রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর সময়োপযোগী পদক্ষেপ
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১৪ এএম আপডেট: ০৪.১২.২০২০ ১:৩২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

দীর্ঘদিন পরে হলেও ৫০০ রোহিঙ্গার একটি দল চট্টগাম থেকে ভাসানচরে যাচ্ছে। এতে কক্সবাজার উদ্বাস্তু শিবিরের ওপর চাপ কমবে। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখানে বসবাস করে আসছে। মিয়ানমারের এই নাগরিকরা, ওই দেশের সরকারের অত্যাচার-জুলুম-হত্যা থেকে বাঁচতে পালিয়ে নাফনদী পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারে ঢুকে পড়ে। পালিয়ে আসা এসব উদ্বাস্তুদের সংখ্যা এগারো লাখেরও অধিক। দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশ সরকার এই উদ্বাস্তুদের আশ্রয়সহ খাওয়া-দাওয়া ভরণপোষণ করে আসছে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমাধানের নানা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।   অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা বলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় গড়িমসি করছে। বারংবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে। এ ব্যাপারে আমেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় অবদান রাখলেও সুষ্ঠু সমাধান এখনও ধরা দেয়নি। এতদিন চীন মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে সেভাবে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। কিন্তু সম্প্রতিকালে চীন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে এবং মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চাপ দিতে ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরগুলোর চাপ কমে আসবে, এ কথা যেমন সত্য এবং তেমনি এ কথাও সত্য যে ভাসানচরে রোহিঙ্গারা আরো উন্নতজীবন পাবে, আয়েশে থাকতে পারবে। অবশ্য কিছু কিছু লোকজন ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠানোতে বিরোধীতা করে বক্তব্য রাখছেন। তাদের এ বিরোধীতার স্পষ্ট কোন কারণ নেই।  বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যে গতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটিয়েছেন এবং ঘটাচ্ছেন, তাতে বড় অন্তরায় রোহিঙ্গারা। মানবিকগুণের অধিকারী বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চাইলেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে নাও দিতে পারতেন। কিন্তু মানবিক কারণে তিনি এদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু এই মানবিকতার সুযোগ নিয়ে মিয়ানমার নানা ছল-চাতুরি করুক এটা কেউ আশা করে না। এ ক্ষেত্রে আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক রয়েছে। ঐতিহ্যগত সম্পর্কের বাইরেও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নিবিড় সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে চীনের ভূমিকাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সুতরাং আমরা আশা করবো, মিয়ানমারে রোিহঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীন জোরাল ভূমিকা  রাখবে। যা আমরা প্রত্যাশা করি।

ভাসানচরে ক্রমান্বয়ে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরই উপকার হবে। এখানে তাদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। অবশ্য ভাসাচরে যেতে রোহিঙ্গারা কোনো আপত্তি তোলেনি। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরতেও অস্বীকার জানায়নি। কিন্তু ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার বারংবার প্রতিশ্রুত ভঙ্গ করছে; যা মোটেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একই সঙ্গে বিষয়টি অমানবিক। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে কোন ভুল করেনি। কিন্তু মিয়ানমারের দায়িত্ব হলো রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।

গত বৃহস্পতিবার দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালে যে সংবাদ ছাপা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের প্রথম দল স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়ে গতকাল নিজেরাই উদ্যোগী  হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রথম ধাপে  যে ৫০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে ভাসানচরে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে তার বাস্তবায়ন হবে। এই প্রথম ধাপ শেষ হলে পরবর্তিতে আরও অনেক পরিবারকে সেখানে স্থানান্তর করা যাবে। ভাসানচরে মোট এক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার মত ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের জন্য বসতঘর স্বাস্থ্য পরিসেবার পাশাপাশি শিক্ষার জন্য স্কুল, বাজার সবই তৈরি করা হয়েছে। যেসব রোহিঙ্গা সেখানে যাবে, তাদের জন্য আগামী তিন মাসের খাদ্য মজুত আছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। চরে হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষেরও সুযোগ থাকবে রোহিঙ্গাদের জন্য। ‘যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল প্রথমভাগে বেশ কয়েকটি বাস রোহিঙ্গা বোঝাই করে ভাসানচরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। 

স্মরণ করা যেতে পারে যে, করোনা মহামারির সময়ে সমুদ্র থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে আগেই ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তবে তাদের কক্সবাজারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের দেখভালের জন্য ২২টি স্থানীয় ও বিদেশি এনজিও আগ্রহ প্রকাশ করায় তাদের ভাসানচরে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য যে, ভাসানচর বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ। কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তরের জন্য ২০১৭ সালে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা পরবর্তীতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকায়।

ভাসানচরে নির্মিত প্রতিটি বাড়িতে ১৬টি করে রোহিঙ্গা পরিবার থাকতে পারবে। প্রতি গুচ্ছতে ১২টি করে বাড়ি রয়েছে। এরকম ১০০টিরও বেশি গুচ্ছের প্রতিটিতে শিশুদের জন্য খেলা ও পুকুরের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া সেখানে বর্ষার পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা, সৌর চালিত পাম্পের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা, মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার, সৌর বিদ্যুৎ, অন্যান্য সরকারি অফিস রয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে সরকারের, যা একটি বড় বোঝা হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে ৩০৬ জন রোহিঙ্গার জন্য প্রতি তিন মাসে খরচ হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। ভাসানচরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়লে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের দেশের অর্থ ব্যয় সম্পর্কে নিশ্চয় বিশ্ব সম্প্রদায় জ্ঞাত আছে।

বিশ্বে এমন নজির পাওয়া যাবে না, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মতান্তরে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ দীর্ঘদিন আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। মিয়ানমার কতটা কা-জ্ঞানহীন যে নিজ দেশের রোহিঙ্গাদের প্রতিনিয়ত হত্যা করছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই হত্যাকা--জ্বালানো পোড়ান থেকে রক্ষা পেতে প্রাণ নিয়ে  লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী  বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এখন তারা বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা উদ্বাস্তু শিবিরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে এবং পরিবেশের জন্য প্রচ- হুমকি সৃষ্টি করেছে। 

পরিশেষে বলতে চাই, ভাসানচরে রোহিঙ্গা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাজ হবে, অতিদ্রুত তারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে তার বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই ফেরত পাঠানো কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, যা হবে বিশ^শান্তির জন্য মঙ্গলজনক।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]