশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে সফলভাবে নিয়োজিত রয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে সেনাবাহিনী প্রধান উপস্থিত হলে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, কক্সবাজার এরিয়া মেজর জেনারেল আহমদ তাবরেজ শামস চৌধুরী তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্যারেড কমান্ডার মেজর রিফাত উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি সম্মিলিত চৌকষ দল কুজকাওয়াজ প্রদর্শন এবং সেনাবাহিনী প্রধানকে জেনারেল সালাম প্রদান করেন।